সোনার দোকানে ঢুকে প্রথমে নিজেদের রেল পুলিশের কর্মী বলে পরিচয় দিয়েছিল। তারপর নকল সোনার বাটের বদলে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকার আসল সোনার গয়না নিয়ে চম্পট দিয়েছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হল না৷ নিজেদের ছোট্টো একটা ভুলে শেষ পর্যন্ত জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল প্রতারক দম্পতি৷ তাদের সঙ্গেই গ্রেফতার হয়েছে, নকল সোনার বাট বানানোর কারিগরও৷ পশ্চিম মেদিনীপুরের এগরা থেকে পাকরাও করা হয় তাদের।
পুলিশ জানিয়েছে, তিনজনকেই শুক্রবার জলপাইগুড়ি আদালতে তোলা হবে৷ জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, শুধু জলপাইগুড়িতেই নয়, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এ ধরণের প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত এই দম্পতি৷ তাই তারা গ্রেফতার হওয়ার পরেই বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট সহ রাজ্যের বিভিন্ন থানা থেকে জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়িতে এই প্রতারণার ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৭ জুলাই৷ ওই দিন দুপুরে শহরের ডিবিসি রোডে প্রভাত মোড়ের কাছে একটি সোনার দোকানে যান অরবিন্দ পাণ্ডে ও সুনীতা পাণ্ডে৷ নিজেদেরকে আরপিএফ কর্মী বলে পরিচয় দেন তাঁরা৷ বোনের বিয়ে রয়েছে বলে জানিয়ে সঙ্গে থাকা সোনার বাটের পরিবর্তে সোনার গয়না নিতে চান তাঁরা৷ সোনার দোকানের মালিক দীপান্বিতা রায় বলেন, ‘‘আমরা সোনার বাটের মাঝখানটা কেটে পরীক্ষা করতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু তা হলে সোনা অপচয় হবে বলে ওঁরা সোনার বাটের দু’দিক কাটতে বলেন৷ সোনার বাটের দু’দিক কেটে আমরা সোনাই পাই৷ এরপর বাট ওজন করে তার পরিবর্তে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকার গহনা দম্পতিকে দিয়েছি৷’’ তিনি জানান, ওই দম্পতি বেরিয়ে যাওয়ার পরে বাটের মাঝখানটা কাটতে গিয়ে বুঝতে পারেন তা অন্য ধাতু৷ সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেন৷
পুলিশ জানিয়েছে, সোনার গয়না নেওয়ার সময় ওই দম্পতি সুনীতা পাণ্ডের নামে একটি ভুয়ো প্যানকার্ডও জমা দিয়েছিলেন৷ সেইসঙ্গে একটি ফোন নম্বর দিয়েছিলেন৷
দোকানে থাকার সময় সেই ফোনটা সচল ছিল৷ পরে তা বন্ধ করে দেয় ওই দম্পতি৷ পুলিশ ওই নম্বর যাচাই করে জানতে পারে, ফোন নম্বরটি ওই দম্পতির নয়, বরং অন্য কারও নামে৷ কিন্তু ফোনটি বন্ধ থাকায় কোনও অবস্থাতেই প্রতারকদের সন্ধান করতে পারছিলেন না৷ পুলিশ সূত্রের খবর, সম্প্রতি এক বারের জন্য ওই ফোনটি চালু করে দম্পতি৷ সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ জানতে পারে তারা ধানবাদে রয়েছে৷ সেখানে গিয়ে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার পুলিশ ওই দম্পতির নাম পরিচয় জানতে পারলেও, তাদের
ধরতে পারেনি।
এরপরেই পুলিশ জানতে পারে পশ্চিম মেদিনীপুরের এগরাতে রয়েছেন তাঁরা। সেখান থেকে তাদের গ্রেফতার করে৷ ধরা পড়ে বনবাসী কামিল্লা নামের নকল সোনার বাট বানানোর কারিগরও৷ জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বলেন, ‘‘এই দম্পতি বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট সহ বিভিন্ন এলাকায় এভাবে প্রতারণা চালিয়েছেন৷ দম্পতিকে ট্র্যানজিট রিমান্ডে এ দিন জলপাইগুড়ি আনা হয়েছে৷ শুক্রবার আদালতে তোলা হবে৷’’