হন্যে হয়ে রক্ত জোগাড় মন্ত্রীর

সরকারি বৈঠক শেষ হতে না হতেই রয়েছে দলের ঠাসা কর্মসূচি। এরই মাঝে খবর পেলেন প্রৌঢ়া স্ত্রীর অস্ত্রোপচারের জন্য রক্ত খোঁজে সকাল থেকে হন্যে হয়ে ঘুরছেন দর্জির দোকানের এক কর্মী।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪১
Share:

সরকারি বৈঠক শেষ হতে না হতেই রয়েছে দলের ঠাসা কর্মসূচি। এরই মাঝে খবর পেলেন প্রৌঢ়া স্ত্রীর অস্ত্রোপচারের জন্য রক্ত খোঁজে সকাল থেকে হন্যে হয়ে ঘুরছেন দর্জির দোকানের এক কর্মী। এবি নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত না পেলে জরায়ুর জটিল অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়। আর বুধবার দুপুরে তা জানতে পেরেই সরকারি বৈঠক ফেলেই রক্ত জোগাড় করতে ফোনে ঝড় তুললেন পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব। ঘণ্টাখানেকের চেষ্টার পর জানা গেল শিলিগুড়ির জ্যোতিনগরের বাসিন্দা এক ছাত্রের ওই গ্রুপের রক্ত রয়েছে। কিন্ত সে এখন হাসিমারায়। আপ্ত সহায়ককে দিয়ে মন্ত্রী ওই ছাত্রকে অনুরোধ করে রক্ত দিতে রাজি করালেন। তাতেও নিশ্চিন্ত না হয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ব্লাড ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলে আরও এক ইউনিট রক্তের ব্যবস্থা করলেন মন্ত্রী নিজেই।

Advertisement

৮ অগস্ট উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছে মাটিগাড়ার বাসিন্দা ঝর্ণা চৌধুরীকে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, দ্রুত অস্ত্রোপচার করে জরায়ু বাদ দিতে হবে। না হলে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। অস্ত্রোপচারের জন্য অবশ্যই অন্তত দুই ইউনিট রক্ত জোগাড় করে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয় পরিবারকে। ঝর্ণাদেবীর স্বামী অজিতবাবু পেশায় দর্জি। একটি দোকানে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করেন। প্রতিদিন কাজও মেলে না বলে দাবি। মাটিগাড়ার বাড়ি ভাড়া জোগান অসমের বাসিন্দা তাঁর জামাই বাবলা ধর। তিনি রক্ত দিয়ে মেডিক্যাল কলেজ থেকে এক ইউনিট এবি নেগেটিভ রক্ত জোগাড় করেন। মেডিক্যাল কলেজে সেটাই শেষ বোতল ছিল বলে জানানো হয়। তারপরেই শুরু হয় এক নার্সিংহোম থেকে অন্য নার্সিংহোমের দরজায় কড়া নাড়া।

দুপুর তিনটে নাগাদ শিলিগুড়ি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়েও ওই গ্রুপের রক্ত না পেয়ে সামনে বেঞ্চেই বসে পড়েন অজিতবাবু এবং তাঁর জামাই। সরকারি কর্মীদের কাছে বারবার রক্তের জন্য অনুরোধ করতে থাকেন তাঁরা। দালালরা ইতিমধ্যেই রক্তের টোপ দিয়ে তাঁদের থেকে কিছু টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে আক্ষেপও করেন। সে খবরই পৌঁছায় মন্ত্রীর কানে।

Advertisement

এ দিন সকাল থেকেই মৈনাক পর্যটন কেন্দ্রে নিজের দফতরে তিন জেলার জেলাশাসক সহ পদস্থ কর্তাদের নিয়ে ম্যারাথন মিটিং ছিল মন্ত্রীর। খবর পেয়ে আলোচনা থামিয়ে হাসপাতাল, বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্তা, দলের ছাত্র-যুব নেতা এমনকী নিজের দফতরের সচিবদেরও জনে জনে ফোন করতে শুরু করলেন মন্ত্রী। অন্যদিকে তাঁর আপ্তসহায়ককে নির্দেশ দিয়ে ঝর্ণাদেবীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে তাঁদের আশ্বাস দেন। দার্জিলিং জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি বিকাশ সরকারও ফোন করেছিলেন ওই পরিবারের সদস্যদের। তিনি বলেন, ‘‘পরিবারটি খুব গরিব। রক্ত বা অন্য কিছুর অভাবে অস্ত্রোপচারে যাতে বাধা না আসে তা দেখতে মন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।’’ ওই পরিবারকে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কবির আলির ফোন নম্বর পাঠানো হয় মন্ত্রীর দফতর থেকে। কবির বলেন, ‘‘পর্যটন মন্ত্রী আপ্তসহায়কের মাধ্যমে আমাকে অনুরোধ করেছিলেন। আমি আগামীকাল রক্ত দিতে শিলিগুড়ি যাব।’’

অস্ত্রোপচার নিয়ে দিনভরের অনিশ্চয়তা কেটেছে। সন্ধ্যায় ঝর্না দেবীর নাতনি বান্টি বলেন, ‘‘মন্ত্রীর দফতর থেকে বিকেলে প্রথম ফোনটা এসেছিল। তার পর থেকে বারেবারে ফোন এসএমএস এসেছে। ঠাকুমার অস্ত্রোপচার ভালভাবে মিটে যাক, মন্ত্রীকে গিয়ে প্রণাম করে আসব।’’ অন্যদিকে, মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘দুই ইউনিট রক্তের ব্যবস্থা করেছি। আগামী কাল শহরে থাকব না। ওই রোগীর যাতে কোনও সমস্যা না হয় তার জন্য একজনকে দায়িত্ব দিয়েছি। আমার জায়গায় অন্য কেউ হলেও এমনই করতেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement