ত্রাণ শিবিরে ইদ পালন

বিহারে ধবল ও চাঁচলে মহানন্দা বাঁধ ভেঙে মহকুমার ছটি ব্লকের ৪৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা প্লাবিত হয়। বাসিন্দাদের অনেকেরই আশ্রয় এখনও বাঁধ ও জাতীয় সড়কে। অনেকে ঘরে ফিরলেও নিঃস্ব।

Advertisement

বাপি মজুমদার

চাঁচল শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১০:৫০
Share:

চাঁচলের চন্দ্রপাড়ায় ইদের খুশি। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

গত বছরও টাকা জমিয়ে ইদের আগে আস্ত একটা খাসি কিনেছিলেন দিনমজুর বানিজউদ্দিন আহমেদ। কিন্তু এ বার সর্বস্ব খুইয়ে তিন ছেলে-মেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে গত তিন সপ্তাহ ধরে বাঁধের উপরে। সেখান থেকেই শনিবার উত্সবের দিন সাত সকালে স্নান সেরে নতুন পোশাক পরে আড়াই কিলোমিটার দূরে ঈদগাহ মাঠে গিয়ে নমাজ পড়ে এসেছেন।

Advertisement

উত্সবের দিন সন্তানরা কী খাবে তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তার শেষ ছিল না। কিন্তু বাড়ি ফিরেই দেখলেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সেমুই, চিনি ও দুই কিলোগ্রাম করে চাল নিয়ে হাজির। পরিমাণে যাই হোক, খানিক বাদে এসে পৌঁছালো মাংস। মুহূর্তে ছবিটা বদলে গেল। সব হারানোর যন্ত্রণার মধ্যেও খুশিতে ভরে উঠল বানিজউদ্দিনের সংসার। এ ছবি একা বানিজউদ্দিনের পরিবারেই নয়, চাঁচল মহকুমার বন্যা কবলিত ছ’টি ব্লকেই বানভাসিদের হাজার কষ্ট এ দিন ঢাকা পড়ে গিয়েছে উত্সবের আনন্দে।

বিহারে ধবল ও চাঁচলে মহানন্দা বাঁধ ভেঙে মহকুমার ছটি ব্লকের ৪৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা প্লাবিত হয়। বাসিন্দাদের অনেকেরই আশ্রয় এখনও বাঁধ ও জাতীয় সড়কে। অনেকে ঘরে ফিরলেও নিঃস্ব। উত্সবের দিনে তাঁদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বৃষ্টি। দুপুরের পর রোদ উঠলেও শনিবার সকালে নমাজের পর থেকেই চাঁচল মহকুমা জুড়েই বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি শুরু হয়। তার মধ্যেই উত্সবের আনন্দে মেতেছেন তাঁরা।

Advertisement

প্রশাসনের তরফে বহু এলাকায় এখনও খাবারতো দুরের কথা, ত্রিপলও দেওয়া হয়নি। বেসরকারি উদ্যোগে দেওয়া খাবার না পেলে তাঁদের অনাহারে থাকতে হত বলে অভিযোগ অনেকেরই। উত্সবের দিনেও সেই সাহায্যই দুর্গতদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।

চাঁচলের চন্দ্রপাড়া এলাকায় যেমন দুর্গতদের সিমুই, চিনি,ও দু’ কিলোগ্রাম করে চাল দিয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। জালালপুরে এক তৃণমূল নেতার উদ্যোগে দুর্গতদের হাতে মিষ্টি ও মাংস তুলে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার আরএসপি নেতা আব্দুর রহিম বক্সি ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে নতুন জামাকাপড় দেওয়া হয়। হরিশ্চন্দ্রপুরের নানারাহি এলাকায় চারপাশে এখনও জল জমে থাকায় ত্রাণ নিয়ে যেতে পারেননি কেউ। সেখানে বিপন্ন নন, এমন গ্রামবাসীরাই দুর্গতদের খাবার পৌঁছে দিয়েছেন।

রতুয়ার গোবিন্দপুরের আনেসুর রহমান, হরিরামপুরের আকবর আলি, চাঁচলের খানপুরের আলাউদ্দিন আহমেদ, হরিশ্চন্দ্রপুরের সাহাপুরের আব্দুল খালেকরা বলেন, ‘‘কবে ঘরে ফিরব জানি না। কিন্তু বছরকার উত্সব। তাই কষ্টের মধ্যেই উত্সবের আনন্দ ভাগ রে নিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন