কাঁচা আম ফালা করে কেটে এ ভাবেই নুনে জারিত করার প্রক্রিয়া চলছে। নিজস্ব চিত্র।
আমবাগানে বসে কাঁচা আম ফালাফালা করে কেটে তা নুনে জারিত করে রাখা হচ্ছে। যা দিয়ে তৈরি হবে আমশি, আমের আচার, আমপানা। ওই কাঁচা আমের মধ্যে রয়েছে ঝড়ে ঝরে পড়া আমের পাশাপাশি টক প্রজাতির আম। আগে ঝড়ে পড়া আমে বাজারে কার্যত কিলোগ্রাম পিছু এক টাকাও মিলত না। আর আশ্বিনা-সহ টক প্রজাতির আমের ক্রেতা না মেলায় তা জলের দরে বিক্রি করতে হত।
কিন্তু আমের জেলা মালদহে গত দু’বছর ধরে সেই ছবিটা পাল্টাতে শুরু করেছে। আমের আচার, আমশি, আমপানা তৈরির জন্য ভিনরাজ্যের পাশাপাশি প্রতিবেশী বাংলাদেশে মালদহের কাঁচা আমের চাহিদা ব্যাপক ভাবে বেড়ে যাওয়ায় আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন আমচাষিরা। চলতি বছরেই ভিনরাজ্যে মালদহের কাচা আমের চাহিদা প্রচুর বেড়ে গিয়েছে বলে উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। মালদহের পাকা আমের কদর তো রয়েছেই।
আম পাকার আগেই ঝড়ের পাশাপাশি প্রাকৃতিক বিপর্য়য়ে প্রচুর পরিমাণ আম ঝরে পড়ে কার্যত নষ্ট হয়। ফলে কাঁচা আমের চাহিদা বাড়ায় শুধু আমচাষি ও আম ব্যবসায়ীরাই নন, স্বস্তিতে উদ্যানপালন দফতরও। তবে আমবাগানে খোলা আকাশের নীচে যে ভাবে কাঁচা আম কাটার পাশাপাশি তা সংরক্ষণ করা হচ্ছে, তাতে উড়ে এসে পড়ছে ধুলোবালি। যে ভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে, তাতেও সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। উদ্যানপালন দফতর ওই বিষয়ে কেন উদাসীন, ফলে সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
এ ছাড়া কাঁচা আম ভিনরাজ্যে পাঠানোর পাশাপাশি জেলাতেই আচার, আমপানা তৈরি করে তা বাজারজাত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন আমচাষিদের পাশাপাশি আম গবেষক ও আম ব্যবসায়ীরা।
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন দফতরের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, ‘‘কাঁচা আমের চাহিদা প্রচুর বেড়েছে। বহু ব্যবসায়ী কাঁচা আম চেয়ে উদ্যানপালন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।’’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘সরকারি ভাবেও রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ডে আচার, আমপানা তৈরি করে বিক্রির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’’
উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা যায়, এর মধ্যেই বাংলাদেশে ১০০ মেট্রিক টন আমশি নিয়েছে। পাশাপাশি পঞ্জাব, দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশের মতো গরম রাজ্যগুলিতে আমপানা, আমের আচারের চাহিদা ব্যপক বেড়েছে। বোলপুরের এক ব্যবসায়ী ৫০০ মেট্রিক টন কাচা আম চেয়ে যোগাযোগ করেছেন। ওই ফালা আম ১৫ টাকা কিলোগ্রাম দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে বহু বাসিন্দার বাড়তি উপার্জনও হচ্ছে।
উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ২০০ জন ব্যবসায়ী এই পেশায় যুক্ত। এঁরা আমবাগানে আম কেটে নুনে জারিত করে বাইরে পাঠাচ্ছেন। এঁদের মধ্যে ৫০ জনকে নিয়ে পরিকাঠামো গড়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকার তাঁদের পরিকাঠামো গড়ে দেবে। যেখানে ভাল ঘর, সংরক্ষণের চেম্বার থাকবে।
উদ্যানপালন দফতরের মালদহের উপ অধিকর্তা প্রিয়রঞ্জন সন্নিগ্রাহী বলেন, সরকারি ভাবে সব সময় সব কিছু বিক্রি করা ওঠে না। তবে যে কাঁচা আম বাইরে যাচ্ছে, তা তো মালদহ থেকেই যাচ্ছে। ফলে সরকারি উদ্যোগে পরিকাঠামো গড়ে ওদের সব রকম সাহায্য করা হবে। মালদহের আম গবেষক তথা চাঁচল সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের শিক্ষক কমলকৃষ্ণ দাস বলেন, ‘‘বছরে গড়ে ৩০-৪০ কুইন্ট্যাল আম ঝড়ে ঝরে পড়ে কার্যত নষ্ট হয়। তন্তুজ, চর্মজের মতো আম্রজ নাম দিয়ে পাকা আমের পাশাপাশি কাচা আম দিয়ে তৈরি সামগ্রী বাজারজাত করা যেতে পারে। সে কথা মন্ত্রীর পাশাপাশি প্রশাসনকেও বলেছি।’’ মালদহ ম্যাঙ্গো মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুবোধ মিশ্র বলেন, ‘‘কাঁচা আমের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা অসংগঠিত ভাবে যা করার করছেন। আমরা চাই সরকার তাদের পাশে দাঁড়াক।’’