ধান বিক্রি করতে শিবির শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। কিন্তু চাষিদের হাজিরা সেখানে নামমাত্র। তাই এ বার হোয়াটসঅ্যাপে চাষিদের ডাক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য ও সরবরাহ দফতর। তবে ধানের দাম মনোমত না হলে সেই ডাকে সাড়া মিলবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
নভেম্বরের শুরু থেকে শিলিগুড়ি মহকুমার দু’টি কেন্দ্রে কৃষকদের থেকে ধান কিনতে শিবির শুরু করেছে খাদ্য ও সরবরাহ দফতর। প্রথম এক সপ্তাহ কেউ যোগাযোগই করেনি। দু’সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পরে এখনও মাত্র ৬৩ জন কৃষক শিবিরে নাম লিখিয়েছেন। ধান নিয়ে শিবিরে আসেননি কেউই। কিন্তু যে ভাবেই হোক আগামী মার্চের মধ্যে ধান বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতেই হবে, বলে জানাচ্ছেন দফতরের কর্তারা। তাই এই তোড়জোড়।
দার্জিলিং জেলার খাদ্য নিয়ামক মানিক সরকারের কথায়, ‘‘ফার্মাস ক্লাবগুলির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। কৃষকদের যাঁদের হোয়াটসঅ্যাপ রয়েছে সেখানেও বার্তা পাঠানো হবে। মোট কথা, সব কৃষকদের কাছে সরাসরি ধান কেনার কথা পৌঁছে দেওয়া হবে বলে স্থির হয়েছে।’’ দফতরের কর্তাদের দাবি, খোলা বাজারে ধান বিক্রি করলে চাষিদের দামে মার খেয়ে হয়। মহাজনেরাও পরিমাণের গন্ডগোলে লাভের অঙ্ক কমিয়ে দেন বলে কৃষকদের ক্ষোভ রয়েছে। একশ্রেণির মধ্যবর্তী কারবারিরা নানাভাবে সরকারি শিবিরে ধান নিয়ে যেতেও বাধা দেয় বলে অভিযোগ। কৃষকদের থেকে দালালরা কম দামে দান কিনে সরাসরি শিবিরে চড়া দামে বিক্রি করেছে এমন ঘটনাও ফাঁসিদেওয়া, বিধাননগরের নানা এলাকায় গত বছরে হয়েছে বলে দফতরের কর্তাদের দাবি। সে সব রুখতে এবার সরাসরি কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দফতরের দাবি।
তবে ডাক যেভাবেই পাঠানো হোক না কেন, লাভ না হলে চাষিরা সরকারি শিবিরে ধান বিক্রি করবেন কেন সেই প্রশ্ন উঠেছে। কুইন্টাল পিছু সহায়ক মূল্য প্রায় দেড় হাজার টাকা করে ধার্য করেছে সরকার। শিলিগুড়ির খোলাবাজারে ধানের দাম তার থেকে বেশি। সরকারি তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, মরসুমের শুরুতে ধানের দাম খোলাবাজারে বেশি থাকে। কয়েকদিন পরেই খোলাবাজারে দাম পড়তে থাকে। সে সময় কৃষক যাতে অভাবি বিক্রি করতে না পারে তার জন্য সহায়ক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। খাদ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘আশা করছি জানুয়ারি মাস থেকে কৃষকরা শিবিরে আসবেন।’’
নকশালবাড়ির কৃষক সরিফুল হোসেন অবশ্য বলেন, ‘‘ধান কাটা সবে শুরু হয়েছে। এরপর ঝাড়াই-মাড়াই বাকি আছে। তারপর বিক্রির প্রশ্ন। সে সময় সরকার যা দাম দিচ্ছে তার থেকে বাজার দর বেশি থাকলে, খোলা বাজারেই বিক্রি করব।’’ ফাঁসিদেওয়ার কৃষক নবীন রায়ও বলেন, ‘‘ধান বিক্রি আরও দিন পনেরো পরে। তখন সহায়ক মূল্যের সঙ্গে বাজারদরের কেমন তফাত হয় দেখেই সিদ্ধান্ত নেব। তবে সহায়ক মূল্য এ বার অনেকটাই কম।’’