এ ভাবেই দিন কাটছে শিবিরে। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
৮১ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে পাতা খাটিয়া। চার কোণে বাঁশ বেধে টাঙানো মশারি। চড়া রোদে সেই খাটিয়াতেই বসেছিলেন বছর সত্তরের মোজফফর হোসেন। ঘরবাড়ি বন্যার জলে ডুবে যাওয়ায় গত প্রায় ১৫ দিন ধরে এ ভাবেই জাতীয় সড়কের ধারে খোলা আকাশের নীচে দিন-রাত কাটছে ঢিসাল গ্রামের ওই বানভাসি বৃদ্ধ ও তাঁর পরিবারের। বৃষ্টি এলে ভরসা শুধু ছাতা। তাঁর আক্ষেপ, বহু দরবার করেও পঞ্চায়েত বা প্রশাসনের কাছে মাথা গোঁজার একটা ত্রিপল জোটেনি।
মোজফফর সাহেব একা নন, ওই জাতীয় সড়কের ধারে মাগুরা, লস্করপুর, শ্রীপুরের যে হাজারের বেশি বানভাসি এখন রয়েছেন তাঁদের অনেকেরই কপালে ত্রিপল না জোটায় এ ভাবে কার্যত খোলা আকাশের নীচেই কাটছে। ত্রাণ নিয়েও তাঁদের ক্ষোভ। প্রথমে শুকনো ও রান্না করা খাবার মিললেও এখন কেউ আর খোঁজই নেয় না। চারদিক এখনও জলে থইথই করায় কোথাও কাজ নেই, তারপর ত্রাণ না মেলায় তাঁদের দুর্দশা চরমে।
দিন পনেরো আগে খানপুরে মহানন্দার বাঁধ ভেঙে বন্যা হয়ে যায় রতুয়া ২ ব্লকের শ্রীপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা। ওই পঞ্চায়েতের মাগুরা, ঢিসাল, লস্করপুর, বল্লভপুর, শ্রীপুর, মিলনপল্লি গ্রামগুলির বাসিন্দারা কেউ আশ্রয় নেন লস্করপুর হাইস্কুল, কেউ শ্রীপুর হাইস্কুল বা কেউ মাগুরা জুনিয়র হাইস্কুলে। কিন্তু স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় বেশিরভাগ বানভাসিই আশ্রয় নেন ৮১ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে। কেউ পুরোনো শতছিদ্র ত্রিপল টাঙিয়ে, কেউ পঞ্চায়েতের তরফে ত্রিপল পেয়ে মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু ওই এলাকাগুলির অসংখ্য বাসিন্দা রয়েছেন যাঁদের কপালে পঞ্চায়েতের তরফে একটিও ত্রিপল জোটেনি। এই ক্ষোভে পঞ্চায়েত দফতরে কিছুদিন আগে তুমুল গোলমালও হয়। নিগৃহীত করা হয় জয়েন্ট বিডিওকে। সেই সমস্ত পরিবারই খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন এখন।
বয়সের ভাড়ে নুব্জ্য মোজফফর হোসেন বললেন, ‘‘একটা ত্রিপলের জন্য পঞ্চায়েত অফিসে গিয়েছিলাম। কিন্তু মেলেনি। ঘরে একটা ছেঁড়া ছোট পলিথিন ছিল তা দিয়ে আসবাবপত্র গুলি ঢেকে রেখেছি। আর স্ত্রী, কন্যা নিয়ে খাটিয়ায় খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাচ্ছি। আমার কাঁচা ঘরও বন্যার জলে ভেঙে পড়েছে। এখন কী করে যে থাকব তা খোদা ভরসা।’’ একই হাল তাঁর প্রতিবেশী রুকসানা বিবির। তিনিও ত্রিপল পাননি। তাই বাঁশ বেধে খাটিয়ার ওপর ছেঁড়া একটি পলিথিনের আচ্ছাদন দিয়েছেন। পরিবার নিয়ে সেখানেই দিন কাটছে। ত্রিপল নিয়ে ক্ষোভ মাগুরায় জাতীয় সড়কের পাশে থাকা কর্ণ মণ্ডল, তুলসি মণ্ডল, পরেশ মাঝিদেরও। তাঁরাও জানান, মাথা গোঁজার মতো কোনও ব্যবস্থা না থাকলেও পঞ্চায়েতের তরফে কোনও ত্রিপল তাঁরা পাননি। শুধু কী তাই, তাঁরা বলেন, ‘‘আশ্রয় নেওয়ার পরপর সরকারিভাবে চিড়ে-গুড় কয়েকদিন পেয়েছি, বেসরকারি বহু সংস্থা রান্না করা খাবারও দিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখন কেউই আর খোঁজ নেয় না। পঞ্চায়েতের প্রধান আনসারিয়া খাতুন বলেন, ‘‘এলাকায় বানভাসি বাসিন্দা পাঁচ হাজারের বেশি, সেখানে ত্রিপল পেয়েছি ১২০০। ফলে সকলকে বিলি করা যায়নি। ব্লক থেকে এখন আর শুকনো খাবার সরবরাহ করছে না। আমরা অসহায়।’’