হাল: উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ছবি এখন এমনই। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
‘র্যাপিড কিট টেস্ট’এ ‘এনএসওয়ান’ পরীক্ষায় শিলিগুড়ির বেসরকারি ল্যাবরেটরি এবং নার্সিংহোমগুলিতে কয়েক হাজার রোগীর দেহে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। সংখ্যাটা দশ হাজারেরও বেশি বলে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য আধিকারিকদের একাংশ জানিয়েছেন। অথচ স্বাস্থ্য দফতর ম্যাক এলাইজা পরীক্ষায় জানিয়েছে, ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ন’শো। দুই রিপোর্ট নিয়েই বিভ্রান্তি বাড়ছে। কিছু ক্ষেত্রে নার্সিংহোম এবং বেসরকারি ল্যাবরেটরিগুলো ব্যবসা ফেঁদেছে বলে অভিযোগ।
স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকের কয়েকজন জানান, অনেক ক্ষেত্রেই ১২০০-১৫০০ টাকা র্যাপিড কিট টেস্ট পরীক্ষার জন্য নেওয়া হচ্ছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। যে পরীক্ষা সাড়ে তিনশো থেকে চারশো টাকার মধ্যেই করা উচিত।
শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের সুপার অমিতাভ মণ্ডল বলেন, ‘‘ডেঙ্গি না-হয়ে অন্য ভাইরাল ফিভারের জন্যও র্যাপিড কিট পরীক্ষায় এনএসওয়ান পজিটিভ হতে পারে। ম্যাকএলাইজা পরীক্ষাতেই নিশ্চিত হলে তবেই ডেঙ্গি বলা হচ্ছে।’’ নার্সিংহোম, এমনকী হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ জানান, সরকারি রিপোর্ট কখন মিলবে ভরসা নেই। তাই র্যাপিড কিট পরীক্ষার রিপোর্ট দেখেই অনেক ক্ষেত্রে ডেঙ্গির চিকিৎসা করতে হচ্ছে। যখন মাত্রাতিরিক্ত সংক্রমণ ঘটছে তখন রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার একটি নার্সিংহোমেই বর্তমানে ১৯ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, ম্যাক এলাইজা পরীক্ষায় শিলিগুড়ি পুর এলাকাতেই ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা আটশো জন। মহকুমার বাকি এলাকায় সংখ্যাটা শতাধিক।
ব্যাপক হারে ভাইরাল ফিভার হওয়ায় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে পুনের ন্যাশনাল ইন্সস্টিটিউট অব ভাইরোলজি বা ট্রপিক্যাল মেডিসিনে নমুনা পাঠিয়ে খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছেন শিলিগুড়ি ওয়েলফেয়ার সংস্থাও। পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবকেও এ দিন তারা স্মারকলিপি দেন। পর্যটনমন্ত্রী বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য সচিব অনিল বর্মার সঙ্গে এ দিন কথা বলেছি। বুধবার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং অন্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করে তাঁর সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে ফের কথা বলব।’’ র্যাপিড কিট পরীক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ধন্দে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরাও। নার্সিংহোমগুলির একাংশে ম্যাক এলাইজা পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু করা নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
এ দিন শিলিগুড়ি ওয়েলফেয়ার সংস্থার সভাপতি পুলক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা সাড়ে তিনশো টাকায় ডেঙ্গির র্যাপিড কিট পরীক্ষা করছি। অথচ নার্সিংহোমগুলিতে ১৫০০ টাকা, কোথাও ২ হাজার টাকাও নেওয়া হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি।’’ শিলিগুড়ি হাসপাতালের পরিষেবার খামতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের উপাদান পৃথকীকরণ ইউনিট না থাকায় প্লেটলেট মিলছে না। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ বা বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে। মেডিসিন বিভাগে তিনশো জ্বরের রোগী রাখার পরিস্থিতি, জায়গা নেই। সে কারণে নতুন ওয়ার্ড চালু এবং বাড়তি চিকিৎসক এবং নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী দেওয়ার দাবিও জানান তাঁরা। ভাইরোলজি বিভাগ চালু, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ট্রপিক্যাল মেডিসিন গড়ে তোলার দাবি জানানো হয়েছে। ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন মেয়র অশোক ভট্টাচার্যও।