সাহস বাড়াতে পাঠানো হচ্ছে জঙ্গলে

‘দলই সেলাম’ শুনলেই শুঁড় নাড়িয়ে জবাব দিচ্ছে বলরাম

আস্তে আস্তে ‘মানুষ’ হচ্ছে সে। নির্দেশ শুনতে শিখছে। প্রশিক্ষক মাহুত ‘দলই সেলাম’ বলতেই শুঁড় উঁচিয়ে দিচ্ছে। আবার ‘মইল’ বলতেই মমতাজ, মাতঙ্গিনী, ললিতা, জোনাকিদের সঙ্গে হাঁটতে শুরু করছে।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৭ ০২:২৫
Share:

বৃংহণ: মাত্র ছ’মাস বসয়েই পুরুলিয়া থেকে এই হস্তিশাবকটিকে নিয়ে আসা হয় ডুয়ার্সে। এখন সে বড় হাতিদের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। জঙ্গলে ঘাসও আনতে যাচ্ছে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

আস্তে আস্তে ‘মানুষ’ হচ্ছে সে। নির্দেশ শুনতে শিখছে।

Advertisement

প্রশিক্ষক মাহুত ‘দলই সেলাম’ বলতেই শুঁড় উঁচিয়ে দিচ্ছে। আবার ‘মইল’ বলতেই মমতাজ, মাতঙ্গিনী, ললিতা, জোনাকিদের সঙ্গে হাঁটতে শুরু করছে। ‘বইঠ’ বলতেই বসেও যাচ্ছে। বড়দের সঙ্গে মাঝে মধ্যে জঙ্গলে ঘাস আনতে যেতেও তার এতটুকু অনীহা নেই। সাহস বাড়ানোর প্রশিক্ষণেও একেবারে ‘গুড বয়’। এমনকী খাবার খাওয়াতেও ঝক্কি নেই, নিজেই পচ্ছন্দের মেনু তুলে নিচ্ছে মুখে।

সব মিলিয়ে দিব্যি আছে পুরুলিয়া থেকে ছয় বছর আগে উদ্ধার হওয়া হস্তি শাবক বলরাম। পর্যটকদের কাছেও সে হয়ে উঠেছে নজরকাড়া। তাই ‘বলরাম’কে নিয়ে এখন স্বস্তির ছাপ বনকর্মী থেকে পদস্থ কর্তাদের মধ্যে।

Advertisement

ছোট্ট বয়সে, জন্মের কিছু দিনের মধ্যে দলছুট ওই শাবকটিকে বাঁচাতে কম ঝক্কি তো পোহাতে হয়নি—তা দফতরের সবাই জানেন।

বনকর্মীদের কয়েক জন বলছিলেন, একটা সময় ওকে বাঁচানোই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। বলরাম তাই সকলের চোখের মণি। কোচবিহার বন্যপ্রাণ দফতরের ডিএফও ভাস্কর জেভি বলেন, “বলরাম বেশ ভালই আছে। বড় হাতিদের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। ওর প্রশিক্ষণ অনেকটাই সম্পূর্ণ করেছে। কিছু দিন থেকে সাহস বাড়াতে ওকে বড় হাতির সঙ্গে জঙ্গলে পাঠাচ্ছি। দেখা যাক।”

বন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডির নন্দাররাম ডিহি গ্রামে সদ্যোজাত শাবক সহ মা হাতি ঢুকে পড়ে। শাবকটি কোন ভাবে কুয়োয় পড়ে যায়। বনকর্মীরা সেটিকে উদ্ধার করে জলদাপাড়া নিয়ে আসেন।

শুরুতে সেটিকে দুগ্ধবতী কুনকি হাতি মুক্তিরাণির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই কিন্তু ভাব জমেনি। পরে শাবকটিকে পাঠানো হয় দফতরের পোষা হাতি চম্পাকলির কাছে। মাতৃস্নেহে কাছে টেনে নিয়েছিল চম্পাকলি।

কয়েকদিনের মধ্যে অবশ্য ওই হাতিটি অসুস্থ হয়ে পড়ায় আবার সমস্যা তৈরি হয়। তার জেরে শাবকটিকে বাঁচাতে লড়াইটা কঠিন হয়ে যায়। শেষে সেটিকে বোতল ভরা গুঁড়ো দুধ গুলিয়ে খেতে শাবকটিকে অভ্যস্ত করা হয়। সময়ের প্রবাহে বলরাম এখন মমতাজ, মাতঙ্গিনীদের সঙ্গে একই পিলখানায়। চার হাতির কাছেই সন্তানতুল্য। জলদাপাড়ার সহকারি ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন বিমল দেবনাথ বলেন, “বড় হাতিরা ওই শাবকটিকে পছন্দ করে।”

তবে দস্যিপনায় খামতি নেই। কোন কারণে মেজাজ বিগড়ে গেলে আবার দাঁত এগিয়ে তেড়ে আসতে চায়। স্নানের সময় জল শুঁড়ে ভরে হুটোপুটিও করে। ওই পিলখানার মাহুত সুখেন ওরাওঁ, অসিত কার্জিরা বলেন, “একটু আধটু দুষ্টুমি করে ঠিকই, তবে বলরাম প্রশিক্ষণের আদব কায়দা ভাল রপ্ত করেছে। ডিউটি শুরু হলে ভালই করবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন