অগ্নিগর্ভ

ব্যস্ত সকালে হঠাৎ আগুন

গুদামে রাখা প্লাস্টিকের খেলনা ও প্রসাধনী সামগ্রী পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। পুড়ে গিয়েছে গুদাম চত্বরে রাখা ও লাগোয়া রাস্তায় দাঁড় করানো দু’টি ছোট গাড়ি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৪
Share:

ভয়াবহ: আগুন নেভাতে লড়ছেন এক দমকলকর্মী। বুধবার। শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

ঘড়ির কাঁটায় তখন সাড়ে আটটা। বুধবারের ব্যস্ত সকাল। হঠাৎ আগুন আগুন চিৎকারে শোরগোল পড়ে যায় হাকিমপাড়ার স্বামীজি সরণিতে। চিৎকার শুনে আশেপাশের বাড়ি থেকে লোকজন বেরিয়ে দেখেন তিন তলা পর্যন্ত উঁচু হয়ে আগুনের শিখা জ্বলছে গুদামে। লাগোয়া বহুতল ছেড়ে আতঙ্কে বেরিয়ে আসেন বাসিন্দারা। খবর পেয়ে শিলিগুড়ি ও মাটিগাড়া থেকে দমকলের ৬টি ইঞ্জিন যায় ১৫ নম্বরের ওয়ার্ডের ওই এলাকায়। প্রায় আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। যদিও এ দিনই রাত দশটায় ফের ওই জায়গায় ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। খবর পেয়ে আবার দমকল গিয়ে জল দেয়। রাত পর্যন্ত আতঙ্ক কাটেনি স্থানীয়দের মধ্যে।

Advertisement

গুদামে রাখা প্লাস্টিকের খেলনা ও প্রসাধনী সামগ্রী পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। পুড়ে গিয়েছে গুদাম চত্বরে রাখা ও লাগোয়া রাস্তায় দাঁড় করানো দু’টি ছোট গাড়ি। গুদামের উল্টোদিকের বাড়িতে কাজ করেন বাপন ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘গুদামের ভিতর বিদ্যুতের লাইন থেকে স্ফুলিঙ্গ বের হচ্ছিল। লাগোয়া বাড়ি চিকিৎসক কৃষ্ণেন্দু দে’র। ওঁর গাড়ির চালক শঙ্করকে জানাই। চোখের নিমেষে মজুত জিনিসে আগুন ধরে যায়।’’ কৃষ্ণেন্দু জানান, তিনিও শৌচাগারে যাওয়ার সময় গলগল করে ধোঁয়া বার হতে দেখেন। তাঁর গাড়ির চালক শঙ্কর দমকলকে ফোন করেন। অন্তত আধঘণ্টা পরে দমকল পৌঁছয়।

ঘটনাস্থলে পৌঁছন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব, লাগোয়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুজয় ঘটক, ২ নম্বর বরো চেয়ারম্যান প্রদীপ গোয়েল। মেয়র কাজে শহরের বাইরে ছিলেন। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন পুরসভার ডেপুটি মেয়র রামভজন মাহাতো এবং মেয়র পারিষদ জয় চক্রবর্তী। পরে মেয়র বলেন, ‘‘ওই গুদামের কোনও ট্রেড লাইসেন্স ছিল না।’’ বসতি এলাকায় অবৈধ ভাবে গুদাম কী ভাবে চলছিল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisement

যে বাড়িতে গুদাম রয়েছে সেটির মালিক গৌতম দাস। টিনের চালা ঘরটি গুদাম হিসেবে ভাড়া দিয়েছিলেন এক ব্যবসায়ীকে। গুদাম ঘেঁষে থাকা তাঁদের একটি তিনতলা বাড়ির একতলা এবং দোতলাও কাপড়, ওষুধ, প্রসাধন সামগ্রীর গুদাম হিসাবে ভাড়া দেওয়া। গৌতমের স্ত্রী স্বপ্না বলেন, ‘‘গুদামের বৈধ নথি রয়েছে কি না বলতে পারব না।’’ গুদাম ভাড়া নিয়েছিলেন গৌতম দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘দোকানের জিনিস, গাড়ি সব পুড়ে গেল। নথিপত্র কী আছে পরে জানাতে পারব।’’ শিলিগুড়ির ডিভিশনাল ফায়ার অফিসার আশিস কুমার পুততুণ্ড বলেন, ‘‘বৈধ নথি ছাড়া গুদাম থাকলে পুলিশে অভিযোগ জানানো হবে।’’

এ দিন মাটিগাড়ার খাপরাইলের ভাঙাপুলের কাছে একটি থার্মোকল কারখানা পুড়ে ছাই হয়। যন্ত্রাংশ থেকে আগুন লাগে বলে শ্রমিকদের দাবি। দমকলের ৩টি ইঞ্জিন ঘণ্টা দুয়েকের চেষ্টায় আগুন নেভায়। কারখানার ট্রেড লাইসেন্স নেই বলে অভিযোগ। তা অস্বীকার করেছেন মালিক গোবিন্দ আগরওয়াল। মাটিগাড়ার বিডিও রুনু রায় বলেন, ‘‘মালিককে দেখা করতে বলা হয়েছে।’’ এ দিনই বিকেল চারটে নাগাদ শিলিগুড়ির দেশবন্ধুপাড়ায় শ্যামলাল আগরওয়ালের বাড়িতে আগুন লেগে দোতলায় তিনটি ঘর পুড়ে যায়। শ্যামলাল কাঠমান্ডুতে থাকেন। দোতলায় তাঁদের ঘর দীর্ঘ দিন ধরে তালাবন্ধ হয়ে রয়েছে।

ওই বাড়ির নীচের তলায় দু’জন ভাড়াটে থাকেন। তাঁরাই দমকলে খবর দিয়েছিলেন। দমকলের অনুমান শর্ট সার্কিটের জেরে আগুন লেগে থাকতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন