ভূগোলে লাখ টাকা

এক ছাত্রীর ভর্তির আবেদনপত্র পূরণ করে দিচ্ছিলেন এমনই টি শার্ট পরা এক যুবক। বাইরে তখন অঝোরে বৃষ্টি।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৮ ০৩:৪২
Share:

ফাইল চিত্র।

সাদা টি শার্টের পিছনে ছাপানো অক্ষরে লেখা আনন্দচন্দ্র কলেজ। ছাত্র সংসদের সদস্যদের দেওয়া হয়েছিল নিজের নাম লেখা ছাপানো টি শার্ট। এক ছাত্রীর ভর্তির আবেদনপত্র পূরণ করে দিচ্ছিলেন এমনই টি শার্ট পরা এক যুবক। বাইরে তখন অঝোরে বৃষ্টি। রেনকোট পরা আগন্তুক তাঁর কাছে জানতে চাইলেন, কলেজের টাঙানো লিস্টে নীচের দিকে তাঁর ভাইয়ের নাম রয়েছে, অর্নাস বা সাম্মানিক পড়ার সুযোগ মিলবে কি? মুখ তুলে টি শার্ট পরা যুবক পাল্টা জানতে চাইলেন, “অর্নাস কি লাগবেই?” আগন্তুক রাজি হতেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল বারান্দার কোণে। বাংলায় অর্নাস পড়তে হলে অন্তত ত্রিশ হাজার টাকা লাগবেই বলে দাবি করলেন যুবক। আগন্তুক ইংরেজির কথা জানতে চাইলে যুবকের উত্তর, “ইংরেজি তো কস্টলি সাবজেক্ট। আরও বেশি লাগবে।” কলেজ কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন, অন-লাইনে, ই-কাউন্সিলিংয়ে ভর্তি চলছে। তা হলে মেধা তালিকায় নীচের দিকে নাম কী ভাবে সুযোগ পাবে? যুবকের দাবি, “সব বন্দোবস্ত করা আছে।”

Advertisement

সোমবার জলপাগুড়ির আনন্দচন্দ্র (এসি) কলেজে এমনই অভিজ্ঞতা শিলিগুড়ির আশিঘর থেকে আসা এক অভিভাবকের। তাঁর দাবি, যিনি তাঁর কাছে টাকা চেয়েছেন, তিনি নিজেকে কলেজের ছাত্র সাংসদের ক্রীড়াসচিব বলে দাবি করেছেন। তাঁর টি শার্টের পিছনে লেখা ছিল— তন্ময়। অভিভাবকে তিনি নিজের নম্বরও দিয়েছেন। সেই নম্বরে ফোন করে পাওয়া গেল কলেজের ছাত্র সংসদের সহকারী ক্রীড়াসচিব তন্ময় বর্মন। তিনি অবশ্য টাকা চাওয়ার কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেন। সাংবাদিক পরিচয় শুনে প্রথমে ফোনও কেটে দেন। পরে বলেন, “আমি সংসদের একজন সদস্য। কারও থেকে ভর্তির জন্য টাকা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে। কাউকে ভর্তি করিয়ে দেব এমন ক্ষমতাই আমার নেই।”

অভিযোগের এখানেই শেষ নয়। ‘দর’ সব থেকে বেশি উঠেছে ভূগোলের। কত? অভিযোগ, লাখ টাকা! কলেজের উল্টো দিকে একটি চায়ের দোকান। সেখানে বসে রয়েছেন ‘দাদা’রা। ধূপগুড়ি থেকে আসা এক ছাত্রী ভূগোলে স্নাতকস্তরে পড়তে চায়। অধ্যক্ষের ঘরের পিছন দিকে ভর্তি চলছে। তারও কিছুটা পিছনের দু’টি ক্লাসে বসে রয়েছেন একদল ছেলেমেয়ে। তাঁদের অনেকের গায়েই কলেজের নাম লেখা সাদা টি শার্ট। কেউ অন্যের আবেদনপত্র পূরণ করছেন, কেউ বা নিচু গলায় কিছু বলছে। ধুপগুড়ির ছাত্রীটি যাওয়া মাত্র তাঁকে বলা হলো, “ভূগোলের অনেক ডিমান্ড। ওই পাড়ে যেতে হবে।” মানে রাস্তার ও পাড়ের চায়ের দোকানে। সেখানে বসে থাকা দাদারা কথা বলছেন ভূগোল নিয়ে। ছাত্রীর বাড়ির লোকের দাবি, সেখানেই জানানো হয়, ভূগোলের দাম লাখ টাকা!

Advertisement

কলেজের অধ্যক্ষ মহম্মদ আব্দুর রেজ্জাক অবশ্য বলেন, “এখনও নির্দিষ্ট অভিযোগ পাইনি। কলেজে ই-কাউন্সিলিং-এ ভাল সাড়াও পড়েছে। অনিয়ম হলে কড়া হাতে দমন করা হবে।” প্রশ্ন উঠেছে, ই-কাউন্সিলিংয়ে কী করে প্রথম দিকের আবেদনকারীদের টপকে যাওয়া যাবে? নাম না করে শিক্ষামহলের অনেকেই জানাচ্ছেন, অন-লাইনে আবেদন করতে কোনও নথি জমা দিতে হয় না। ভর্তির সময় নথি প্রয়োজন হয়। আবেদন করার সময় ভুয়ো নাম ঢুকিয়ে দেওয়া খুব কঠিন কিছু নয়। একটি অংশের দাবি, ভুয়ো নামে একাধিক আসন দখল করে পরে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন