বৃহস্পতিবার মাঝরাতে ভয়াবহ আগুন লাগে জলপাইগুড়ির দিনবাজারে। আতসবাজির দোকানে আগুন ছড়ানোর পর আকাশে উঠে বাজি ফাটতে শুরু করে।
ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গেল জলপাইগুড়ি শহরের দিনবাজারের প্রায় শখানেক দোকান। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ বাজারের মুড়িপট্টিতে প্রথম আগুন লাগে। পাশেই ছিল বাজির দোকান এবং গুদাম। মুড়িপট্টি থেকে আগুন সে সব দোকানে লাগতেই তা ছড়াতে থাকে আশপাশের অন্য দোকানেও। মুহূর্মুহূ বাজির আওয়াজে আতঙ্কিত বাসিন্দারা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে তাঁরা কাছে ঘেঁষতে পারেননি। দোকান থেকে আকাশে উঠে গিয়েও অসংখ্য আতসবাজি ফাটতে থাকে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের সাতটি ইঞ্জিন। পুলিশ জানিয়েছে, আগুনে হতাহতের কোনও খবর মেলেনি। ব্যবসায়ীরা জানান, রাতে বিকট বাজি ফাটার শব্দে বেরিয়ে এসে তাঁরা দেখেন আগুন গোটা বাজার গ্রাস করতে চলেছে। ১৮৯৬ সালে স্থাপিত রাজা ফণীন্দ্রদেবে রায়কতের তৈরি টিন শেড পুড়ে ছাই গিয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, লেলিহান শিখায় আকাশ লাল। সর্বস্ব হারিয়ে ব্যবসায়ীরা হাহাকার করছেন। কেউ বা মালপত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কাপড় ব্যবসায়ী বাসুদেব মজুমদার হাহাকার করে বলেন, ‘‘সব পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে।’’ মুড়িপট্টি থেকে আগুন ছড়ায় কাপড় পট্টিতে। যে সব দোকানে আগুন লাগেনি সেখান থেকে জিনিসপত্র সরানোর নাম করে দুষ্কৃতীরা লুঠপাট শুরু করে বলেও অভিযোগ। খবর পেয়ে র্যাফ এলাকায় যায়। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেও দমকল তা আয়ত্তে আনতে পারেনি। বরং যত রাত বেড়েছে তা আরও ছড়িয়েছে। বাজার এলাকাতেই একটি স্পিরিটের গুদাম থাকায় ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা আরও বাড়ে। পুলিশ জানায়, ওই গুদামের মালিক পলাতক। তার গুদামে হানা দিয়ে দাহ্য সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে।
দিনবাজারের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। ঘিঞ্জি বাজারে দমকলের যাওয়ার পথ নেই বললেই চলে। এ দিনের ঘটনা সেই ক্ষোভকে আরও উস্কে দিয়েছে। বাজারের ভিতরে আগুন জ্বলতে থাকলেও দমকল সেখানে দীর্ঘক্ষণ ঢুকতে পারেনি। রাত একটা নাগাদ কয়েকটি দমকলের জল শেষ হয়ে গেলেও, বিকল্প ব্যবস্থা করা যায়নি বলে ক্ষোভ জানান বাসিন্দারা।
বাজারের প্রায় ৫০০ মিটার এলাকা জুড়ে আগুন ছড়ায়। রাতে ঘটনাস্থলে যান জলপাইগুড়ির জনপ্রতিনিধিরা। যান পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান মোহন বসুও। পুলিশের ডিএসপি প্রভাত চক্রবর্তী জানান, শিলিগুড়ির দমকলেও খবর দেওয়া হয়েছে। জলপাইগুড়ির মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সাধন বসু জানান, ক্ষতির পরিমাণ পাঁচ থেকে দশ কোটি টাকা।
ছবি: সন্দীপ পাল।