উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের নির্বাচনী ক্ষেত্রে একটি তৃণমূলের বুথ কার্যালয় আগুনে পুড়ে গিয়েছে। রবিবার নিউ জলপাইগুড়ির ভক্তিনগর এলাকায় গভীর রাতের ঘটনা। দলীয় সূত্রের খবর, এনজেপি এলাকায় তৃণমূল নেতা বিজন নন্দী ওরফে জনের মৃত্যুর পর গোষ্ঠী কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বর্তমানে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র ইউনিট সভাপতি প্রসেনজিৎ রায়ের দাবি, রাতের অন্ধকারের সুযোগে কেউ পেট্রোল বোমা জাতীয় কিছু ছুড়ে দলের কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে থাকতে পারে।
তবে দলের ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি সাংগঠনিক ব্লকের সভাপতি তথা বিজন নন্দীর ভাই জয়দীপ নন্দী দাবি করেছেন, বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। একই বক্তব্য এলাকার তৃণমূল প্রার্থী তথা মন্ত্রী গৌতমবাবুরও। তাঁর কথায়, ‘‘একটি অফিসে
আগুন লেগেছিল বলে শুনেছি। বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে দেখব। পুলিশকেও বলেছি। বোমার খবর আমি জানি না।’’
যদিও শিলিগুড়ি পুলিশের এসিপি (পূর্ব) পিনাকী মজুমদার বলেন, ‘‘একটা বুথ অফিস পুড়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। রাত পর্যন্ত কোনও অভিযোগ হয়নি। তবে কী করে ঘটনাটি ঘটল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ পুলিশের একটি সূত্রের খবর, শর্ট সার্কিট থেকেও আগুন লেগে থাকতে পারে।
পুলিশ ও তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাত দেড়টা নাগাদ ভক্তিনগরে ওই বুথ কার্যালয়ে আগুন লেগে যায়। তার পরেই প্রসেনজিৎবাবু দলের বিভিন্ন মহলে ফোন করে বোমা ছোড়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। প্রসেনজিৎবাবুর বাড়ির নীচে দলীয় অফিস থাকলেও তিনি সেখানে থাকেন না। পাশেই তাঁর শ্বশুরবাড়ি। ঘটনার পরে রাতে খবর পেয়ে তিনি এলাকায় যান। প্রসেনজিৎবাবু জানান, বুথে থাকা একটি টিভি, দু’টি টেবিল ফ্যান, কয়েকটি চেয়ার ও টেবিল পুড়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘কেউ বোমা মেরে থাকতে বলে আশঙ্কা করছি। পুলিশে অভিযোগ জানাব। দলের ব্লক সভাপতি জয়দীপবাবুর দাবি, ‘‘পুরো ব্যাপারটিতে ধোঁয়াশায় রয়েছি। কী হয়েছে, পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।’’
দলীয় সূত্রের খবর, সিপিএমের আমলে পরে তৃণমূল আমলেও বিজন নন্দীর হাতেই এনজেপি এলাকার দখল ছিল। বিরোধীরা বরাবর অভিযোগ করে এসেছে, তেলের চোরা কারবার থেকে রেলের ঠিকাদারি, গাড়ি ব্যবসা থেকে সিন্ডিকেট— সব কিছুতেই শাসক দলের নেতারা জড়িত থাকেন। বিজনবাবুর মৃত্যুর পরে এনজেপি দখল নিয়ে তাঁর অনুগামীদের মধ্যে গোলমাল শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ। শেষে দলীয় নেতৃত্ব মাঝে বসে শ্রমিক সংগঠনটি প্রসেনজিৎবাবুর হাতে ও ব্লক সভাপতি হিসেবে জয়দীপবাবুকে দায়িত্ব দিয়েছেন। সেই সঙ্গে বিজনবাবুর ছেলে রাজা নন্দীও সামনে এগিয়ে এসেছেন। এখন এই তিন জনই এনজেপি-তে তিনটি আলাদা দলীয় দফতর থেকে পৃথক ভাবে দল পরিচালনা করছেন।
তৃণমূলের এনজেপি এলাকার কয়েকজন নেতা জানান, বিজনবাবু একাই সমস্ত সংগঠন, দল দেখাশোনো করতেন। প্রসেনজিৎবাবু তাঁর ছায়াসঙ্গী বা ডানহাত হিসেবেই পরিচিত। আবার ভাই এবং এক বার কাউন্সিলর হওয়ার সুবাদে জয়দীপবাবুও এলাকায় সক্রিয় থাকতেন। কিন্তু কোনও দিনই গোলমাল প্রকাশ্যে আসেনি। এখন তা তলায়-তলায় পুরোদমে শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ। ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকে প্রচার, মিছিল, ঠিক মতো ভোট করা নিয়ে ওই নেতাদের মধ্যে চাপানউতোর চলছে। তা থেকেই বোমা মারার আশঙ্কার বিষয়টি সামনে এসেছে। প্রচার শেষের আগের দিন প্রসেনজিতের নেতৃত্বে গৌতম দেবের সমর্থনে মিছিলে দেখা যায়নি জয়দীপবাবুকে। পর দিনই পাল্টা মিছিল করেন জয়দীপবাবু। সেখানে প্রসেনজিতের অনুপস্থিতি চোখে পড়েছে অনেকেরই। যত দিন যাচ্ছে, কোন্দল তত সামনে এসে পড়ছে। ভোটের ফল বার হওয়ার পরে তা আরও জোরদার হতে পারে, আশঙ্কা ওই নেতাদের।