বাচ্চাদের নিয়ে আশ্রয় স্টেশনেই

প্রথম দিন মালদহ রেল স্টেশনের ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে কাটলেও রেলপুলিশ পর দিন তাঁদের খেদিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ। তারপর আশ্রয় নিয়েছিলেন স্টেশন সংলগ্ন একটি পানীয় জলের রিজার্ভারের নীচে। কিন্তু সেখান থেকেও তাঁদের হঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। রবিবার তাঁরা ঠাঁই নিয়েছেন মালদহ রেলওয়ে ইন্সটিটিউটের বারান্দায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৭ ০৭:০০
Share:

দুর্ভোগ: মালদহ রেলওয়ে ইন্সটিটিউটের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর রামনগরের বানভাসিরা। নিজস্ব চিত্র

ঘরবাড়ি জলে ডুবেছে দিন দশেক আগে। তারপর হরিশ্চন্দ্রপুর স্টেশনেই তাঁরা ঠাঁই নিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে সে ভাবে ত্রাণ না মেলায় আধপেটা খেয়েই দিন কাটছিল। সেখানেই শুনেছিলেন, মালদহ জেলা সদরে বানভাসিদের নাকি ভালো খাবার-দাবার মিলছে। আর তাই, শুক্রবার কাটিহার-মালদহ প্যাসেঞ্জার ট্রেন ধরে সটান সদরে এসে হাজির হয়েছেন হরিশ্চন্দ্রপুর রামনগর গ্রামের ৮টি পরিবার। এদের মধ্যে রয়েছেন একজন ন’মাসের গর্ভবতীও। কিন্তু সদরে এসে তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন?

Advertisement

তাঁরাই জানালেন, প্রথম দিন মালদহ রেল স্টেশনের ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে কাটলেও রেলপুলিশ পর দিন তাঁদের খেদিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ। তারপর আশ্রয় নিয়েছিলেন স্টেশন সংলগ্ন একটি পানীয় জলের রিজার্ভারের নীচে। কিন্তু সেখান থেকেও তাঁদের হঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। রবিবার তাঁরা ঠাঁই নিয়েছেন মালদহ রেলওয়ে ইন্সটিটিউটের বারান্দায়।

ওই ৮টি পরিবার ব্যাধ সম্প্রদায়ের। সংখ্যায় ২৭ জন, ১১ জনই শিশু। তাঁরা জানালেন, এখন মধু চাষ ও মধু সংগ্রহ করেই জীবনযাপন করেন। বন্যায় সেই মধু সংগ্রহও থমকে। তাঁদের বেশিরভাগেরই মাটির বাড়ি। সে সব জলে ডুবে রয়েছে। জল যখন গ্রামে ধেয়ে আসে তখন জীবন বাঁচাতে তাঁরা ঘর কোনও রকমে তালাবন্ধ করে আশ্রয় নিয়েছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুর স্টেশনে। অশোক ব্যাধ, সিংহাসন ব্যাধ, পারুল ব্যাধ, মমতা ব্যাধ, বিলো ব্যাধরা বলেন, এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে ঘরের কোনও আসবাবপত্র বের করা যায়নি। ছেলেমেয়েদের জামাকাপড়ও সে ভাবে বের করা যায়নি। প্রথমে একটি স্কুলে চলা ত্রাণ শিবিরে গিয়েছিলাম, কিন্তু সেখানে ঠাঁই মেলেনি। সেখানে আগে থেকেই সমস্ত ঘর বানভাসিদের দখলে চলে যায়। তারপরই স্টেশনে আসা। সাত দিন সেই স্টেশনেই কেটেছে। প্রশাসনের তরফে কোনও ত্রাণই সেখানে মেলেনি। কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেখানে শুকনো খাবার দিচ্ছিল।

Advertisement

এ দিন দুপুরে গিয়ে দেখা গেল সকলেই সেই ইন্সটিটিউটের বারান্দায় বিষন্ন মুখে বসে রয়েছেন। খালি গায়ে থাকা শিশুগুলোর মুখও শুকনো। বিকেলের দিকে দু’টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাঁদের শুকনো খাবার ও শিশুদের জন্য দুধের প্যাকেট দিয়েছে শুধু। এলাকার কাউন্সিলার নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি বলেন, ‘‘শুনেছি কয়েকটি বানভাসি পরিবার রেলওয়ে ইন্সটিটিউটে আশ্রয় নিয়েছে। তাঁদের ত্রাণ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’’ রেলের এক কর্তা জানান, বিষয়টি দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন