ধৃত কল্পনা সিন্ধে। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
শুক্রবার ফরাক্কা এক্সপ্রেসে দুষ্কৃতীদের গুলিতে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনায় শনিবার রাতে এক মহিলাকে গ্রেফতার করেছে জিআরপি। প্রাথমিক তদন্তে জিআরপি-র অনুমান, ওই মহিলা ও তাঁর ছেলের ভাড়াটে গুন্ডারা সে দিন ট্রেনে বিহারের বক্সারনগরের বাসিন্দা উমেশ বর্মাকে খুনের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গিয়ে লাগে বালুরঘাটের জহর নবোদয় হাই স্কুলের হিন্দির শিক্ষক ইন্দ্র ভানের গায়ে। তিনি মারা যান। উমেশবাবুকেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তাঁকেও জিআরপি আটক করেছে। তিনি এখন জিআরপি হেফাজতে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
কল্পনা সিন্ধে নামে ওই মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে মালদহের ইংরেজবাজারের চুরিপট্টি এলাকা থেকে। তাঁর ছেলে রঞ্জিত সিন্ধে পলাতক। কল্পনাদেবীর বিরুদ্ধে ৩০২ এবং ১২০ (বি) ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। এ দিন আদালতের নির্দেশে তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। কল্পনাদেবী অবশ্য এ দিন দাবি করেছেন, ‘‘উমেশবাবুকে আমরা চিনতাম। তিনি আমাদের বাড়িতে আসতেন। কিন্তু এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনও যোগাযোগ নেই।’’
ওই এলাকায় কল্পনাদেবীদের একটি সোনার দোকান রয়েছে। তাঁরা সোনা গলানোর কাজ করেন। উমেশবাবুও সোনা ব্যবসায়ী। কল্পনাদেবীদের কাছ থেকে তিনি তিন লক্ষ টাকা পেতেন বলে জিআরপি-র কাছে দাবি করেছেন উমেশবাবু। বকেয়া টাকার জন্য সম্প্রতি বারবার মালদহে আসতে হয়েছে তাঁকে। ২৮ এপ্রিল ফের টাকা নিতে উমেশবাবু মালদহে আসেন। টাকা না পেয়ে তিন দিন তিনি কল্পনাদেবীদের বাড়িতেই থেকে যান। তারপর ১ মে রাতে ফরাক্কা এক্সপ্রেসে বাড়ি ফিরছিলেন। তখনই জামিরঘাটা স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় ট্রেনে দুষ্কৃতীরা হামলা করে চেন টেনে পালিয়ে যায়।
জিআরপি-র অনুমান, বকেয়া টাকা না দেওয়ার জন্য ভাড়া করা গুন্ডাদের দিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন কল্পনাদেবীরা। কিন্তু গুলি লাগে শিক্ষক ইন্দ্রবাবুর কোমরে। মালদহের জিআরপি-র আইসি কৃষ্ণগোপাল দত্ত বলেন, ‘‘উমেশবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই ওই মহিলার কথা জানা যায়।’’ উমেশবাবু প্রথমে বলেছিলেন তাঁর কাপড়ের ব্যবসা রয়েছে, কিন্তু জেরায় স্বীকার করে নেন যে, আসলে তাঁর সোনার ব্যবসা। কৃষ্ণগোপালবাবু বলেন, ‘‘ওই মহিলা ও তাঁর ছেলে উমেশবাবুকে খুনের চক্রান্ত করেছিলেন বলে আমাদের অনুমান। ওই মহিলার ছেলের খোঁজ করা হচ্ছে।’’ এই ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে বলেও সন্দেহ জিআরপি-র। কোথা থেকে সোনা নিয়ে এসে এখানে গলানো হয়, ও সেই সোনা কথায় বিক্রি করা হয়, তা নিয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে।