টাকা নেই, বিপাকে চাষ

সারা দিন ব্যাঙ্কে লাইনে দাড়িয়ে মিলছে মাত্র এক হাজার টাকা। ওই টাকা দিয়ে শ্রমিকদের ধান কাটার মজুরি টাকাই মেটানো যাচ্ছে না। এর পর আলু চাষের জন্য জমি চাষ,বীজ ও সারের টাকা জোগার হবে কি ভাবে?

Advertisement

রাজু সাহা

শামুকতলা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৬ ০২:০৬
Share:

নোটের আকালের প্রভাব পড়েছে চাষেও। শুরু হয়েছে ধান কাটা। বালুরঘাটে অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।

সারা দিন ব্যাঙ্কে লাইনে দাড়িয়ে মিলছে মাত্র এক হাজার টাকা। ওই টাকা দিয়ে শ্রমিকদের ধান কাটার মজুরি টাকাই মেটানো যাচ্ছে না। এর পর আলু চাষের জন্য জমি চাষ,বীজ ও সারের টাকা জোগার হবে কি ভাবে? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রাম থেকে শামুকতলার হাজার হাজার আলু চাষিদের মধ্যে।

Advertisement

অন্য বছর যেখানে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে মাঠের সমস্ত ধান কাটা শেষ হয়ে যায়। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে আলু চাষের জন্য জমি প্রস্তুতও করে ফেলা হয়। কিন্তু এ বছর ৫০০ ও এক হাজারের নোট বাতিলের জেরে চাষিরা ধান কাটাই শেষ করতে পারেননি। টাকা জোগার করে শেষ পর্যন্ত আলু চাষ করতে এবার অনেকটাই দেরি হয়ে যাবে। চাষিদের এ বছর আলু চাষ করে লাভের মুখ দেখাই কঠিন হয়ে উঠবে বলে কৃষি দফতরের কর্তারাও এমনই আশঙ্কা করছেন। তাঁরা জানান, নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে আলু চাষ শুরু করা জরুরি। বেশি দেরি হয়ে গেলে ধসা সহ বিভিন্ন রোগ,বৃষ্টি ও আবহাওয়ার কারণে আলু চাষে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকের ছোট চৌকিরবস গ্রামের আলু চাষি অজিত দেবনাথ মাঠের সমস্ত ধান কাটা হয়ে গেলেও টাকার অভাবে জমি চাষ করতে পারছেন না। অজিতবাবু জানালেন,অন্য বছর এই সময় আলু চাষের সমস্ত কাজই করে ফেলা হয়। ৫০০ ও হাজারের নোট বাতিল হওয়ার পর আলু চাষের জন্য রাখা সমস্ত টাকা বড় নোট থাকায় পুরো টাকা ব্যাঙ্কে জমা করে দিতে হয়েছে। এবার জমি চাষ,বীজ ও সার কেনার জন্য টাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘‘চাষিদের জন্য টাকা পাওয়ার অনেক সরকারি ঘোষণা থাকলেও বাস্তবে সেটা মিলছে না।’’ ব্যাঙ্কে এ ধরনের কোন নির্দেশ এসে পৌঁছয়নি। টাকার জন্য শেষ পর্যন্ত এ বছর আলু চাষ করতে পারব কি না জানি না।’’ শুধু অজিত দেবনাথ নন ওই গ্রামের সুজন দেবনাথ,সুকুমার দেবনাথ,পরিতোষ দেবনাথদের একই অবস্থা।

Advertisement

কুমারগ্রামের আলু চাষি নিতাই দাস বলেন, ‘‘টাকার অভাবে মাঠের ধান ঘরে তুলতে পারিনি। এর পর আলু চাষ করতে পারব কি না জানি না। ব্যাঙ্কে চার দিন লাইনে দাঁড়িয়ে দুদিনে দু’হাজার টাকা তুলতে পেরেছি। এটিএমগুলিতে টাকা নেই।’’

কামাখ্যাগুড়ির সার ও বীজ ব্যবসায়ী সুজিত দেবনাথ জানিয়েছেন, টাকার সমস্যায় আলু চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। টাকার অভাবে জমি তৈরি করতে পারছেন না। অন্যবার এই সময়ের মধ্যে এক লরি আলুর বীজ বিক্রি হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘‘এই ঘটনায় বীজ আনানোর সময় দু’সপ্তাহ পিছিয়ে দিয়েছি। এর ফলে আমরা সার বীজ ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। কৃষকরা যাতে চাষের কাজে দ্রুত প্রয়োজন মতো টাকা পায়, সে ব্যবস্থা করা দরকার।’’

আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকের কৃষি অধিকর্তা অম্লান ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, টাকার সমস্যায় শুধু আলু চাষ নয় সমস্ত রবি শস্যে চাষেরর ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়েছে। আলু চাষে বেশি বিলম্ব হলে কৃষকদের ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে। ফলনেও ঘাটতি হতে পারে। এ সমস্যা মেটাতে উদ্যোগ দ্রুত নিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন