নদীর পাড়ে থমকে মহাকাল

গভীর রাতে নদী পার হয়ে চা বাগানে ঢুকেছিল জঙ্গল ছেড়ে বেরিয়ে আসা হাতির দল। ভোর বেলায় ফের জঙ্গলের পথ ধরে নদীর সামনে এসেই থমকে দাঁড়ায় বুনোর দলটি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বানারহাট শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৬ ০৮:০৩
Share:

আটকে পড়া হাতির দল। ছবি: রাজকুমার মোদক

গভীর রাতে নদী পার হয়ে চা বাগানে ঢুকেছিল জঙ্গল ছেড়ে বেরিয়ে আসা হাতির দল। ভোর বেলায় ফের জঙ্গলের পথ ধরে নদীর সামনে এসেই থমকে দাঁড়ায় বুনোর দলটি। রাতের বেলার শীর্ণ নদী ভোরবেলায় উপচে উঠেছে। জলের স্রোতে নদী খাতে থাকা বোল্ডার ভেসে যাচ্ছে। সারা রাতের বৃষ্টিতে নদী একেবারে খরস্রোতা। বাসিন্দাদের দাবি, নদীর চেহারা দেখে হাতির দল থমকে দাঁড়ায়। দিনভর নদীর পাড়ে চা বাগান এবং লোকালয়ে ঘোরাফেরা করতে থাকে হাতির দলটি। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাসিন্দারাও।

Advertisement

ডায়না নদীর জল ও স্রোত বেড়ে যাওয়ায় নদী পেরিয়ে তিনটি শাবক সহ পনেরো-ষোলটি হাতির দল জঙ্গলে ফিরে যেতে না পেরে বুধবার দিনভর দাঁড়িয়ে রইল ডুয়ার্সের দেবপাড়া ও লক্ষ্মীপাড়া চা বাগান এলাকার বস্তি ও জঙ্গলে। মঙ্গলবার রাতে হাতির দলটি ডায়না জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে ডায়না নদী পার হয়ে চলে আসে ডুয়ার্সের বানারহাটের প্রয়াগপুর ও কায়রাজোত এলাকায়। ভোরে ফের জঙ্গলে ফেরার জন্য ডায়না নদীতে নামতে গেলে জলের তোড়ে একটি শাবক হাতি ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয় বলে বনকর্মীদের দাবি। তারপরেই দলটি ফিরে আসে প্রয়াগপুরে লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানে। সেখান থেকে হাতিগুলি লাগোয়া কায়রাজোত বস্তিতে ঢোকার চেষ্টা করলে বনকর্মীরা তাড়িয়ে ফের চা বাগান এবং লাগোয়া ছোট্ট একটি জঙ্গলে ঢুকিয়ে দেয়। তারপর থেকে নদীর দেড় কিলোমিটার এলাকায় ঘোরাফের করতে থাকে দলটি।

বাসিন্দারাও হাতি দেখতে ভিড় জমায়। কেউ কেউ হাতির দিকে ঢিল ছোড়ে বলে অভিযোগ। বন কর্মীদের দাবি, বাসিন্দারা উত্যক্ত করতে থাকায় হাতির দলটিও আতঙ্কিত হয়ে চা বাগানে ঢুকে পড়ে। দুপুরের পর চা বাগান থেকে বের হতে দেখা যায়নি দলটিকে। ঘটনাস্থলে বিন্নাগুড়ি এলিফ্যান্ট স্কোয়াড, ডায়না রেঞ্জ ও এসএসবি জওয়ানরা নজরদারি চালাচ্ছে। এলাকায় বুনোর দল ঘোরাফেরা করায় আতঙ্কে রয়েছেন লক্ষ্মীপাড়া চা বাগান লাগোয়া বাসিন্দারা। অন্য দিকে বিন্নাগুড়ির সেনা ছাউনির একটি স্কুলের পাশে তেলিপাড়া চা বাগানের ঝোপ-জঙ্গলে সারা দিন দাঁড়িয়ে থাকে তিনটি হাতির দল। এলাকাটি জলমগ্ন হয়ে পড়ায় হাতির দলটি বের হতে পারেনি বলে দাবি। পাশেই একাধিক চা বাগানের শ্রমিক বস্তি থাকায় এখানের বনকর্মীরা নজরদারিতে রেখেছে হাতিগুলিকে।

Advertisement

প্রয়াগপুর গ্রামের বাসিন্দা পুনের নাগারসি ও প্রেম ছেত্রী বলেন, “ভোর থেকে হাতিগুলি কখনও বস্তিতে ঠোকার চেষ্টা করছে, কখনও লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানের জঙ্গলে ঢুকে পড়ছে। হাতি ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত আতঙ্কে আছি।”

ওয়াল্ড লাইফ কমিটির সাম্মানিক সদস্য সীমা চৌধুরী প্রয়াগপুরে দাঁড়িয়ে বলেন, “ভোরে ডায়না নদী পার হতে গিয়ে জল ও স্রোত বেশি থাকায় শাবকদের ভেসে যাওয়ায় শঙ্কায় দলটি প্রয়াগপুরে চা বাগানের জঙ্গলে চলে আসে। নদীর জল কমলে রাতারাতি হাতিগুলি ডায়না জঙ্গলে ফিরে যাবে। জল না কমলে মরাঘাট জঙ্গলের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন