পাহাড়ে ধসে মৃতদের জন্য কর্মিসভায় নীরবতা পালন সূর্যকান্ত মিশ্র-সহ বাম নেতৃত্বের। ছবি: সন্দীপ পাল।
মুখ্যমন্ত্রী শহরে রয়েছেন, এই যুক্তি দেখিয়ে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের সরকারি অতিথি নিবাসের বুকিং পূর্ত দফতর বাতিল করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার দলীয় বৈঠকে যোগ দিতে শিলিগুড়িতে পৌঁছন বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। হাসমি চক লাগোয়া পূর্ত দফতরের পরিদর্শন বাংলোতে সূর্যকান্তবাবুর জন্য একটি ‘স্যুট’ বুকিংও করা ছিল। সকালে দার্জিলিং মেলে পৌঁছে, বাংলোতে বিশ্রাম করে, দলীয় সভা সেরে এ দিনই বিকেলে রায়গঞ্জে রওনা দেওয়ার কথা ছিল সূর্যবাবুর। যদিও, বৃহস্পতিবার রাতে সেই বুকিং বাতিল বলে সূর্যবাবুর সচিবকে পূর্ত দফতরের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়। সূর্যবাবু যখন দার্জিলিং মেলের কামরায় তখন তাঁকে ফোনে সেই কথা জানানো হয়।
মুখ্যমন্ত্রী শুক্রবার শিলিগুড়ি থাকবেন বলে জরুরি প্রয়োজনে বুকিং বাতিল বলে জানানো হয়েছে বলে জেলা সিপিএম সূত্রের দাবি। এর আগেও দু’বার বাম নেতাদের সরকারি বুকিং শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়ে গিয়েছিল বলে জানানো হয়েছে। অভিযোগ, বেশি রাতে বুকিং বাতিলের কথা জানানোয় অন্য কোনও সরকারি অতিথি নিবাস বুকিং করার উপায় ছিল না। অন্তত তিন দিন আগে বুকিং করা থাকলেও, শেষ মহূর্তে কেন জানানো হল সে প্রশ্ন তুলেছে সিপিএম। দলের জেলা নেতাদের অভিযোগ, উত্তরবঙ্গের এক প্রভাবশালী নেতা তথা মন্ত্রীর নির্দেশেই বুকিং বাতিল করা হয়ে থাকতে পারে।
বিধি অনুযায়ী, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রীর সম মর্যাদা পান। তাঁর জন্য পুলিশি নিরাপত্তা এবং পাইলট ভ্যানও বরাদ্দ থাকে। বিরোধী দল নেতা কোনও জেলায় গেলে সরকারি সফরসূচি আসে। সেই সূচিতেও শুক্রবার সূর্যবাবু শিলিগুড়ির পূর্ত বাংলোয় থাকবেন বলে উল্লেখ্য ছিল। তার পরেও রাতারাতি কী ভাবে বুকিং বাতিল হল সে প্রশ্ন উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রীর শহরে থাকার যুক্তি আদপে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের শীর্ষ মহল মত দিয়েছিল কি না সেটাও প্রশ্ন। গত বুধবার রাতে শিলিগুড়ি পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী শহর লাগোয়া সুকনা বন বাংলোয় চলে যান। বৃহস্পতিবার রাতেও তিনি সেখানে ছিলেন। এ দিন দুপুরে মুখ্যমন্ত্রীর সুকনা বনবাংলো ছেড়ে বাগডোগরা বিমানবন্দরে রওনা হওয়ার বিষয়টিও পূর্বনির্ধারিত ছিল। গত বুধবার মুখ্যমন্ত্রী শহরে পৌঁছনোর পরেও সূর্যবাবুর বুকিং বাতিল করা হয়নি। সিপিএম নেতাদের প্রশ্ন, তবে কী বৃহস্পতিবার রাতে প্রশাসনের হঠাৎ করে মনে পড়ল যে শহরে মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন। পূর্ত দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারব না। নির্দেশ মেনে পদক্ষেপ করেছি।’’
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য অভিযোগ করে বলেন, ‘‘আমি কোনও মন্ত্রী কিংবা নেতার নাম করছি না। তবে প্রভাবশালী কারও নির্দেশ ছাড়া বুকিং বাতিল হতে পারে না। এটা অত্যন্ত অনৈতিক। মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন বলে শহরের কোনও সরকারি অতিথিনিবাসে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা থাকতে পারবেন না, এটা সংবিধান বিরোধী। তবে শিলিগুড়িতে এর আগেও এমন হয়েছে, কারও নির্দেশেই বারবার এমন ঘটছে।’’
অশোকবাবু নিজেও এ দিন সূর্যবাবুর সঙ্গে দার্জিলিং মেলে এনজেপি পৌঁছেছেন। ট্রেনে বসেই বুকিং বাতিলের খবর পেয়ে অশোকবাবু হিলকার্ট রোডে পার্টি অফিসেই সূর্যবাবুর থাকার ব্যবস্থা করেন। এ দিন সেখানেই স্নান, দুপুরের খাওয়া সেরে বিকেলে সূর্যবাবু দলীয় সভায় যোগ দেন। মন্ত্রী গৌতমবাবু অবশ্য এ দিন বলেছেন, ‘‘ঘটনাটি জানি না। তবে এর আগে দু’বার সিপিএম নেতার বুকিং সরকারি অতিথি নিবাস থেকে বাতিল হওয়ার কথা শুনে বিকল্প ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে তাঁরা থাকেননি। সুতরাং অসৌজন্যের অভিযোগের ভিত্তি নেই। তবে ঘটনাটি নিশ্চয়ই খোঁজ নেব। কারণ, এটা আমাদের সংস্কৃতি নয়।’’
মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়িতে এলে পূর্ত দফতরের বাংলোয় সাধারণত থাকেন না। এবারও মুখ্যমন্ত্রী সুকনাতে ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আসা আধিকারিক এবং নিরাপত্তা আধিকারিকদের সার্কিট হাউসে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে কেন পূর্ত দফতরের বাংলোয় বিধানসভার বিরোধী দলনেতাকে থাকতে দেওয়া হল না তার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা নেই বলে সিপিএমের দাবি। অশোকবাবুর অভিযোগ, ‘‘শুধু মুখে সৌজন্যের কথা বললে হয় না। তবে এটি সৌজন্য নয়, নীতির বিষয়। শিলিগুড়ির মানুষ সবই দেখছেন। সবই বুঝছেন। যথা সময়ে নিশ্চয়ই আবারও বুঝিয়ে দেবেন যে অসৌজন্য ও উদ্ধত আচরণের রাজনীতি পছন্দ করে না শিলিগুড়ি।’’