নামেই: ডিজিটাল গ্রামের সেই পোস্টার ঝুলছে ব্যাঙ্কে। নিজস্ব চিত্র
নামেই ডিজিটাল গ্রাম৷ কিন্তু বাস্তবে বেশিরভাগ লেনদেনই হয় নগদে৷
গত নভেম্বরে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের কিছু দিন পরে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়ার’ লক্ষ্যে এগোনোর কথা ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই হিসেবে এ বছর মার্চ মাসে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের তরফে রাজগঞ্জের বিন্নাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের আদর্শপল্লি গ্রামকে ‘ডিজিটাল ভিলেজ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এলাকার মানুষকে নগদশূন্য বা ক্যাশলেশ লেনদেনের স্বপ্নও দেখান ব্যাঙ্ককর্তারা। কিন্তু আট মাস পরে দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লেনদেন সেই নগদেই পড়ে আছে। পরিবর্তন বলতে একটাই— এলাকায় তৈরি হওয়া একটি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রামের প্রচুর মানুষকে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত করতে পেরেছেন ব্যাঙ্ক কর্তারা৷
জলপাইগুড়ি শহর থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরের এই গ্রামটি ভৌগোলিক ভাবে শিলিগুড়ির প্রতিবেশী। কিন্তু এখানকার বাসিন্দারা কখনওই সে ভাবে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না৷ গ্রামটির সবচেয়ে কাছের ব্যাঙ্ক শাখাটি গ্রাম থেকে ১১ কিমি দূরের আমবাড়িতে। আর এটিএম ৯ কিমি দূরে, আশিঘরে।
পয়লা মার্চ থেকে এই আদর্শপল্লিকে ডিজিটাল গ্রামে বদলে দিতে কয়েক মাস এলাকায় প্রচার চালান ব্যাঙ্ককর্মীরা। মোট সাড়ে তিন হাজার অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এটিএম কার্ড তুলে দেওয়া হয় হাজারখানেক লোকের হাতে। ১১টি দোকানে পিওএস মেশিন পৌঁছে দেওয়া হয়।
এর পরেও কেন গ্রামটির ‘ডিজিটাল ভিলেজ’ হওয়া হল না? খোদ ব্যাঙ্কের গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র সূত্রের খবর, যে হাজারখানেক গ্রাহক এটিএম কার্ড পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে মেরেকেটে দুশো জন তা ব্যবহার করেন৷ স্থানীয় বাসিন্দা মমতা রায় বলেন, ‘‘কার্ড তো পেয়েছি। কিন্তু ‘পিন’ আনতে সেই শিলিগুড়ি সেবক রোডে ব্যাঙ্কের শাখায় যেতে হবে৷ সেটা এখনও আনা হয়নি।’’ মূলত এই কারণেই অনেকে গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র থেকে নিজের এটিএম কার্ডও নেননি। দ্বিতীয় কারণ, কার্ডের ব্যবহার না জানা। এলাকার আর এক বাসিন্দা গোবিন্দ বর্মন অকপটেই সে কথা জানান। তাই তাঁর কার্ড বাড়িতেই পড়ে আছে।
সমস্যা পিওএস মেশিন নিয়েও। কয়েক জন ব্যবসায়ীর অভিযোগ, প্রথমে এর জন্য চার্জ কাটা হচ্ছিল। স্থানীয় ব্যবসায়ী কল্যাণ রায়ের কথায়, ‘‘৪-৫ মাস আগে আমার পিওএস মেশিনটি খারাপ হয়ে যায়। খবর পাঠানো সত্ত্বেও তা সারাতে আসেনি কেউ। তাই মেশিনটা ফিরিয়েই দেব।’’ এলাকার আরেক ব্যবসায়ী দূর্যোধন বর্মন বলেন, ‘‘দেখা যায়, ৩-৪ মাসে কোনও এক জন গ্রাহক একবার কার্ডে জিনিস কিনলেন৷ বাকি সময় নগদেই বেচাকেনা চলে৷’’
ব্যাঙ্কের শিলিগুড়ির জোনাল ম্যানেজার অর্জুনলাল যাদব সব শুনে বলেন, ‘‘এমনটা কখনওই হওয়ার কথা নয়৷ আমাদের লক্ষ্যই হল, আদর্শপল্লিকে ডিজিটাল ভিলেজ বানানো৷ কেন এমন হল, তা অবশ্যই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷’’
তবে সে ব্যবস্থা কবে হবে, তা কেউ জানে না।