আতঙ্কিত সৈয়দপুর

আফরাজুল যে কাকরোলি এলাকায় খুন হয়েছেন এবং রাজসামুন্দ জেলার যে দোইন্দা গ্রামে তিনি থাকতেন, সেই সব এলাকায় সৈয়দপুর গ্রামেরই অন্তত দু’শো জন রয়েছেন কর্মসূত্রে। তাঁরা বেশিরভাগ নির্মাণ শ্রমিক। সৈয়দপুরে তাঁদের সেই সব পরিবারের লোকজন রীতিমতো আতঙ্কে কাটাচ্ছেন।

Advertisement

জয়ন্ত সেন

মালদহ শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:০৩
Share:

পাশে: খুনের প্রতিবাদ সভায় তৃণমূল সাংসদ ও মন্ত্রীরা। নিজস্ব চিত্র

রাজস্থানে কাজে গিয়ে নৃশংস ভাবে খুন হয়েছেন ৫০ বছরের আফরাজুল খান। আর সেই ঘটনাকে ঘিরে তৈরি আতঙ্ক গ্রাস করেছে কালিয়াচকের সৈয়দপুরকে। আফরাজুল যে কাকরোলি এলাকায় খুন হয়েছেন এবং রাজসামুন্দ জেলার যে দোইন্দা গ্রামে তিনি থাকতেন, সেই সব এলাকায় সৈয়দপুর গ্রামেরই অন্তত দু’শো জন রয়েছেন কর্মসূত্রে। তাঁরা বেশিরভাগ নির্মাণ শ্রমিক। সৈয়দপুরে তাঁদের সেই সব পরিবারের লোকজন রীতিমতো আতঙ্কে কাটাচ্ছেন।

Advertisement

রাজ্য সরকারও এই নিয়ে চিন্তিত। তাই মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশে শুক্রবারই রাজস্থানের ডিজি-র সঙ্গে কথা বলেছেন রাজ্যের ডিজি। এখানকার বহু মানুষ রাজস্থানে কর্মরত। সে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন যাতে ওই শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে বিশেষ নজর দেয়, সেই অনুরোধও করেছেন তিনি। রাজস্থানের ডিজি-ও জানিয়েছেন, তাঁরা নজর রাখবেন।

যেখানে থাকতেন আফরাজুল, সেখানে এখনও কর্মরত তাঁর মেজো জামাই। আছেন ভাগ্নে জসিম ও জাহাঙ্গির, ভাই রুম খান। ভাগ্নেরা মামার দেহ নিয়ে কালিয়াচকে এসেছেন। তাঁরা এ দিন বলেন, ‘‘এখন তো আমাদেরও ফিরে যেতে ভয় করছে। বারবার মনে হচ্ছে, আমাদেরও তো মামার মতো একই পরিণতি হতে পারে।’’ আফরাজুলের ভাই রুম বলেন, ‘‘সামান্য দিনমজুরি করে সংসার চালায় আমাদের বেশিরভাগ লোক। মজুরির টাকা বাকি রয়েছে সেখানে। এখন ফিরে যেতে ভয়ই লাগছে।’’ একই ভাবে সেখানে রয়েছেন গ্রামের মোস্তাক শেখ, আতাউর শেখরা। তাঁদের পরিবারের লোকজনেরা বলছেন, ওই ঘটনার পর দু’দিন ওঁদের কেউই কাজে যাননি। একটাই কারণ— আতঙ্ক। কার কখন কী ঘটে যায়, ভয় পাচ্ছেন সকলেই। বাড়িতে ফোন করে বলেওছেন সে কথা।

Advertisement

এই আতঙ্কের একটাই দাওয়াই দেখছে সৈয়দপুর। সেটা হল আফরাজুল খুনে অভিযুক্ত শম্ভুলালের ফাঁসি। গ্রামের মানুষ মনে করছেন, একমাত্র কঠোর শাস্তি হলেই এমন অপরাধ দমন করা সম্ভব হবে। গ্রামের জুম্মা মসজিদের ইমাম নুর আখতার বলেন, ‘‘আমরা চাই দোষীর যেন ফাঁসি হয়। কেন না তা হলে কেউ এমন নিষ্ঠুর ভাবে কাউকে খুন করার আগে দু’বার ভাববে।’’

বিবিগ্রাম প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক মহম্মদ মহসিন আলি বলেন, ‘‘এমন নারকীয় হত্যাকাণ্ড এই প্রথম দেখলাম। একমাত্র ফাঁসিই এর উপযুক্ত শাস্তি।’’ জালুয়াবাথালের প্রাক্তন প্রধানের স্বামী একরামুল হক, এলাকার ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন বা আক্রাম শেখ— সব গ্রামবাসীর মুখেই একই কথা। এরই মাঝে আফরাজুলের স্ত্রী গুলবাহার বিবি এ দিন খুনের ঘটনায় সিবিআই তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন