বদল এনে ধস রোখার চেষ্টা নেত্রীর

অধিকাংশ জায়গার মতো এই তিন জেলাতেও দলের যে প্রার্থীরা সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে লড়াই করে হেরেছেন তাঁদের জেলা সভাপতি পদে বসানো হয়েছে।

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু 

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৯ ০৭:১১
Share:

বৈঠকের পর কলকাতায় জাভেদ, কানাইয়ালাল ও অমল। নিজস্ব চিত্র

লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবি হতেই তৃণমূল জেলা সভাপতি পদে রদবদল হল দুই দিনাজপুর এবং মালদহেও। তা নিয়ে জেলাগুলোতে দলের অন্দরে গুঞ্জন উঠেছে। এরপর অন্য নেতাদের উপরে বা জেলা পরিষদ, পুরসভাগুলোতে পদে থাকা দলের জনপ্রতিনিধিদের উপরেও কোপ পড়তে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।

Advertisement

অধিকাংশ জায়গার মতো এই তিন জেলাতেও দলের যে প্রার্থীরা সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে লড়াই করে হেরেছেন তাঁদের জেলা সভাপতি পদে বসানো হয়েছে। যদিও মালদহে জেলা সভাপতির পদ থেকে দক্ষিণ মালদহ লোকসভা কেন্দ্রে দলের প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেনকেই সরানো হয়েছে। মালদহের জেলা সভানেত্রী করা হয়েছে উত্তর মালদহের প্রার্থী মৌসম নুরকে। মোয়াজ্জেমকে দলের জেলা কমিটির চেয়ারম্যান পদ দেওয়া হয়েছে।

তৃণমূলের অন্দরেরই খবর, এই তিন জেলায় গোষ্ঠীকোন্দলকেই দলের ভরাডুবির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে। বিশেষ করে বালুরঘাটের মতো লোকসভার ক্ষেত্রে যা ভীষণ ভাবে প্রকট হয়েছে। তাছাড়া দলের প্রার্থীদের জেতাতে ব্যর্থ হওয়ায় জেলা সভাপতিদের পদ থেকেও সরতে হয়েছে। যদিও তাঁদের কয়েকজনকে দলের জেলা কমিটির চেয়ারম্যান পদে বসানো হলেও তা সান্ত্বনা ছাড়া কিছু নয় বলেই মত দলেরই একাংশের। তাছাড়া সামনে বিধানসভা ভোট। সেই দিকে তাকিয়েই বিজেপিকে রুখতে এখন থেকে ঘর গোছাতে চাইছে তৃণমূল। তাই একদিকে কড়া মনোভাব, আর এক দিকে অসন্তুষ্ট হয়ে যাতে কেউ দল থেকে চলে না যান, সে কথাও মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত বলে নেতাদের অনেকে মনে করছেন। অন্যদিকে, জেলাগুলোতে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা, নেতাদের একাংশের ঔদ্ধত্য, অহঙ্কার ও জনসংযোগ বজায় না রাখার অভিযোগ, সিন্ডিকেটের নামে তোলাবাজির বিরুদ্ধেও দল বার্তা দিতে চাইছে।

Advertisement

তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, বালুরঘাটে হার নিয়ে দলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রকেই দায়ী করেছেন নেত্রী। তাঁকে এবার সভাপতির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছেন মমতা। জেলা সভাপতির নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন অর্পিতা ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘দলের এই খারাপ ফল নিয়ে নিশ্চয়ই দিদির কাছে তথ্য ছিল। তাই সভাপতি পরিবর্তন করা হয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘দিদি দলের দায়িত্ব দিয়েছেন। আগামী পুরসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির দিকে তাকিয়ে দলকে সাজানো হবে।’’

রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্র থেকে হেরেছেন কানাইয়ালাল আগরওয়াল। তাকে উত্তর দিনাজপুর জেলার সভাপতি করা হয়েছে। ওই পদে থাকা অমল আচার্যকে জেলা কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। ভোটে লড়তে ইসলামপুরের বিধায়কের পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল কানাইয়ালালকে। হারের পর তার চেয়ারম্যান পদে টিকে থাকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এই পরিস্থিতিতে কানাইয়াকে সন্তুষ্ট রাখা এবং কাউন্সিলররা যাতে তাঁর বিরুদ্ধে না যান তাই তাঁকে জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হল।

কংগ্রেস ছেড়ে আসা গনি পরিবারের সদস্য মৌসমকে অবশ্য জেলা সভানেত্রী ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মহিলা কমিশনের ভাইস চেয়ারপার্সন পদে বসিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলায় দলের চেয়ারম্যান পদ থেকে কোতোয়ালি পরিবারেরই সদস্য আবু নাসের খান চৌধুরীকে (লেবু) সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মৌসম বলেন, “দলনেত্রী যে দায়িত্ব দিলেন জেলার সমস্ত নেতৃত্বকে সঙ্গে নিয়ে তা পালন করব। দলকে চাঙ্গা করা হবে জেলা জুড়ে।’’

সভাপতি পদ খুইয়ে মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তবে আমি দায়িত্ব ছেড়ে শুধু দল করতে চেয়েছিলাম। তবুও নেত্রী আমাকে চেয়ারম্যান করেছেন। সকলকে নিয়েই ফের চলার চেষ্টা করব।’’ তিনি বলেন, ‘‘নেত্রীর সিদ্ধান্ত মেনেই কাজ করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন