উদ্ধার: বর্ণালী ঘোষের দেহ বের করে নিয়ে আসা হচ্ছে। শিলিগুড়ি কলেজপাড়া। নিজস্ব চিত্র
কলেজপাড়ার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হল এক মহিলার ঝুলন্ত দেহ। সোমবারের ঘটনা। মৃতার নাম বর্ণালী ঘোষ (৪৫)। ওই ফ্ল্যাটেই একা থাকতেন তিনি। দিনের ও রাতের বেলার জন্য দুইজন পরিচারিকা আসতেন। পড়শিদের দাবি, বর্ণালীদেবী বিশেষ কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। মেলামেশা করতেন না আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গেও।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩৭ নম্বর নন্দলাল বসু সরণিতে তিনতলা ফ্ল্যাটবাড়ির পুরোটাই বর্ণালীদেবীর। তাঁর মা ছোটবেলাতেই মারা গিয়েছেন। বাবা মারা গিয়েছেন ২১ বছর আগে। আত্মীয়রা জানান, বর্ণালী বিয়ে করেননি। তাঁর বাড়িতে দু’বেলা দুই পরিচারিকা আসেন। সকালে থাকেন সরস্বতী মণ্ডল আর রাতে থাকেন মিনু চৌধুরী। তিনি ফুলেশ্বরী পাড়ার বাসিন্দা। রবিবার রাতে বর্ণালী দেবীর সঙ্গে ছিলেন মিনু। তিনি সকাল ছ’টা নাগাদ বেরিয়ে যান। বেলা সাড়ে আটটার সময় ঢোকেন সরস্বতী। দোতলার দরজা ঠেলা দিয়ে ঘরে ঢুকেই বর্ণালীদেবীর দেহ দেখতে পান তিনি। সরস্বতী বলেন, ‘‘মিনুকে খবর দিই দিদিভাই মারা গিয়েছে বলে। কালও কথা হয়েছে, ভাবতেই পারছি না।’’ পরিচারিকারা জানান, তাঁদের সঙ্গেও প্রয়োজন ছাড়া বিশেষ কথা বলতেন না ওই মহিলা। ঘটনাস্থল থেকে একটি উল্টে পড়া টুল পেয়েছে পুলিশ। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, এখনও কোনও সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়নি, অনেক সূত্রেই এখনও অধরা। ঘটনার তদন্ত চলছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতের ডিউটি সেরে পরিচারিকা চলে যাওয়ার পরে নিচতলার সদর দরজা এবং বর্ণালীদেবীর ফ্ল্যাটে ঢোকার দরজা বন্ধ করা হত না সকালের পরিচারিকা আসবেন বলে। দুই পরিচারিকার কাছেই ফ্ল্যাটের চাবি থাকত বলে জানা গিয়েছে। তিনতলা ভবনের গোটাটাই বর্ণালীদেবীর। একতলায় রয়েছে দু’টি দোকান। তিনতলায় মহিলাদের পিজি ছিল। দোতলাতেও বর্ণালীদেবীর ফ্ল্যাটের উল্টোদিকের ফ্ল্যাটে পিজি ছিল। কিন্তু সম্প্রতি সব পিজি তুলে দিয়ে কয়েকটি চৌকি রবিবারই বিক্রি করে দিয়েছিলেন বর্ণালী।
এ দিন দেহ নামানোর সময় হাজির হন বর্ণালীর খুড়তুতো ভাই গুরুদাস ঘোষ। তিনি ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। বলেন, ‘‘আমার বোন আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা পছন্দ করত না। আমরা এলেও খুব একটা খুশি হত না। তাই আমাদের বিশেষ যাতায়াত ছিল না।’’ পড়শিদের দাবি, মহিলা দু’টি কুকুর নিয়ে থাকতেন। পাড়ায় মিশতেন না। পরিচারিকারা জানান, ব্লাডসুগার, রক্তচাপের সমস্যা ছিল নিয়মিতভাবে বিকেলে হাঁটতেন পরিচারিকা সরস্বতীকে সঙ্গে নিয়ে। বেঙ্গালুরুতে তাঁর বোন পর্ণালী স্বামীর সঙ্গে থাকেন। মানসিক অবসাদ থেকে আত্মহত্যা কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।