CPM

দুই শহরের সৌজন্য মেনেই বামের পাশে গৌতম

এই সৌজন্যের ধারা মেনেই এ বারে করোনা আবহে অশোকের খোঁজ নিয়মিত রাখছেন গৌতম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২০ ০৭:০৬
Share:

ফাইল চিত্র।

জলপাইগুড়ি বিদায়ী পুরপ্রধান মোহন বসু যখন অসুস্থ হয়েছিলেন, তাঁকে দেখতে যান বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায়। যান শিলিগুড়ির তৎকালীন মেয়র অশোক ভট্টাচার্যও। সম্প্রতি এক মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান বিজেপির দার্জিলিং জেলা সভাপতি অভিজিৎ রায়চৌধুরী। তাঁর শিলিগুড়ির বাড়িতে সে দিন শুধু গেরুয়া শিবির নয়, পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব থেকে অশোক, সকলেই গিয়েছেন। পরে তাঁরা ঘরোয়া আলোচনায় বলেওছেন, এত অল্পবয়সে অভিজিতের চলে যাওয়া রাজনীতির পক্ষে অপূরণীয় ক্ষতি। জলপাইগুড়ির প্রাক্তন সাংসদ, তৃণমূল নেতা বিজয়চন্দ্র বর্মণ রোগী পাঠাতেন চিকিৎসক জয়ন্ত রায়ের কাছে। আবার গৌতম অসুস্থ হলে তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন অশোক।

Advertisement

এই সৌজন্যের ধারা মেনেই এ বারে করোনা আবহে অশোকের খোঁজ নিয়মিত রাখছেন গৌতম। রাখছেন বাকি অসুস্থ সিপিএম নেতাদের খবরও। ব্যতিক্রম নন কংগ্রেস বা বিজেপির নেতারাও। তাঁরাও সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, ‘‘এই সৌজন্য শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়ি দুই শহরেই বরাবরের বিষয়। পর্যটনমন্ত্রী প্রতিদিন একাধিকবার ফোন করে জানতে চাইছেন, আর কিছুর প্রয়োজন রয়েছে কি না। তাঁর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’’ অশোকবাবুর অসুস্থতার খবর পেয়েই মুখ্যমন্ত্রী ফোন করে তাঁর স্ত্রীকে সমস্ত সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন। করোনা সংক্রমণের রিপোর্ট মিললে নার্সিংহোমে রেখেই তাঁর চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে তৎপর হন পর্যটনমন্ত্রী। নার্সিংহোম থেকে দিনের মধ্যে বারবার তাঁর কাছে রিপোর্ট যাচ্ছে। বিধায়কের স্ত্রী রত্নাদেবীকে ফোন করেও খোঁজ নিচ্ছেন তিনি। পুরবোর্ডের সদস্য মুকুলবাবুর পরিবারের লোকদের শহরেরই একটি হোটেলে কোয়রান্টিনে থাকার বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন গৌতম। তিনি বলেন, ‘‘অশোকবাবু প্রবীণ রাজনীতিক। তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা, পরিবারের পাশে রয়েছি।’’

Advertisement

অশোকের খোঁজ নিচ্ছেন মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির কংগ্রেসি বিধায়ক শঙ্কর মালাকার, দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তাও। সাংসদ তাঁর ফেসবুকে আশোকবাবুর আরোগ্য কামনা করে পোস্ট দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘নার্সিংহোমে ফোন করেও খোঁজ নিয়েছি। তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন।’’ জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায় বলেন, ‘‘অশোকবাবুর খোঁজ নিতে ফোন করেছিলাম। ফোনে না পেয়ে অন্যদের থেকে খোঁজ নিয়েছি।’’

সম্প্রতি বিজেপির জেলার সাধারণ সম্পাদক রাজু সাহাও করোনা আক্রান্ত হলে জলপাইগুড়ি কোভিড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। লালারস পরীক্ষার পর রিপোর্ট মেলার আগে তিনি বিভিন্ন জায়গায় কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় সমালোচনা হয়। করোনা সংক্রমণের রিপোর্ট এলে তাঁর বাড়ির এলাকা জীবাণুমুক্ত করা, তাঁদের পরিচারিকাকে কোয়রান্টিনে নেওয়া, লালারস পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা করেন পর্যটনমন্ত্রী।

দেখে শুনে দুই শহরের প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, এই ঐতিহ্য বহু দিনের। ১৯৬৮ সালের বন্যায় জলপাইগুড়ির পাশে দাঁড়িয়েছিল শিলিগুড়িই। আবার অতীতেই জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা হলে একযোগে পথে নেমেছিলেন অশোক, গৌতম, শঙ্কর মালাকারেরা। এশিয়ান হাইওয়ের কাজের জন্য পানীয় জলের লাইন সরাতে হলে শিলিগুড়ি শহরকে পানীয় জল সরবরাহে এগিয়ে আসে জলপাইগুড়ি পুরসভা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন