মোড়ক, সিল, হলোগ্রামে নকল মদ বোঝা ভার

পুলিশ ও আবগারি কর্তাদের দাবি, এই জাল মদের কারবারের নেপথ্যে রয়েছে আন্তঃরাজ্য চক্র। গত কয়েক মাসে জেলায় এই চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২১ জনকে ধরাও হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ইসলামপুর শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:২৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

নামী সংস্থার মোড়ক দেওয়া বোতল। সিল করা ছিপি। ছিপির উপর রয়েছে হলোগ্রামও। খালি চোখে নজরেই আসবে না ফারাকটা। বিহারে এ ভাবেই ভেজাল মদ পাচার হচ্ছে। আবগারি দফতরের কর্তারা জানান, উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর, পাঞ্জিপাড়া, ডালখোলা, করণদিঘি, চাকুলিয়ায় এই মদের কারবার চলছে বলে তাঁদের কাছে খবর রয়েছে।

Advertisement

কিছুদিন আগেই পাঞ্জিপাড়ার পুলিশ বিহারে মদ পাচারের সময় একটি গাড়ি থেকে এই রকমই জাল মদ আটক করে। দু’জন গ্রেফতার হয়। তাদের জেরা করে জাল মদের কারখানার হদিশ মেলে। পুলিশ অভিযানে নেমে জাল মদের সরঞ্জাম-সহ নামী সংস্থার ছিপি এবং বোতল বাজেয়াপ্ত করে। চলতি বছরে তিনটি জাল মদের কারখানা বন্ধ করে পুলিশ। পুলিশ কর্তারা জানিয়েছেন, মদের বোতল আসল-নকল চেনা মুশকিল। লেবেলে চেনা ব্র্যান্ডের নাম। বোতলে প্যাকেজিংয়ে খাঁটি পেশাদারিত্বের ছোঁয়া। মোটামুটি দামের রাম ও হুইস্কির এমনই কিছু জাল মদ বিহারের পাশাপাশি এ রাজ্যের বাজার দ্রুত ছেয়ে ফেলছে।

পুলিশ ও আবগারি কর্তাদের দাবি, এই জাল মদের কারবারের নেপথ্যে রয়েছে আন্তঃরাজ্য চক্র। গত কয়েক মাসে জেলায় এই চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২১ জনকে ধরাও হয়েছে। কিন্তু তাতেও জাল মদের রমরমা ঠেকানো যাচ্ছে না বলেই আক্ষেপ তাঁদের। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিকিতা ফনিং জানান, গত ছ’মাসে এই জেলায় প্রায় ২৭ হাজার লিটার জাল মদ উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৮৪ জনকে। পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, যে মদের ১৮০ মিলিলিটার পরিমাণ পাইকারি বাজারে ১৫০ টাকায় বিকোয়, খুচরো বিক্রেতা তার জাল সংস্করণ কিনছেন অর্ধেক দামে। ক্রেতাদের হাতে অবশ্য তা আসছে লেবেলে লেখা ওই ব্র্যান্ডের স্বাভাবিক বাজারচলতি দামেই।

Advertisement

আবগারির এক কর্তা জানান, জাল মদের কাঁচামাল বলতে সস্তার বিপজ্জনক সব উপাদান। সেই সঙ্গে হুইস্কি বা রামের আদল আনতে ব্যবহার হয় সস্তার রং। তিনি জানিয়েছেন, এ ভাবে বোতল পিছু প্রায় ৭০ শতাংশ মুনাফা করছে কারবারিরা। এক আধিকারিক জানান, সস্তার রাসায়নিকের সঙ্গে কীটনাশক মিশিয়ে ওই মদ তৈরি হচ্ছে।

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট নাদিম পারভেজের কথায়, ‘‘রাসায়নিকের পরিমাণ বেশি হলে লোকে অন্ধও হয়ে যেতে পারে। খুব দ্রুত একের এক অঙ্গ কার্যক্ষমতা হারাবে। লিভার ও কিডনিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিষক্রিয়ায় তিন দিনেও কেউ মারা যেতে পারেন। এই লেভেলের আড়ালে একটি চক্র ভেজাল মদ পাচারে সক্রিয়। আর এর ফলে শরীরে আরও বিষ ঢুকে পড়ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন