বাজারে ক্রেতা টেনে এনেই প্রচার প্রার্থীর

‘‘এ রকম প্রচার প্রথম দেখলাম। যেখানে প্রার্থীর কাছে ভোটারেরা আসছেন!’’, ক্রেতার এমন রসিক মন্তব্যই এখন তাঁর ইউএসপি। অন্য প্রার্থীরা যখন ভোটের আগের শেষ রবিবারে হাঁটার গতি বাড়িয়ে ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি ছুটছেন, তখন বেশ ভাবলেশহীন ভাবেই সাপ্তাহিক হাটে সব্জি বিক্রি করে চলেছেন তিনি। তিনি রিঙ্কু প্রসাদ। মালবাজার পুরভোটের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী। বছর চৌত্রিশের রিঙ্কু কিশোর বয়স থেকেই প্রতি রবিবার সব্জির দোকানে বসেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালবাজার শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৩৬
Share:

দোকানে রিঙ্কু। ছবি: সব্যসাচী ঘোষ।

‘‘এ রকম প্রচার প্রথম দেখলাম। যেখানে প্রার্থীর কাছে ভোটারেরা আসছেন!’’, ক্রেতার এমন রসিক মন্তব্যই এখন তাঁর ইউএসপি।

Advertisement

অন্য প্রার্থীরা যখন ভোটের আগের শেষ রবিবারে হাঁটার গতি বাড়িয়ে ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি ছুটছেন, তখন বেশ ভাবলেশহীন ভাবেই সাপ্তাহিক হাটে সব্জি বিক্রি করে চলেছেন তিনি। তিনি রিঙ্কু প্রসাদ। মালবাজার পুরভোটের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী। বছর চৌত্রিশের রিঙ্কু কিশোর বয়স থেকেই প্রতি রবিবার সব্জির দোকানে বসেন।

১২ নম্বর ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা রিঙ্কু জানালেন, গত ৩০ বছর ধরে হাটে সব্জি বেচেই তাঁদের পরিবারের সংসার চলে। ১৫ বছর ধরে রিঙ্কু নিজেই ওই ওয়ার্ডের রবিবারের হাটের ভিটিতে বসে আলু, পেঁয়াজ , লঙ্কা ও মরসুমি সব্জি বিক্রি করছেন। বাকি ছ’দিন আলুর পাইকারি ব্যবসা করেন তিনি।

Advertisement

রিঙ্কুর কথায়, ‘‘রবিবারের এই হাটই আমাকে পরিচিতি দিয়েছে। দশ জনকে চিনতে শিখিয়েছে। তাই ভোটের আগে শেষ রবিবাসরীয় প্রচারেও হাটই আমার ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম।’’

রিঙ্কু বিজেপির হয়ে প্রার্থী দাঁড়ানোর আগে থেকেই দোকানে ডান-বাম সব মতের মানুষই ক্রেতা হিসেবে ভিড় জমাতেন। এ বারে বিশেষ দলের প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ালেও তাঁর সেই ক্রেতারা মুখ ঘোরাননি বলেই তাঁর দাবি। ওই হাটেই যেমন বাজার করতে এসেছিলেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী তপন দাস। তিনি নিজেই রিঙ্কুর দোকান থেকে আলু, পেঁয়াজ কিনলেন। ভোট নিয়ে কেনাকাটার ফাঁকে কথাও হল দু’জনের। তপনবাবুর কথায় ভোট ঘিরে অশান্তি মালবাজারের সংস্কৃতিতে নেই। সৌহার্দ্যের বাতাবরণ বজায় থাকাটাই কাম্য। তাই অন্যান্য শহরে যখন বিপক্ষকে দেখলেই মুখ ঘুরিয়ে নেওয়াটা রেওয়াজের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে, সেখানে বিজেপি প্রার্থীর দোকান থেকে সব্জি কিনে আমার উল্টে গর্বই হয়।’’

‘‘ভোটারদের মন জয় করতে তাঁদের আবার সস্তায় সবজি দিচ্ছ না তো!’’, ক্রেতার সরস মন্তব্যে রিংকুর সাফ জবাব, ‘‘যাঁরা ওয়ার্ডে টাকা ঢেলে ভোট কিনতে চাইছেন, তাঁরা তো আসলে ব্যবসায়ী। প্রথমে লগ্নি করছেন, পরে সেই ওয়ার্ডের জনতার থেকেই পাঁচ বছরে সুদে আসলে আদায় করবেন। তাই আমি ন্যায্য দামেই সব্জি বিক্রি করছি।’’ প্রার্থী হওয়ার পরও সব্জি বিক্রি করতে দেখে অনেকেই অবাক হচ্ছেন বলে জানিয়ে রিংকু বলেন, ‘‘আমি দোকানে রাজনীতির রঙ লাগাতে চাই না। তাই কোনও প্রতীক বা পতাকা রাখিনি। কিন্তু এলাকার বেহাল নিকাশি, পানীয় জল, পথবাতি এবং সাপ্তাহিক হাটের দৈন্য দশা গত ১৫ বছরে এতটুকু বদলায়নি। আমি মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমূল উন্নয়ন করতে চাই। নিজের ভোটাররা যখন সব্জি কিনতে আসছেন তখন শুধু এটুকুই বলছি।’’

তবে রিঙ্কুর ব্যবসা যে প্রচারে কোনও ক্ষতি করবে না, তা বলছেন বিজেপি নেতৃত্বও। বিজেপির মালবাজার পুরভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তথা জলপাইগুড়ি জেলা মজদুর মোর্চার সভাপতি দেবব্রত মিত্রের কথায়, ‘‘আমরা রাজনীতি থেকে বাবুগিরি হটাবার পক্ষে। সব্জি বিক্রেতা যে প্রার্থী হতে পারেন, এটা অন্য কোনও দল ভাবতে না পারলেও বিজেপি পেরেছে। রিঙ্কু ভাল ছেলে। ব্যবসার মাধ্যমেই ওর জনসংযোগ এতা ভাল যে প্রচার করতে দোকান বন্ধ রাখাতে হচ্ছে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন