Madhyamik Examination

প্রতিবন্ধকতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষায় আব্দুল

জন্ম থেকেই দু’পা অসাড়। তাই নিজের পায়ে সে চলাফেরা করতে পারে না ছোট থেকেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গোলাপগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:১৬
Share:

প্রত্যয়ী: আব্দুল। নিজস্ব চিত্র

জন্ম থেকেই দু’পা অসাড়। তাই নিজের পায়ে সে চলাফেরা করতে পারে না ছোট থেকেই। যাতায়াতে ভরসা ট্রাইসাইকেল, না হলে হামাগুড়ি। সমস্যা রয়েছে হাতেও। ডান হাতে দু’টি আঙুল রয়েছে আর বাঁ হাতে তিনটি।

Advertisement

যদিও সব সমস্যাকেই বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এগিয়ে চলেছেন বৈষ্ণবনগরের কেবিএস হাইস্কুলের ছাত্র আব্দুল জুবেল। তার পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে কালিয়াচক ৩ ব্লকেরই গোলাপগঞ্জ হাইস্কুলে। বাড়ি থেকে তার বাড়ি থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার, প্রতিদিন ট্রাইসাইকেলে করে ওই দূরত্ব যাওয়া অনেকটাই অসুবিধার। তাই মাধ্যমিক পরীক্ষার দু’দিন আগেই ট্রাইসাইকেলে করে সে চলে আসে গোলাপগঞ্জের নাচটোলায় থাকা মাসি তাসিনারা বিবির বাড়ি। সেখান থেকেই পরীক্ষা দিচ্ছে আবদুল।

যদিও মাসির বাড়ি থেকেও কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। ট্রাইসাইকেল সেই পথ পাড়ি দিয়েই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সে।

Advertisement

আব্দুলের বাড়ি বৈষ্ণবনগরের কৃষ্ণপুর পঞ্চায়েতের সবরিটোলা গ্রামে। বাবা রফিক আলি পেশায় কৃষক। আব্দুলরা তিন ভাই বোন। দাদা আখতার দিনমজুরের কাজ করেন আর বোন আয়েশা অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। মা কেশনান বিবি ছোটবেলাতেই মারা যান। তারপর থেকে আবদুল সবরিটোলা গ্রামেই মামাবাড়িতে থাকছে।

তার এক মামিমা জায়েশা বিবি বলেন, ‘‘জন্ম থেকেই জুবেলের দু’টি পা অসাড়। ডান পায়ে মাত্র একটি আঙুল রয়েছে। বাঁ পায়ে তিনটি আঙুল। ডান পায়ে জুতোও পরতে পারে না ও। দু’পা অসাড় থাকায় হাঁটাচলাও করতে পারে না। ডান হাতের দু’টি আঙুল দিয়ে লিখেই পড়াশোনা করছে ও। যখন ছোট ছিল ওকে কোলে করে স্কুলে নিয়ে যেতাম। কয়েক বছর আগে একটি বেসরকারি সংস্থা ওই ট্রাইসাইকেলটা দেয়। এখন সেই ট্রাইসাইকেলই ওর যাতায়াতের ভরসা।’’

আর জুবেলের মামা ইসমাইল শেখ বলেন, ‘‘শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও আমরা ওকে ছোটবেলাতেই প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করেছিলাম। লেখাপড়ায় ও বরাবর ভাল। পঞ্চম শ্রেণি থেকে ভগবানপুরের কেবিএস হাইস্কুলেই পড়ছে। এই অবস্থাতেই এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে আব্দুল।’’

অন্যান্য পরীক্ষার মতো মঙ্গলবার আব্দুল ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষা দিয়েছে সহপাঠীদের সঙ্গেই। সে বলল, ‘‘ডান হাতের দু’টি আঙুল থাকায় লিখতে প্রথম প্রথম অসুবিধা হত। কিন্তু ছোট থেকেই এ ভাবে লিখতে লিখতে অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। ধীরে লিখলে খুব একটা সমস্যা হয় না। পরীক্ষাও ভালই হচ্ছে।’’

আর ভবিষ্যতে কী হতে চায় সে? আবদুলের কথায়, ‘‘বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চাই। কিন্তু বাড়ির বর্তমান আর্থিক অবস্থায় সেটা সম্ভব নয়। তাই কলা বিভাগেই পড়ব। আমি বড় হয়ে শিক্ষক হতে চাই। তার জন্য যা দরকার হয় করব।’’

আবদুলের এই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছেন মাধ্যমিক পরীক্ষার মালদহ জেলার আহ্বায়ক বিপ্লব গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘হাঁটাচলায় সমস্যা তো রয়েইছে। তার উপর, যে হাত দিয়ে ও লেখে, অসুবিধা রয়েছে সেই ডান হাতেও। কিন্তু তাও ও ও আর পাঁচ জন ছাত্র-ছাত্রীর মতোই সবার সঙ্গে পরীক্ষা দিচ্ছে। সত্যিই, কোনও কিছুই যে অসম্ভব নয়, সেটা ওকে দেখেই বোঝা যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন