সরতে হল গৌতম ও সৌরভকে

গৌতমের পাশাপাশি শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষর (এসজেডিএ) চেয়ারম্যান পদ থেকে সৌরভ চক্রবর্তীকে সরিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

শুভঙ্কর চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৯ ১০:১০
Share:

প্রশ্নোত্তর: কালীঘাটের বাড়িতে তৃণমূলের বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সুমন বল্লভ

পর্যটন মন্ত্রী হওয়ার পাশাপাশি দলের দার্জিলিং জেলা সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন গৌতম দেব। উত্তরবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসাবেই পরিচিত গৌতম। তাই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদ, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পরিকল্পনা কমিটি, টি অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল সহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদেও তাঁকে বসিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দায়িত্ব দিয়েছিলেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার দলীয় পর্যবেক্ষকেরও। ফলে গৌতম দেবের কাছে মমতার প্রত্যাশাও ছিল অনেক বেশি। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ভরাডুবি হয়েছে উত্তরবঙ্গে। জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং লোকসভার পাশাপাশি দার্জিলিং বিধানসভা উপনির্বাচনেও বড় ব্যবধানে হেরেছে তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থী। তাতেই চটেছেন মমতা। তৃণমূল সূত্রের খবর শনিবার কালীঘাটে দলীয় সভায় গৌতমকে ভর্ৎসনা করেন তিনি।

Advertisement

তারপরই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ দিনাজপুরের দলীয় পর্যবেক্ষকের পদ থেকে গৌতমকে সরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন। পর্ষদের নতুন চেয়ারম্যান হিসাবে দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে দলের পরাজিত প্রার্থী অমর সিংহ রাইয়ের নাম ঘোষণা করেন তিনি।

তৃণমূলের রাজ্য নেতাদের অনেকেরই বক্তব্য দার্জিলিং, জলপাইগুড়ির জন্য স্থানীয় নেতাদের তরফে যখন যেমন দাবি এসেছে সবটাই গুরুত্ব দিয়ে মিটিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়, রাস্তাঘাট, পানীয় জল-সহ পাহাড়ের জন্য বহু কাজ করেছেন। শিলিগুড়িতে বেঙ্গল সাফারি, জলপাইগুড়িতে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, স্পোর্টস কমপ্লেক্স, সার্কিট বেঞ্চ সহ নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করেছেন। তারপরও নিজের বিধানসভা এলাকা ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে ৮৬ হাজারেরও বেশি ভোটে পিছিয়ে পড়েছেন গৌতম। জেতাতে ব্যর্থ হয়েছেন দার্জিলিং ও বালুরঘাটও। এমনকী শিলিগুড়ি পুরসভা বা মহকুমা পরিষদেও ভোটপ্রাপ্তির নিরিখে বিজেপির কাছে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল।

Advertisement

তৃণমূলের একটি সূত্রের মতে এরই কোপ পড়েছে গৌতমের উপর। মন্ত্রীর পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে দীর্ঘ দিন থেকেই তিনি অসুস্থ। চিকিৎসকের পরামর্শে শারীরিক পরীক্ষা করাতে শুক্রবারই দিল্লি গিয়েছিলেন। তবে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা পেয়ে এ দিন সকালেই তড়িঘড়ি কলকাতায় ফিরে দলীয় বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। গৌতম বলেন, ‘‘নিজের সেরাটা দিয়ে কাজ করেছি। দিনরাত এক করে প্রচার করেছি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে আগেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পর্ষদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলাম। উনি যেরকম নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবেই কাজ করব।’’ অমর সিংহ রাই বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী দায়িত্ব দিলে তা পালন করার চেষ্টা করব। শীঘ্রই ওনার সঙ্গে বৈঠক হবে। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাব।’’

গৌতমের পাশাপাশি শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষর (এসজেডিএ) চেয়ারম্যান পদ থেকে সৌরভ চক্রবর্তীকে সরিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে দলের পরাজিত প্রার্থী বিজয়চন্দ্র বর্মণকে। দলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতির পদে রয়েছেন সৌরভ। তাঁর নিজের জেলা আলিপুরদুয়ার। সেখানকার বিধায়কও তিনি। দুই কেন্দ্রেই দল হেরেছে। তার জেরেই সৌরভকে সরানো হয়েছে বলেই মনে করছেন রাজ্য তৃণমূল নেতাদের একাংশ। সূত্রের খবর এ দিনের বৈঠকে সৌরভকে দলীয় কাজে বেশি করে সময় দেওয়ার নির্দেশ দেন মমতা। সৌরভ বলেন, ‘‘দলনেত্রীর নির্দেশ মেনে কাজ করব। আলিপুরদুয়ারেও বাড়তি নজর দেব।’’

বিজয়চন্দ্র বলেন, ‘‘এসজেডিএর চেয়ারম্যান হিসাবে উন্নয়নমূলক কাজ করা যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement