এমন ভাবে তৃণমূলের কার্যালয় থেকেই ডি়জিটাল রেশন কার্ড বিলির অভিযোগ উঠেছিল। —ফাইল চিত্র।
খাদ্য সুরক্ষা আইনে একাংশ গরিব বাসিন্দার নাম তালিকায় ওঠেনি বলে অভিযোগ উঠছিলই। তার উপরে স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর নাম গরিবের তালিকায় ওঠে যাওয়ায় তৃণমূল পরিচালিত দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট পুরসভার কাউন্সিলরেরা কার্যত চরম বিপাকে পড়েছেন। পুরসভা সূত্রে খবর, বাসিন্দাদের নানা প্রশ্নের সামনে পড়ে অস্বস্তি এড়াতে দলের কাউন্সিলরদের একাংশই ডিজিটাল কার্ড বিলির দায়িত্ব থেকে রেহাই পেতে চাইছেন।
খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রায়োরিটি হাউস হোল্ড (পিএইচএইচ) এবং প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড উইথ সুগার (এসপিএইচএইচ)—দুধরনের ডিজিটাল রেশন কার্ড বালুরঘাট শহরে বিলির কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। খুব শীঘ্রই অন্ত্যোদয় ডিজিটাল কার্ড পুরসভার মাধ্যমে বিলি শুরু হবে। কিন্তু ওই দুধরনের কার্ড বিলি করতে গিয়ে বিস্তর ত্রুটির সম্মুখীন হয়ে কাউন্সিলারদের আশঙ্কা অন্ত্যোদয় কার্ডেও এমন ভুলভ্রান্তি হলে ক্ষোভের মাত্রা আরও বাড়বে। জেলাশাসক তাপস চৌধুরী অবশ্য জানিয়েছেন, প্রথম অবস্থায় ভুলভ্রান্তিগুলি পরে সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে ওই কাজ চলবে।
তবে জেলাশাসকের আশ্বাসে অবশ্য বাসিন্দাদের ক্ষোভ ঠেকানো যাচ্ছে না। তৃণমূল সূত্রে খবর, কার্ড বিলি করতে গিয়ে এলাকার বহু বিপিএলভুক্ত বাসিন্দার নাম বাদ পড়ায় তাঁদের তীব্র কটাক্ষ ও ক্ষোভ শুনতে হচ্ছে বলে তৃণমূলের একাধিক কাউন্সিলরকে। তবে প্রথমে অবশ্য অবস্থা ছিল উল্টো। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রকল্পের সাফল্যের কৃতিত্ব নিতে শুরুতে বালুরঘাটে তৃণমূলের কাউন্সিলরেরা ওয়ার্ডের দলীয় কার্যালয় থেকেই বাসিন্দাদের মধ্যে ডিজিটাল কার্ড বিলি করেছেন। সরকারি প্রকল্পের কার্ড দলীয় কার্যালয় বিলি করা নিয়ে অভিযোগ করা হলেও শাসক দলের কাউন্সিলরেরা তা আমল দেননি বলে অভিযোগ। এখন অবশ্য শাসকদলের কাউন্সিলরেররাই কার্ড বিলি করতে চাইছেন না। তৃণমূল কাউন্সিলর শঙ্কর দত্ত, সজয় সাহা, দেবজিত রুদ্রদের কথায়, ‘‘প্রকল্পের তালিকায় নাম না দেখে গরিব বাসিন্দারা ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। আমরাই(বর্তমান তৃণমূল বোর্ড)নাকি কারসাজি করে ওই সমস্ত গরিব বাসিন্দার নাম বাদ দিয়েছি! আর মন্ত্রী এবং চেয়ারপার্সনের নাম তুলেছি। বিরোধীরাও কটাক্ষ শুরু করেছে। কার্ড বিলি করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত আমাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে।’’ তাঁদের দাবি, এই ভুলভ্রান্তির মূলে রয়েছে বাসিন্দাদের অর্থনৈতিক সমীক্ষা। যা বাম আমলে শহরে হয়েছে বলে যাঁরা ওই সমীক্ষার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁরা দায় এড়াতে পারেন না বলে তাঁদের দাবি। বিষয়টি নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন শাসক দলের কাউন্সিলরেরা। চেয়ারপার্সন চয়নিকা লাহা বলেন, ‘‘আমার নামে আসা কার্ড তালিকা থেকে বাদ দিতে বলেছি। তবে কী ভাবে এমন ভুলভ্রান্তি হল তা খতিয়ে দেখতে হবে।’’
ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসককে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার আগে ২০১১সালে জেলা গ্রামোন্নয়ন (ডিআরডিসি) সেল থেকে বাসিন্দাদের আর্থ-সামাজিক সমীক্ষা হয়েছিল। বালুরঘাট শহরে পুরসভাকে নিয়েই ওই সমীক্ষা হয়। জেলাশাসক জানান, সমীক্ষার সময় তথ্য নথিভুক্ত করার সময় ভুল হয় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে। বিষটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ দিন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শঙ্কর দত্ত অভিযোগ করে বলেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডে সিপিএমের তাবড় শিক্ষক নেতা থেকে বড় ব্যবসায়ীর নাম গরিবের তালিকায় নথিভুক্ত হয়েছে। অথচ এলাকার একাংশ মানুষ তালিকায় মন্ত্রীর নাম ওঠাকে দৃষ্টান্ত করে আমাদের দায়ী করছেন।’’ ডিজিটাল কার্ড বিলি করতে গিয়ে চরম অস্বস্তির মধ্যে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের সদস্য দেবজিৎ রুদ্রও। এই পরিস্থিতিতে পুরসভায় ক্ষমতাসীন তৃণমূলের কাউন্সিলরেরা পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সভায় আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।