দু’দিন ঘরবন্দি থেকে গাড়িতে বাংলো ছাড়লেন সেই জেলাশাসক

টানা প্রায় দু’দিন নিজের সরকারি বাংলোয় ঘরবন্দি থাকার পর অবশেষে সেখান থেকে বের হলেন জেলাশাসক নিখিল নির্মল৷ জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, মঙ্গলবার বিকেল তিনটে চল্লিশ নাগাদ স্টিল রঙের একটি গাড়িতে স্ত্রী নন্দিনী কৃষ্ণনের সঙ্গে তিনি বাংলো থেকে বেরিয়ে যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:৪৪
Share:

সেই ভিডিয়োর থেকে নেওয়া ছবি।

টানা প্রায় দু’দিন নিজের সরকারি বাংলোয় ঘরবন্দি থাকার পর অবশেষে সেখান থেকে বের হলেন জেলাশাসক নিখিল নির্মল৷ জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, মঙ্গলবার বিকেল তিনটে চল্লিশ নাগাদ স্টিল রঙের একটি গাড়িতে স্ত্রী নন্দিনী কৃষ্ণনের সঙ্গে তিনি বাংলো থেকে বেরিয়ে যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন৷ গাড়িতে দু’জন চালক ছিলেন বলেও দাবি তাঁদের৷ তবে গাড়িতে চেপে ‘সিংহম’ বলে পরিচিত জেলাশাসক, তাঁর স্ত্রী কোথায় গেলেন, সে ব্যাপারে অবশ্য কেউ কিছু জানাতে পারেননি৷

Advertisement

গত শনিবার রাতে ফেসবুকে জেলাশাসকের স্ত্রী নন্দিনীদেবীর সঙ্গে ফালাকাটার বাসিন্দা বিনোদকুমার সরকারের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়৷ সূত্রের খবর, এর পর জেলাশাসকের ফোন মারফত বিষয়টি জানতে পারেন জেলার পুলিশ কর্তারা৷ পরদিন, অর্থাৎ রবিবার সকালেই ফালাকাটা থানায় বিনোদকে ডেকে নিয়ে আসে পুলিশ৷ ততক্ষণে সেখানে পৌঁছে যান সস্ত্রীক জেলাশাসক৷ দুপুরের পর থেকে একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হতে শুরু করে৷ সেখানে দেখা যায় জেলাশাসক ও তাঁর স্ত্রী বিনোদকে বেধড়ক মারধর করছেন৷ ভিডিয়োটি থেকে হুমকিও ভেসে আসে৷ যদিও আনন্দবাজার পত্রিকা সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি৷

এ দিকে ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই হইচই শুরু হয়ে যায় রাজ্য প্রশাসনে৷ রবিবার সন্ধ্যাতেই জেলাশাসককে বিষয়টি নিয়ে চুপ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়৷ আর তার পর থেকেই প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়, জেলাশাসককে নবান্ন ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে৷ একই সঙ্গে রটে যায়, তাঁকে যে কোনও সময়ে গ্রেফতারও করা হতে পারে।

Advertisement

প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, রবিবার ভিডিয়োটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই স্ত্রীকে নিয়ে সরকারি বাংলোয় নিজেকে কার্যত আটকে ফেলেন নিখিল৷ সোমবার সকালে অতিরিক্ত জেলাশাসক চিরঞ্জীব ঘোষকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেও বাংলো থেকে বের হননি তিনি৷ বরং দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার পর প্রায় দিনভরই ফোন বন্ধ রাখেন তিনি৷

স্থানীয় সূত্রের খবর, মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা নাগাদ জেলাশাসকের বাংলোর পিছন দিকে থাকা দু’টি গাড়ি বাংলোর সামনের দিকে নিয়ে আসা হয়৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তার পর থেকে মাঝেমধ্যেই জেলাশাসকের বাংলোর ভিতরে থাকা কর্মীরা দুই চালকের সঙ্গে কিছু কথা বলছিলেন৷

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিকেল তিনটা চল্লিশ নাগাদ স্টিল রঙের একটি এসইউভি-তে চেপে জেলাশাসক ও তাঁর স্ত্রী বাংলো থেকে বেরিয়ে আদালতের সামনের রাস্তা দিয়ে চলে যান বলে জানান তাঁরা৷ প্রত্যক্ষদর্শীদের এমনও দাবি, গাড়িতে জেলাশাসক ও তাঁর স্ত্রী ছাড়াও দুই চালক ছিলেন৷ তবে তাঁরা আচমকা বেরিয়ে কোথায় গেলেন, তা জানা যায়নি৷ ফোন বন্ধ থাকায় বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসক বা তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগও করা যায়নি৷

এর মধ্যে সোমবারই জেলাশাসক নিখিল নির্মল ও ফালাকাটা থানার আইসি সৌম্যজিৎ রায়ের বিরুদ্ধে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ দায়ের করে এপিডিআর। মঙ্গলবার তাঁদের তাদের তরফে জানানো হয়, তাদের অভিযোগ নিয়ে কাজ শুরু করেছে কমিশন।

আলিপুরদুয়ার তৃণমূলের একটি অংশ দাবি করেছে, এই ঘটনার আগে পর্যন্ত নিখিল নবান্নের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন জেলায়। কিন্তু এই ঘটনার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে গোটা আলিপুরদুয়ার জেলায়। সোমবার ফালাকাটায় আসেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রের দাবি, স্থানীয় নেতাদের অনেকেই তাঁকে বিষয়টি জানান। ফালাকাটা অঞ্চলে এমনিতেই দলের নড়বড়ে অবস্থা। এই ঘটনায় যদি দল বা প্রশাসন নিখিলের পাশে দাঁড়ায়, তা হলে বিপদ বাড়বে বলেই জানান স্থানীয় নেতারা। দলীয় সূত্রের দাবি, এর পরেই অভিষেক কলকাতায় ফোন করে বিষয়টি জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন