অটোয় পড়ে গয়না, ফেরত দিলেন চালক

কোনওদিন একশো টাকা রোজগার। কোনওদিন খুব জোর দেড়শো। কিন্তু যাত্রীর ফেলে যাওয়া ব্যাগ খুলেও দেখেন না, ভিতরে কী রয়েছে। রকি সরকার নামে বছর আঠাশের এই যুবকের জন্যই খুশি ফিরে এসেছে পুরতান মালদহের নারায়ণপুরের মণ্ডল বাড়িতে। অটোতে সোনার গয়না ভরা ব্যাগ ফেলে আসার পরে তাঁরা ভাবতেও পারেননি, সেই ব্যাগ আবার ফেরত পাবেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৫ ০২:৫২
Share:

সোনার গয়না ফিরিয়ে দিচ্ছেন রকি (কালো টি-শার্ট)। রবিবার মনোজ মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

কোনওদিন একশো টাকা রোজগার। কোনওদিন খুব জোর দেড়শো। কিন্তু যাত্রীর ফেলে যাওয়া ব্যাগ খুলেও দেখেন না, ভিতরে কী রয়েছে।

Advertisement

রকি সরকার নামে বছর আঠাশের এই যুবকের জন্যই খুশি ফিরে এসেছে পুরতান মালদহের নারায়ণপুরের মণ্ডল বাড়িতে। অটোতে সোনার গয়না ভরা ব্যাগ ফেলে আসার পরে তাঁরা ভাবতেও পারেননি, সেই ব্যাগ আবার ফেরত পাবেন। রবিবার সকালে বাড়িতে হাজির দুই অচেনা যুবক। তাঁরা বলেন, ‘আপনাদের জিনিস পাওয়া গিয়েছে। যোগাযোগ করুন ইউনিয়নে।’ এরপরেই ধরে প্রাণ ফিরে আসে বীথিকা মণ্ডলের পরিবারে।

শনিবার দুপুরে ইংরেজবাজারের জহুরাতলা মন্দিরে সপরিবারে পুজো দিতে যান নারায়ণপুরের বাসিন্দা বীথিকা। সঙ্গে ছিলেন স্বামী দিলীপ, দুই ছেলে এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা। বৈশাখ মাসের শেষ শনিবার থাকায় এইদিন জহুরাতলা মন্দিরে পুজো দেওয়ার জন্য ভিড় উপচে পড়েছিল। ভিড় দেখে বীথিকা তাঁর সোনার মালা, কানের দুল, হাতের পলা পার্সের মধ্যে রেখে পুজো দেন। বিকেল নাগাদ বাড়ি রওনা দেন তাঁরা। ইংরেজবাজারের রথবাড়িতে গিয়ে নারায়ণপুর যাওয়ার জন্য একটি অটোতে ওঠেন। সেই সময় সঙ্গে নিয়ে যাওয়া কাপড়ের ব্যাগটি অটোর আসনের পিছনে রাখেন বীথিকা। ওই ব্যাগের মধ্যে ছিল তাঁর সোনার অলঙ্কারের ব্যাগটিও। নারায়ণপুর পৌঁছে অটোর চালককে ভাড়া মিটিয়ে বাড়ি চলে যান তাঁরা। বাড়ি পৌঁছনোর ঘন্টা খানেক বাদে মনে পড়ে মোবাইল ফোনের কথা। বীথিকার মনে পড়ে মোবাইল ফোনটি তাঁর পার্সে রয়েছে। সেই পার্সেই রয়েছে সোনার গহনাগুলিও। শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। তারপরই তাঁদের মনে পড়ে অটোতেই ফেলে গিয়েছেন ব্যাগটি।

Advertisement

ওইদিন সন্ধ্যেবেলাতেই দিলীপবাবু ও বীথিকা ব্যাগের সন্ধানে হাজির হন ইংরেজবাজারের রথবাড়ির অটো স্ট্যান্ড ইউনিয়নে। সেখানে সব ঘটনা জানান ওই তাঁরা। ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেন, চালকেরা পেলে ঠিকই ফেরত পেয়ে যাবেন। তবে সে আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন এই দম্পতি।

এদিন সকালে রকি ইউনিয়ন রুমে গিয়ে ওই ব্যাগটি জমা দেন। এরপরই ওই দম্পতির দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে ব্যাগ পাওয়ার খবরটি জানান ইউনিয়নের অন্য দুই অটো চালক। বেলা ১১টা নাগাদ ইউনিয়ন রুমে হাজির হন দিলীপবাবু ও তাঁর স্ত্রী। তাঁরা জানান, ব্যাগটিতে এক ভরির সোনার চেন, পাঁচ আনার কানের দুল এবং পাঁচ আনার সোনার পলা ছিল। এর সঙ্গে তিনটি পাঁচশো টাকার নোট ও একটি মোবাইল ফোনও ছিল। এদিন উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে ইউনিয়ন রুম থেকে অলঙ্কারগুলি নিয়ে যান তাঁরা। একই সঙ্গে অটো চালকের সততাকে ধন্যবাদ জানান এই দম্পতি। বীথিকা বলেন, ‘‘আমার স্বামীর বাড়িতেই একটি কাঠের দোকান রয়েছে। খুব কষ্ট করে এই অলঙ্কারগুলি বানিয়েছিলাম। মেলাতে ভিড় দেখে হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে ব্যাগে রেখেছিলাম। জিনিসগুলি ফিরে পাব, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। ওই অটো চালকের কাছে আমরা চির কৃতজ্ঞ থাকব।’’ দিলীপবাবু বলেন, ‘অটো চালকদের সম্পর্কে অনেক সময়েই নানা বাজে কথা শুনি। কিন্তু আমাদের সম্পূর্ণ অন্যরকম অভিজ্ঞতা হল।’’

রকি বলেন, ‘‘রাতে বাড়িতে গিয়ে ডিকি খুলতেই দেখি একটি ব্যাগ রয়েছে। ব্যাগটি আমি খুলেও দেখেনি। কার ছিল মনে করতে পারছিলাম না। পরের দিন সকালে ইউনিয়নে ফেরত দিতে গেলে জানতে পারি এক মহিলা ও তাঁর স্বামী খোঁজ করতে এসেছিলেন। ব্যাগটি তাঁদের দিতে পেরে আমি খুবই খুশি।’’

রকি দু’বছর ধরে অটো চালাচ্ছেন। আগে পুরাতন মালদহের একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন। অটোটি নিজের নয়। কোনও দিন একশো টাকা রোজগার। কোনওদিন দেড়শো। বাবা বছর পাঁচেক আগে মারা গিয়েছেন। তারপর থেকে সংসার তাঁর কাঁধেই। বাড়িতে রয়েছেন মা, স্ত্রী ও ভাই। তাঁর ছেলের বয়স আট মাস। ওই অটো ইউনিয়নের সম্পাদক সিটু শেখ বলেন, ‘‘গাড়ির চালকেরা কিছু পেলে আমাদের কাছে জমা দিয়ে দেন। রকির জন্য আমরা গর্বিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন