মাটি কামড়েই জয়ী উদয়ন, দীপা

রুখে দাঁড়িয়েই জয় মিলল দিনহাটায়

‘কাকু আর প্রচার করবেন না। বাড়ি চলে যান।’ –ঠিক যেন মাস্টারমশাইকে ভয় দেখানোর ঢংয়েই শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল কোচবিহারে। যার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তৃণমূলের অন্দরের খবর, তাতে কাজও হাসিল হয়েছে অনেকটা। মাথাভাঙা ও তুফানগঞ্জ পুরসভা দখল করেছে তৃণমূল। কোচবিহার সদরেও সব থেকে বেশি আসন পেয়েছে শাসক দল।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪৪
Share:

‘কাকু আর প্রচার করবেন না। বাড়ি চলে যান।’ –ঠিক যেন মাস্টারমশাইকে ভয় দেখানোর ঢংয়েই শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল কোচবিহারে। যার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তৃণমূলের অন্দরের খবর, তাতে কাজও হাসিল হয়েছে অনেকটা। মাথাভাঙা ও তুফানগঞ্জ পুরসভা দখল করেছে তৃণমূল। কোচবিহার সদরেও সব থেকে বেশি আসন পেয়েছে শাসক দল। ফরওয়ার্ড ব্লকের একাংশের দাবি, দিনহাটায় গিয়ে সেই আতঙ্ক ‘পাল্টা দাওয়াই’-এর নিদান দিয়ে একাই রুখে দিয়েছেন উদয়ন গুহ।

Advertisement

কী সেই দাওয়াই? দলীয় সূত্রের খবর, ইটের বদলে পাটকেলের। তৃণমূল একটা মারলে দাওয়াই ছিল দশটা মারার। তৃণমূল একটা পতাকা ছিঁড়লে দাওয়াই ছিল দশটা পতাকা ছিঁড়ে দেওয়ার। ভোটের দিন বহিরাগতরা পুরসভা এলাকায় ঢুকলে যাতে বেরোতে না পারে সে জন্যও ছিল যাবতীয় প্রস্তুতি। বিরোধীদের অভিযোগ, ফরওয়ার্ড ব্লকের পক্ষ থেকে টাকাও বিলি হয়েছে দেদারে।

উদয়নবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ‘অসত্য’ বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “শাসক দলের সঙ্গে আমরা সন্ত্রাস ও টাকা দিয়ে পেরে উঠব এমনটা কেউ বিশ্বাস করবে না। আসলে রবীন্দ্রনাথবাবু দিনহাটায় হেরে গিয়ে নিজের মুখ রক্ষায় এমন কথা বলছেন।”

Advertisement

তৃণমূল অবশ্য দাবি করেছে, বাম জমানা থেকেই দিনহাটায় উদয়নবাবুদের ‘দাদাগিরি’ রয়েছে। তৃণমূল ক্ষমতায় এলেও তা শেষ করা দেওয়া যায়নি। এমনকি পুলিশ-প্রশাসনের লোকেরাও তাঁকে সমীহ করে চলেন। পুরভোটেও উদয়ন সে পথেই হেঁটেছেন। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “দিনহাটায় উদয়নবাবুরা টাকা বিলি করেছেন। সাধারণ ভোটারদের প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে আরও নানা কাজ করেছেন। সে সব খবর আমাদের কাছে আছে। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে সন্ত্রাসের অভিযোগ এনে নিজেরাই মানুষকে সন্ত্রস্ত করে রেখেছিলেন। না হলে এমন ফল হয় না।”

মঙ্গলবার পুরসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর দেখা যায় কোচবিহার সদরে ২০ টি আসনের মধ্যে ১০ টি পেয়েছে তৃণমূল। বামেরা পেয়েছে ৮ টি আসন। নির্দল ২টি আসনে জয়ী হয়েছে। মাথাভাঙায় ১২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ৯টি আসন। বামেরা পেয়েছে ২টি। ১টি আসনে জয়ী হয়েছে বিজেপি। তুফানগঞ্জে ১২টি আসনের মধ্যে ৯টি পেয়েছে তৃণমূল। বামেরা পেয়েছে ৩টি আসন। মাথাভাঙা ও তুফানগঞ্জ বামেদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। দিনহাটায় গিয়ে অবশ্য তৃণমূলের এই বিজয় রথ থমকে গিয়েছে। দিনহাটার ১৬ টি আসনের মধ্যে ১৩ টি পেয়েছে বামেরা। তৃণমূল পেয়েছে ৩ টি আসন।

ভোট প্রক্রিয়া শুরু হতেই রবীন্দ্রনাথবাবুর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের পরিস্থিতি তৈরি করার অভিযোগ তুলে সরব হন বিরোধীরা। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সামনে দলের নেতা-কর্মীদের প্রশাসনিক আর অন্য যে সব মদতের প্রয়োজন হবে তা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়ার অভিযোগ ওঠে রবীন্দ্রনাথবাবুর বিরুদ্ধে। তুফানগঞ্জে সিপিএম প্রার্থী সুভাষ ভাওয়াল প্রচারে বোরোলে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। কয়েকজন তৃণমূল কর্মী সুভাষবাবুকে ঘিরে ধরে বলেন, “কাকু আর প্রচার নয়। এ বার বাড়ি ফিরে যান।”

এ ছাড়াও দলীয় অফিস ভাঙচুর। বিরোধী দলের কর্মীদের মারধর থেকে শুরু করে নির্বাচনের দিন বিরোধী দলের এজেন্টদের বুথ থেকে বের করে দেওয়ার মতো অভিযোগ ওঠে। দিনহাটাতেও অভিযোগের কমতি ছিল না। ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মীদের মারধর। দলীয় কার্জালয়ে হামলা থেকে শুরু করে ভোটের দিন ক্যাম্প অফিস ভেঙে দেওয়ার মতো অভিযোগ ওঠে।

দলীয় সূত্রের খবর, শাসক দলের এই সন্ত্রাসের সঙ্গে পাল্লা দিতেই উদয়নবাবু দলীয় কর্মীদের নিয়ে একাধিক বৈঠকে সামিল হন। গত ২৩ এপ্রিল ভোটের দুই দিন আগেও বাছা বাছা কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে তৈরি থাকতে নির্দেশ দেন সকলকে। সেই বৈঠকগুলিতে তাঁর স্পষ্ট দাওয়াই ছিল, সন্ত্রাস রুখতে পাল্টা ঝাঁপিয়ে পড়ার। উদয়নবাবুর ওই মনোভাবেই কর্মীদের কেউ পিছু হঠেননি। হামলা হতেই থানায় অভিযোগ দায়ের করে ফের নিজের এলাকায় সংঘবদ্ধ হয়ে বেরিয়েছেন তাঁরা। যা দেখে পিছু হটেছে শাসক দল। বামফ্রন্টের এক নেতার কথায়, “এটা সন্ত্রাস নয়। প্রতিরোধ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন