চাচাদের সঙ্গে চা গৌতমের, কৌশলে সংশয়ও

লক্ষ্য মূলত একটাই, দলে ‘আদি তৃণমূল’ হিসেবে চিহ্নিত প্রবীণ নেতাদের যেন মুকুল রায় কাছে টেনে নিতে না পারেন।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৩
Share:

কেউ বলছেন, এটাও এক ধরনের ‘চায়ে পে চর্চা’! কারও মতে, এটাও চায়ে চুমুক দিয়ে ক্ষোভ প্রশমনের কৌশল! কারণ, সাতসকালে হালে তৃণমূলে ব্রাত্য হয়ে থাকা নেতাদের বাড়ি-বাড়ি চা খেতে ছুটছেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব।

Advertisement

কোনও দিন সকালে তাঁকে দেখা যাচ্ছে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভারতনগরে প্রাক্তন তৃণমূল জেলা সভাপতি প্রতুল চক্রবর্তীর বাড়িতে। আবার পরদিন শোনা যাচ্ছে, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি পিছিয়ে প্রবীণ ও প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর বিজয় দে-র বাড়িতে গিয়ে চায়ের কাপ নিয়ে আড্ডায় বসেছেন গৌতম। লক্ষ্য মূলত একটাই, দলে ‘আদি তৃণমূল’ হিসেবে চিহ্নিত প্রবীণ নেতাদের যেন মুকুল রায় কাছে টেনে নিতে না পারেন।

যা শোনার পরে নানা কারণে মনক্ষুণ্ণ হয়ে থাকা জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, ইসলামপুর, মালবাজার, মালদহের একাধিক প্রবীণ নেতাও গৌতমবাবুকে বাড়িতে চা খাওয়ার ডাক দিতে শুরু করেছেন। তাতে সাড়া দিচ্ছেন একদা তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান গৌতমবাবু। তিনি বলেছেন, ‘‘প্রবীণ নেতাদের অনেকের অবদান তৃণমূলের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ। নানা কারণে মনক্ষুণ্ণ হয়ে রয়েছেন অনেকে। তা বলে দল তাঁকে অমর্যাদা করবে, এমন নয়।’’

Advertisement

ঘটনা হল, মুকুলবাবু যে দিন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তখন থেকেই তৎপর হয়ে উঠেছেন বিজেপির উত্তরবঙ্গের নেতাদের একাংশ। নানা ভাবে বাতাসে ভাসিয়ে দিয়েছেন একাধিক তৃণমূলের প্রবীণ নেতার নাম। যাঁরা আদি তৃণমূল হিসেবেই পরিচিত। তাঁরা বেশির ভাগই এখন ক্ষমতার অলিন্দে নেই।

যেমন, একদা দার্জিলিং জেলা সভাপতি প্রতুলবাবু এখন তেমন কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদে নেই। প্রাক্তন কাউন্সিলর বিজয়বাবুকেও তৃণমূলে ব্রাত্য বলে মনে করেন তাঁর কাছের লোকজন। জলপাইগুড়িতে প্রয়াত কল্যাণ চক্রবর্তীর অনুগামী নেতারা অধিকাংশই গুরুত্বহীন। কোচবিহারে প্রয়াত নেতা বীরেন কুণ্ডুর আপনজনদের অনেকেই এখন তৃণমূলে গুরুত্ব পাচ্ছেন না বলে দলেরই খবর। রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, মালদহেও তেমন নেতা কম নেই।

তৃণমূলের অন্দরের খবর, এঁদের কারও কারও সঙ্গে মুকুলবাবুর বোঝাপড়া ছিল চমৎকার। তাই আসরে নেমেছেন গৌতমবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা শ্রদ্ধেয় নেতা। ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে থাকলে মার্জনা করে দেবেন ছোটদের।’’

কিন্তু বাড়িতে গিয়ে চা খেলেই সমস্যা মিটবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বয়সে কাকা-চাচাদের সমান এই প্রবীণ নেতাদের দলের সভায় ডেকে চা খাওয়াতেও হবে। তৃণমূলের অন্দরেই এক নেতা সহাস্যে বলেন, ‘‘পুরনো চাচাদের বাড়ি গিয়ে, বা তাঁদের ডেকে চা খাওয়ালে, আবার দ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দেবে কি না, বলা যাচ্ছে না। অনেকে তো গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের চাপে পড়েই দূরত্ব তৈরি করেছিলেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন