বক্সার জঙ্গলে সাফারি। ফাইল চিত্র
জয়ন্তীতে হোটেল ও লজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ আদালত। তার পরেও কী ভাবে পূর্ত দফতরের পরিদর্শন কুঠি তৈরি হচ্ছে, তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারাই এখন প্রশ্ন তুলছেন। পরিবেশবিদেরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। সকলেরই বক্তব্য, এটা কী ভাবে সম্ভব হল? বিষয়টির দায়িত্ব নিতে চাইছে না বন দফতর এবং জেলা প্রশাসন— কেউই। বরং তারা একে অন্যের ঘাড়ে দায় ঠেলতে চাইছে।
পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তের একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পরিবেশ আদালত সম্প্রতি বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের মোট ৬৯টি সরকারি ও বেসরকারি লজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ অক্টোবর থেকে অধিকাংশ লজ-হোটেল বন্ধ। সুভাষ দত্ত বলেন, “পূর্ত দফতরের এই পরিদর্শন কুঠিটি কেন বন দফতরের নজর এড়িয়ে গেল, বুঝতে পারছি না। তার নির্মাণ কাজই বা কেন চলছে?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। আমি জাতীয় পরিবেশ আদালতে ওই পরিদর্শন কুঠি ভাঙার জন্যও আবেদন করব।’’
বাসিন্দাদের একাংশ অভিযোগ করেন, যেখানে বন দফতর, পর্যটন দফতর ও সাধারণ লজ-হোটেল সব বন্ধ রাখা হয়েছে, সেখানে পূর্ত দফতরের বিশাল পরিদর্শন বাংলো তৈরি হচ্ছে কী ভাবে? জয়ন্তীর মতো জায়গায় কংক্রিটের এ ধরনের নির্মাণ সম্পূর্ণ বেআইনি, জানালেন বন দফতরের এক আধিকারিকও।
এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডিএফডি প্রদীপ বাউরি জানান, তিনি মাসদুয়েক আগে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে এসেছেন। পূর্ত দফতরের ওই বাংলো তৈরি বিষয়টি তাঁর জানা নেই। এক বনকর্তার আবার দাবি, জাতীয় পরিবেশ আদালত তো শুধু বন দফতরকে নির্দেশ দেননি। সেই নির্দেশ তারা জেলাশাসকলের দফতরেও পাঠিয়েছে। তা হলে তারাই বা পদক্ষেপ করবে না কেন? আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক দেবীপ্রসাদ করনম আবার জানান, জঙ্গলে কোনও কিছু হলে তা দেখার বিষয় বন দফতরের।
পূর্ত দফতরের আলিপুরদুয়ারের কার্যনির্বাহী বাস্তুকার প্রদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় জানান, জায়গাটি তাঁদের দফতরের। ইংরেজ আমলে তাঁদের বাংলো ছিল। সেটাই ঢেলে সাজা হচ্ছে। তা ছাড়া পরিবেশ আদালতের কোনও নির্দেশও তাঁরা পাননি। পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আটটি ঘর থাকছে এই পরিদর্শন বাংলোয়। তার মধ্যে রয়েছে এসি ঘরও। প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হচ্ছে এই কুঠি।
অভিযোগ অবশ্য অন্য হোটেলগুলির বিরুদ্ধেও রয়েছে। বাসিন্দাদের একাংশ জানান, এখনও কিছু ব্যবসায়ী রাতে জয়ন্তীতে পর্যটকদের রাখছেন। আগামী ২২ নভেম্বর জাতীয় পরিবেশ আদালতে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প লজ ও হোটলে নিয়ে পরবর্তী শুনানি রয়েছে।