শহরে চার নেতার চারটি অফিস রয়েছে। বিধায়ক আবু নাসের খান চৌধুরী এসে কোন অফিসে বসবেন? নাকি তিনিও আরেকটি নতুন অফিস খুলবেন?
শনিবার সুজাপুরের বিধায়ক আবু নাসের (লেবু) তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে মালদহ জেলা তৃণমূলের অন্দরে তো বটেই ইংরেজবাজারের রাজনৈতিক মহলেও চলছে এই ‘পার্টি-অফিস জল্পনা’। তবে তৃণমূলের কর্মীদের একাংশের দাবি, লেবুবাবু তো শুধু বিধায়ক নন জেলার অবিংসবাদী নেতা প্রয়াত গনিখান চৌধুরীর ভাই-ও। তিনি দলে আসায় জেলায় ‘ওজনদার’ নেতার সংখ্যা বাড়ল এবং তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে একাধিকবার রাজ্যের চর্চায় উঠে আসা মালদহ জেলাতেও শাসক দলের গোষ্ঠী সমীকরণে নতুন মেরু যোগ হল বলেই তাঁদের দাবি। এতদিন কোতুয়ালি ভবনে বসেই কংগ্রেসের এবং নিজের বিধায়কের কাজকর্ম সারতেন লেবুবাবু। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরেও অন্য পথে হাঁটবেন তেমন কোনও ইঙ্গিত এ দিন অন্তত লেবুবাবুর থেকে পাওয়া যায়নি। সে কারণেই মালদহের রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, পার্টি অফিসের রাজনীতিতে কোতুয়ালি ভবন নতুন সংযোজন হতে চলেছে।
তৃণমূল নেতাদের অবশ্য দাবি, জেলায় কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। কাজের সুবিধের কারণেই একাধিক পার্টি অফিস রয়েছে। জেলা সভাপতির একটি কার্যালয়ও রয়েছে। খাতায় কলমে সেটিই জেলা অফিস। যদিও, অন্য নেতাদের সেই পার্টি অফিসে পা পড়ে না বলে সাধারণ কর্মীদের অভিযোগ। ইংরেজবাজারের কার্নি মোড়ে একটি আবাসনের নীচে ঘরে বসেই দলীয় কাজকর্ম সারেন জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি দুলাল সরকার। শহরের সদরঘাটে নিজের বাড়িতে বসে দলীয় কাজ করেন রজ্যের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। রাজ্যের আরেক মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর কালীতলা এলাকায় পৃথক কার্যালয় রয়েছে। গত লোকসভা ভোটে মালদহ জেলাতে দলের ভরাডুবির পরে সাবিত্রী মিত্রকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি দায়িত্ব থেকে সরিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেনকে দেওয়া হয়। দায়িত্ব পেয়েই শহরের সুকান্ত মোড়ে নতুন একটি অফিস খোলেন মোয়াজ্জেম হোসেন। সেখানে অবশ্য একদিনের জন্যও সাবিত্রী-কৃষ্ণেন্দু-দুলালবাবুদের দেখা যায়নি।
তবে দল সূত্রে খবর, জেলার গোষ্ঠীদ্বন্দের খবর বিলক্ষণ জানেন রাজ্য নেতৃত্বও। লোকসভা ভোটের আগে জেলা সফরে মালদহে এসে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে নেতা-নেত্রীদের এক সঙ্গে কাজ করা বার্তা দিয়েছিলেন। সেই বার্তার পরেও অবশ্য দলের গোষ্ঠী সমীকরণ বদলায়নি বলে সাধারণ কর্মীদের একাংশের অভিযোগ। লেবুবাবু অবশ্য বলছেন উত্তর, ‘‘জেলায় ফিরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। দল যে ভাবে আমাকে কাজ করতে বলবে, সে ভাবেই কাজ করব।’’
তৃণমূলের অন্দরের খবর, একে গনি পরিবারের সদস্য, তায় বিধায়ক হওয়ার সুবাদে লেবুবাবুর নিজস্ব অনুগামী বৃত্ত রয়েছে। কোতুয়ালি ভবনেরও আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। লেবুবাবুর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি কংগ্রেসে থাকাকালীন দলীয় কার্যালয়ে তেমন যেতেন না। কোতুয়ালি ভবনে নিজস্ব ভবনে বসেই অনুগামীদের নিয়ে বসতেন। সেখান থেকে তিনি কাজ করতেন। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরেও নিজস্ব ভবনে বসে দলের কাজকর্ম করবেন বলে জানিয়েছেন তাঁর অনুগামীরা। তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘‘জেলায় কোনও গোষ্ঠী নেই। লেবুবাবু যোগ দেওয়াতে জেলায় তৃণমূল আরও শক্তিশালী হবে।’’ রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর কথায়, ‘‘কালীতলাতে আমি বসেই এতদিন কাজ করে এসেছি। এটা আমার কার্যালয় না। এখানে মানুষ আমার কাছে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসে, আমি সেই সমস্যার কথা শুনি। লেবুবাবুর মতো নেতা দলে আসলে আমরা শক্তিশালী হব।’’ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের কথায়, ‘‘আলাদা কার্যালয় যেটা বলা হয়, সেটা আমার বাড়ির-ই নীচের ঘর।’’ তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি দুলাল সরকারের মন্তব্য, ‘‘পৃথক জায়গায় বসলেও আমরা সকলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক।’’
লেবুবাবু মালদহে পৌঁছনোর পরেই দলের অফিস সমীকরণ কোনদিকে গড়ায় তা জানা যাবে।