পেশায় ওঁরা কেউ স্কুল শিক্ষক, কেউ বা শহরের প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী। রয়েছেন, পরিচিত ব্যবসায়ী এমনকী স্থানীয় রেশন ডিলার থেকে ডিস্ট্রিবিউটরও।
দক্ষিণ দিনাজপুরে খাদ্য সুরক্ষা আইনে উপভোক্তার প্রলম্বিত তালিকায়, ৩ টাকা কেজি-র চাল এবং ২ টাকা কেজি দরে গমের প্রাপক হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে তাঁদের নাম। যা খাদ্য সুরক্ষা আইনের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
খাদ্য সুরক্ষা আইনের পাইলট প্রোজেক্ট হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাকে। গত পয়লা এপ্রিল থেকে সেখানে শুরু হয়েছে ওই আইনের প্রাথমিক প্রয়োগও। রেশনে অন্ত্যোদয়, এবং অন্নপূর্ণা যোজনার গ্রাহকের পাশপাশি উপভোক্তাদের ওই তালিকায় থাকার কথা, ‘প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড’ বলে চিহিৃত বেশ কিছু নিম্নবিক্ত মানুষের নামও। মজার ব্যাপার, সেই ‘প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড’-এর তালিকায় ঠাঁই হয়েছে সমাজে প্রতিষ্ঠিত ওই উচ্চবিত্তদের।
জেলার বিভিন্ন ব্লকে ইতিমধ্যেই ডিজিটাল রেশন কার্ড বিলি শুরু হয়েছে। জেলা সদর, বালুরঘাট পুর এলাকাতেও এপ্রিলের গোড়া থেকেই নমুনা হিসাবে কয়েকজন গ্রাহকের মধ্যে ওই কার্ড বিলি করা হয়েছে বলে জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। আর তা করতে গিয়েই তালিকায় ওই ভ্রান্তি ধরা পড়েছে।
তবে একে নিছকই ভ্রান্তি বলেই মনে করছেন জেলাশাসক তাপস চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম অবস্থায় কিছু ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এর বেশি কিছু নয়। পরে সেগুলি সংশোধনের করে নেওয়ার সুযোগও রয়েছে।’’
দক্ষিণ দিনাজপুরে জনসংখ্যা ১৬ লক্ষেরও বেশি। ২০০১ সালের জনগণনা অনুসারে জেলার ১০ লক্ষ ৬৬ হাজার ৬২৯ জন খাদ্য সুরক্ষা আইনের উপভোক্তা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। জেলা খাদ্য নিয়ামক অমরেন্দ্র রায় জানান, নিম্ন আয়ের মানুষজনের সঙ্গে ওই তালিকায় প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড হিসাবে বেশ কিছু সচ্ছল জেলাবাসীর নামও প্রকল্পের আওতায় চলে এসেছে। তিনি বলেন, ‘‘ওই তালিকা অবশ্য সংশোধন ও সংযোজনের সুযোগ রয়েছে।’’
বৃহস্পতিবার কুমারগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক মাহমুদা বেগম উচ্চবিত্ত উপভোক্তাদের অন্তভুক্তির প্রশ্নটি সামনে এনে বলেন, ‘‘এঁরাও যদি উপভোক্তার তালিকায় পড়েন তাহলে খাদ্য সুরক্ষা আইনে অর্থ কী দাঁড়াল?’’
বিষয়টি জেলা প্রশাসনরে সামনে তুলে ধরে তাঁর অভিযোগ, ‘‘কে কবে ওই অর্থনৈতিক সমীক্ষা করলেন। আমরা কিছুই জানলাম না। এখন দেখছি, যাদের জন্য ওই খাদ্য সুরক্ষা আইন, সেই দরিদ্র মানুষের একাংশ ওই তালিকার বাইরে।’’ বেঙ্গল ফেয়ার প্রাইস ডিলার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সভাপতি মিহিরকুমার দাসের দাবি, ‘‘বিপিএল তালিকা নিয়ে এখনও মানুষের মধ্যে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তা মাথায় রেখেই অর্থনৈতিক সমীক্ষা করা হলে শুরুতে এই সমস্যা এড়ানো যেত।’’
বালুরঘাট শহরের চকভবানী এলাকার রেশন ডিস্ট্রিবিউটার শক্তিপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর পরিবারের নাম রয়েছে ওই তালিকায়। শক্তিবাবুর ছেলে পেশায় আইনজীবী, সুদীপবাবু বলেন, ‘‘আমরা জানিনা কী করে আমাদের নাম ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আমরা কোনও দিনও রেশন তুলতেই যাই না।’’ অস্বস্তিতে পড়েছেন রেশন ডিলার অনিল বড়ুয়াও। তাঁর পরিবারেরও নাম রয়েছে তালিকায়। অবসরপ্রাপ্ত জেলা পঞ্চায়েত আধিকারিক দেবব্রত বাগচিও তালিকাভুক্ত। তিনি বলেন, ‘‘আমরা জানিনা কীভাবে ওই তালিকায় আমাদের নাম উঠল। কার্ড পেলে তা ফেরত দিয়ে দেব।’’