ধেয়ে এসে বাস্তুভিটে গ্রাস করেছে গঙ্গা।
বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেল শতাধিক বাড়ি। বিপন্ন খোদ বিধায়কের বাড়িও।
শুক্রবার গভীর রাতে প্রায় ৫০০ মিটার মার্জিনাল বাঁধ ভেঙে কালিয়াচক ৩ ব্লকের বীরনগরের সরকারটোলা ও চিনাবাজার গ্রামের ১১০টি বাড়ি গঙ্গার গর্ভে তলিয়ে যায়। বৈষ্ণবনগরের নবনির্বাচিত বিজেপি বিধায়ক স্বাধীন সরকারের বাড়ির একাংশও গ্রাস করেছে নদী। বাড়ির পুরোটাই যাতে নদীগর্ভে চলে না যায় সে কারণে অন্য বাসিন্দাদের মতোই তিনিও তাঁর দোতলা পাকা বাড়ির নানা অংশ ভেঙে ফেলতে শুরু করেছেন। বাড়ির আসবাবপত্রও সরিয়ে নিচ্ছেন। যে সমস্ত বাসিন্দাদের বাড়িঘর তলিয়ে গিয়েছে হয়েছে তাঁরা পরিবার-পরিজন নিয়ে বীরনগর হাইস্কুলের ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।
স্বাধীনবাবু বলেন, ‘‘আসবাবপত্র সরিয়েছি। বাড়ির ইট, কাঠগুলি কিছুটা যাতে অন্তত রক্ষা করা যায় সেজন্য বাড়ি ভেঙে সেগুলিও সরানোর চেষ্টা করছি।’’ বাড়ি তলিয়ে গিয়ে আপাতত ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন সরকারটোলার অনিল রবিদাস, রামপ্রসাদ, চমৎকার, উদয়, শঙ্কর, তোতা রবিদাসেরা। বললেন, ‘‘রাতের দিকে এমনভাবে আচমকা বাঁধ ভেঙে বাড়িঘর গঙ্গা গিলে নিল যে ঘরের কোনও আসবাবই বের করার সময় পাইনি। কোনও রকমে জীবনটা রক্ষা পেয়েছে সেটাই বড় কথা। সর্বস্ব খুইয়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে আমরা এখন কোথায় যাব তা ভেবেই পাচ্ছি না।’’ জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদী অবশ্য বলেন, ‘‘দু’কিলোমিটার দূরে একটি খাস জমি পাওয়া গিয়েছে। সেখানে পরিবারগুলিকে যাতে পুনর্বাসন দেওয়া যায় সেই চেষ্টা করা হবে।’’
বাড়ি ভেঙে ইট-কাঠ সরানোর কাজ বিধায়কের বাড়িতে। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়
এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ ভাঙন কবলিত ওই এলাকা পরিদর্শনে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। মন্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘‘ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ শুক্রবার বিকেলের দিকে ১১২টি স্লুইস গেটের মধ্যে গঙ্গার বাম দিকের ১, ২ ও ৩ নম্বর গেট খুলে দেওয়ার জেরেই নদীর জলের ধারা বীরনগরের দিকে চলে আসে। এর জেরেই মার্জিনাল বাঁধের ৫০০ মিটার অংশ ভেঙে প্রায় ১১০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বাঁধের ভেঙে পড়া অংশ জরুরি ভিত্তিতে যদি মেরামতের ব্যবস্থা না করা যায় তবে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।’’ তিনি জানান, ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে সেকথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তিনি কথা বলেছেন বলে জানান রবিবাবু। ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
মন্ত্রীকে সামনে পেয়ে ত্রাণ না পাওয়ার ক্ষোভ উগরে দেন দুর্গতেরা। মন্ত্রীর সফরসঙ্গী জেলাশাসক অবশ্য বলেন, ‘‘প্রতিটি দুর্গত পরিবারের কাছে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কিট পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সেই কিটে ত্রিপল, হাঁড়ি থেকে বাসন-কোসন, জামাকাপড় রয়েছে। শিবিরে রান্না করা খাবারও দেওয়া হচ্ছে।’’