নিকিতা ফিরে আয়, আর্তনাদ মায়ের

গ্রামের সবাই যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, তখন জলের তলায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে লড়তে হেরে গিয়েছিল সবাই। একসঙ্গে এ ভাবে একই গ্রামের সাতজনের মৃত্যু যেন কেউই বিশ্বাস করতে পাচ্ছে না।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৮ ০২:২০
Share:

প্রতীকী ছবি।

সন্ধেবেলা হইহই করে সবাই গিয়েছিল বরযাত্রী। বিয়ে বাড়িতেও আনন্দে মেতে উঠেছিল ওঁরা। মানে গোপাল সাহা, সাধন সাহা থেকে ছোট্ট নিকিতা। সাতজন। কেউই আর বাড়ি ফিরল না।

Advertisement

গ্রামের সবাই যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, তখন জলের তলায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে লড়তে হেরে গিয়েছিল সবাই। একসঙ্গে এ ভাবে একই গ্রামের সাতজনের মৃত্যু যেন কেউই বিশ্বাস করতে পাচ্ছে না। শনিবার সকালে থেকে দুপুর গড়িয়েছে, দুপুর থেকে বিকেল। কোচবিহারের ভেটাগুড়ি গ্রামে যেন নিস্তব্ধতা গ্রাস করেছে। কারও বাড়িতে উনুনে হাঁড়ি চড়েনি। ওই বিয়েবাড়িতে কেউই আনন্দে আর মেতে ওঠেনি। নিকিতাদের বাড়ি থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছিল। তাঁর মা নিয়তিদেবীর ডাক ভেসে আসছিল, “নিকিতা নিকিতা, মা তোর বাবাকে নিয়ে ফিরে আয়। তোরা না এলে আমি বেঁচে থাকতে পারব না।” নিকিতা তখন বাবাকে নিয়ে শুয়ে নিয়ে আছে লাশকাটা ঘরে।

নিকিতার বাবা সাধনবাবু। সাধনবাবুর কাকাতো ভাইয়ের বিয়েতেই বরযাত্রী গিয়েছিল সবাই। সাধনবাবুর ভাই গোপালবাবু, আরও দুই নিকট আত্মীয় বলরাম সাহা, সুব্রত সাহা। দুই প্রতিবেশী গোলাপ দাস, বাপি বর্মনরা। ফেরার সময় একটি ছোট গাড়িতে সবাই চেপেছিল। সাত বছরের নিকিতা বাবার সঙ্গে ফিরবে বলে জেদ ধরে ওই গাড়িতেই উঠে পড়ে। তখন গভীর রাত। টুপামারি গ্রামের একটি পুকুরে পড়ে যায় ওই গাড়ি। কেউই বের হতে পারেনি গাড়ি থেকে। সাধনবাবুর মা মায়ারানি দেবী মুর্চ্ছা যাচ্ছেন বারবার। দুই ছেলে আর ছোট্ট নাতনির এ ভাবে চলে যাওয়া তাঁর ভাবনার বাইরে ছিল।বার বার বলছিলেন, “ঠাকুর আমি তো ছিলাম। কেন আমাকে তুলে নিলে না। আমার ছেলে, নাতনি ওঁদের কেন নিলে। ওঁদের ফিরিয়ে দাও।” তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার কোনও ভাষা ছিল না কারও কাছে।

Advertisement

গোপালবাবুর উমা দেবী, তাঁর আট বছরের ছেলে অরূপ থেকে প্রত্যেকের বাড়ির লোক কান্নায় ভেঙে পড়েছে। কেউ কেউ জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন।

তাঁদের কথায়, “কী দরকার ছিল ওই ছোট গাড়ি নেওয়ার। এক গাড়িতে সবাই থাকতাম। তাহলে আর এমন ঘটনা ঘটত না।” কয়েকটি ছোট গাড়ি যায় ওই বিয়েতে। সঙ্গে ছিল একটি বড় গাড়ি। সেখানেই নিয়তিদেবী, উমা দেবী-সহ বরযাত্রীদের বেশিরভাগ লোক ছিলেন। গ্রামের বাসিন্দা চৈতন্য সাহা, চঞ্চল অধিকারীরা বলেন, “আজ আর কিছু ভাল লাগছে না। মৃত্যু এমন ভাবে যেন কারও জীবনে না আসে। একদিনে গোটা গ্রামটা যেন খাঁ খাঁ হয়ে গেল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন