জলসার আসর থেকে বাড়িতে পৌঁছনোর নাম করে এক তরুণীকে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগে এক যুবককে মারধরের পরে পুলিশের হাতে তুলে দিল জনতা। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের কণুয়া রহমতপুর এলাকায় বুধবার রাতে ওই ঘটনাটি ঘটেছে। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত আর এক যুবক পালিয়ে গিয়েছে। ওই তরুণীর বাড়ির লোকের দাবি, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, পুলিশের কয়েকজনের যোগসাজশে ওই জলসা ও জুয়ার আসর চলছিল। পুলিশ জানিয়েছে, ওই তরুণীর মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয়েছে। মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক মোদী বলেছেন, “তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যজনের খোঁজ চলছে। পুলিশের মদতে জলসা ও জুয়ার আসরকে ঘিরে যে অভিযোগ উঠেছে, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম মাসুদ আলি। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত পলাতক যুবকের নাম ফিরোজ আলি। তারা সম্পর্কে দুই ভাই। ওই তরুণীর বাড়িও কাছাকাছি। তাঁর মা-বাবা নেই। ওই পরিবারটি শুধু উচ্চবিত্তই নয়। এলাকার স্কুল, মাদ্রাসায় সহায়তা সহ বিভিন্ন সামাজিক ক্ষেত্রে পরিবারটির যথেষ্ট অবদান থাকায় সকলের পরিচিত। ৩ বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে ওই তরুণী মেজো। তিনি স্নাতক। তাঁর দাদাও মানসিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ নন। তবে বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গেই থাকেন তরুণীটি। বাড়ি থেকে ৫০০ মিটার দূরে এলাকাতেই গত দুসপ্তাহ ধরে চলতে থাকা ওই জলসায় রাতে হাজির হন তরুণী। সেখানে হাজির ছিল অভিযুক্ত দুই যুবকও। দু’জনেই পেশায় শ্রমিক। মাঝে মধ্যে ভিনরাজ্যেও কাজে যায় তারা। জলসাতেই তরুণীর সঙ্গে ভাব জমিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার নাম করে সাইকেলে চাপিয়ে সেখান থেকে কিছুটা দূরে হরিশ্চন্দ্রপুরের একটি মাঠে ওই তরুণীকে নিয়ে যায় তারা।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও তরুণীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, মাঠ লাগোয়া এলাকায় তরুণীর দিদির বিয়ে হয়েছে। রাতে তরুণীকে সাইকেলে চেপে যেতে দেখেন কয়েকজন বাসিন্দা। ঘটনাচক্রে, ওই বাসিন্দাদের সঙ্গে দেখা হয় তরুণীর জামাইবাবুর। কিন্তু তিনি গিয়ে দেখেন, ওই তরুণী তাঁর বাড়িতে যাননি। বাড়িতে তাকে না পেয়ে শুরু হয় খোঁজ। মাঠে মুখে কাপড় গুঁজে তরুণীকে ধর্ষণের সময় গোঙানির আওয়াজ শুনে সেখানে হাজির হতেই অন্ধকারে ফিরোজ পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। ধরা পড়ে যায় মাসুদ। রাতে তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়লেও সে হাসপাতালে যেতে রাজি হয়নি। তার পর এদিন দুপুরে তাকে নিয়ে থানায় যান তরুণীর কাকা। তিনিই পুলিশে অভিযোগ জানান। তরুণীর কাকা বলেন, “ও নিজের মর্জি মতো চলাফেরা করে। কিন্তু কেউ যে ওর এমন সর্বনাশ করতে পারে ভাবতে পারছি না।” এদিকে যে জলসাকে ঘিরে ঘটনার সূত্রপাত তা নিয়ে এদিনও ক্ষোভে ফুঁসছেন বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, একশ্রেণির জুয়ারি ওই জলসা চালায়। প্রথমে তারা হরিশ্চন্দ্রপুরের রহমতপুরে আসর বসায়। কিন্তু প্রথম দিন রাতেই হরিশ্চন্দ্রপুর থানা তাদের তাড়িয়ে দেয়। অথচ দু’সপ্তাহ ধরে চাঁচল থানার পুলিশ সব জেনেও নিশ্চুপ ছিল কেন তা নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন। চাঁচলের আইসি তুলসিদাস ভট্টাচার্যের দাবি, “জলসার বিষয়টি জানা ছিল না।”