প্রচারে প্রার্থীর ছবিতে মত সিপিএমের

লোকসভা থেকে পঞ্চায়েত ভোটে বিভিন্ন ডানপন্থী দলের প্রার্থীদের ছবি-সহ প্রচারপত্র, হোর্ডিং বাসিন্দাদের কাছে নতুন কোনও বিষয় নয়। বিভিন্ন উন্নয়নের কাজের ফিরিস্তি বা প্রতিশ্রুতির সঙ্গে দলের শীর্ষ নেতাদের ছবির পাশে প্রার্থীর বড়মাপের ছবি দেওয়া হোর্ডিং, ফ্লেক্স ভোটের বাজারে ছেয়েই থাকে।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৫ ০২:০৭
Share:

লোকসভা থেকে পঞ্চায়েত ভোটে বিভিন্ন ডানপন্থী দলের প্রার্থীদের ছবি-সহ প্রচারপত্র, হোর্ডিং বাসিন্দাদের কাছে নতুন কোনও বিষয় নয়। বিভিন্ন উন্নয়নের কাজের ফিরিস্তি বা প্রতিশ্রুতির সঙ্গে দলের শীর্ষ নেতাদের ছবির পাশে প্রার্থীর বড়মাপের ছবি দেওয়া হোর্ডিং, ফ্লেক্স ভোটের বাজারে ছেয়েই থাকে। কিন্তু বামপন্থীদের প্রার্থীদের সাধারণত, নিজেদের ছবি দিয়ে প্রচার করতে দেখা যায় না। প্রার্থীর নামের পাশে দলীয় প্রতীক, দলের বক্তব্যকেও মানুষের সামনে তুলে ধরাতেই এতদিন বিশ্বাসী ছিলেন বাম নেতারা। কিন্তু নানা ধরনের প্রচারের এই সময়, তাই নিজের অবস্থান বদল করল দার্জিলিং জেলা সিপিএম।

Advertisement

দলীয় সূত্রের খবর, রাজ্য নেতৃত্বের অনুমোদনের পর সম্প্রতি শিলিগুড়ি পুরভোটে দলীয় প্রার্থীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগের মতো আর নয়, তাঁরা ইচ্ছা করলে সমস্ত প্রচার মাধ্যমে নিজের ছবির ব্যবহার করতে পারবেন। তবে তা যেন খুব বড় হোর্ডিং বা ফ্লেক্স না হয়, তা অবশ্য দেখতে দলের তরফে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে জোরকদমে ভোটের প্রচার শুরু হতেই দলের একাধিক প্রার্থী ‘প্রথমবার’ তাঁদের ছবি দিয়ে প্রচার শুরু করেছেন। বামপন্থীদের মধ্যে যা প্রথমবার বলেই দলের নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন।

সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, “সময় বদলাচ্ছে। দলীয় রীতিনীতি, আদর্শ এবং নিয়মকে রেখেই আমাদেরও প্রচারের ধরন বদলাতে হবে। সোস্যাল মিডিয়া থেকে ছবি-সহ প্রচার সব কিছুই এবার প্রার্থীরা করতে পারবেন।” জীবেশবাবু বলেন, “এর আগে সাধারণত আমাদের দলে এই রীতি ছিল না। এবার আমরা সবাইকে ছবি ব্যবহার করার অনুমোদন দিয়েছি। যাঁরা ইচ্ছা করবেন, নিজের ছবি দিয়ে প্রচার করতে পারেন।”

Advertisement

প্রার্থীদের ছবি ব্যবহারের দলের সিদ্ধান্তের মধ্যে অবশ্য অনেকগুলি কারণ রয়েছে বলে সিপিএম সূত্রের খবর। দলের জেলা কমিটির কয়েকজন প্রবীণ নেতা জানান, কংগ্রেস, তৃণমূল বা বিজেপির মতো দলে প্রচারের এই সংস্কৃতি দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে প্রার্থীদের বড় বড় ছবি-সহ হোর্ডিং, কাটআউট দিয়ে প্রচার অনেক পুরানো বিষয়। কিন্তু বামপন্থীরা সাধারণত এই পথে হাঁটেননি। কিন্তু পুরসভা ভোট একেবারেই পাড়ার ভোট বলেই পরিচিত। দেশ, রাজ্য ভিত্তিক বিষয়বস্তুর থেকে স্থানীয় সমস্যা নিয়েই ভোট হয়। সংরক্ষণের কোপে না পড়লে পাড়ার দলের নেতা, কর্মী থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দা, এমনই কাউকে দলের টিকিট দেওয়া হয়। এদের অনেকেই আবার ডাক নামেই পাড়ার পরিচিত বেশি থাকেন। সেক্ষেত্র ছবি দিয়ে প্রচার করলে প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি ঘোরানো ছাড়াও সহজেই চেনানো যায়।

দলের আরেক নেতার মতে, গত তিন দশক ধরে সিপিএমের কাস্তে হাতুরি তারা বা লাল পতাকা পাড়ায় পাড়ায় পরিচিতি রয়েছে। ২০১১ সালে পরিবর্তনের সময় থেকেই সিপিএমকে নিয়ে অনেক বাসিন্দাদের মধ্যে বিরূপ মনোভাব তৈরিও হয়। তাই দলকে একের পর এক নির্বাচনে হারের মুখ দেখতে হয়েছে। ভাঙনের মুখেও পড়তে হয়েছে। এখন নিজেদের সংগঠন টিকিয়ে রাখার লড়াই করে যেতে হচ্ছে দলকে। অশোক ভট্টাচার্যদের মতো রাজ্যের দুই দশকের প্রাক্তন মন্ত্রীকে শিলিগুড়ি পুরভোটে সামনে রেখে দলকে লড়াই-এ নামতে হয়েছে। সেখানে সিপিএম নামকে কিছুটা হলেও পাশে ‘সরিয়ে’ রেখেই পাড়ার ছেলে বা মেয়ের ছবি দিয়ে প্রচার করলে, ফল ভাল হতে পারে বলেও মনে করছেন জেলা কমিটির ওই নেতারা।

দলীয় সূত্রের খবর, দলের নতুন ওই সিদ্ধান্তের পর নবীন প্রার্থীদের অনেকেই ছবি-সহ বক্তব্য দিয়ে প্রচারপত্র, ফ্লেক্স বা সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। ১৭, ২৪, ১৯ এর মতো একাধিক ওয়ার্ডের প্রার্থীদের ওই ধরনের প্রচার করতে দেখা যাচ্ছে। সেই তুলনায় অশোকবাবু বা মুকুল সেনগুপ্ত, শান্তি চক্রবর্তী বা নুরুল ইসলামদের মতো ‘পুরানো’ নেতারা এখনও নিজেদের ছবি দিয়ে প্রচার শুরু করতে দেখা যায়নি। দলের জেলার কমিটির তরুণ সদস্যদের কয়েকজন বলেন, “অন্য দল যেখানে এই ধরনের প্রচারের মাধ্যমে এগিয়ে রয়েছে। সেখানে আমাদের পিছিয়ে থাকার কোনও মানেই হয় না। দলের নেতাদের বৈঠকে আমরা তাই বলেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন