বিকেলেই সন্ধের আঁধার শিলিগুড়িতে

শীত এখনও অনেক দূর। তাতে কী! শীতকালে শিলিগুড়িতে যে সময়ে সন্ধ্যা নামে প্রায় তেমনই হল শ্রাবণের বিকেলে। ঝকঝকে দিনের আলো আচমকাই উধাও। চারদিকে যেন শুধু ঘন অন্ধকার।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫৫
Share:

আকাশ আঁধার করে বৃষ্টির পরে জলমগ্ন পথ জলপাইগুড়িেত। চিন্তায় ব্যবসায়ী।

শীত এখনও অনেক দূর। তাতে কী! শীতকালে শিলিগুড়িতে যে সময়ে সন্ধ্যা নামে প্রায় তেমনই হল শ্রাবণের বিকেলে। ঝকঝকে দিনের আলো আচমকাই উধাও। চারদিকে যেন শুধু ঘন অন্ধকার। সোমবার বেলা সাড়ে চারটে নাগাদ এমনই ঘটেছে শিলিগুড়িতে। সৌজন্য, বজ্রবিদ্যুৎ সহ প্রবল ঝড়বৃষ্টি। তাতে গরমের হাত থেকে সাময়িক স্বস্তি মিললেও রাত পর্যন্ত অবশ্য গুমোট কাটেনি অনেক জায়গারই।

Advertisement

আবহাওয়াবিদদের মতে, বজ্র-বিদ্যুৎ সহ ঝড়-বৃষ্টির জন্যই শহরের দৃশ্যমানতা একেবারেই তলানিতে ঠেকে। সে জন্য স্কুল ভিত্তিক রাজ্য পর্যায়ের খেলা চালাতে শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে ‘ফ্লাড লাইট’ জ্বালিয়ে দিতে হয়। শহরের রাস্তার আলো অবশ্য পুরসভা জ্বালাতে পারেনি। কিন্তু, পথের সব যানবাহনই আলো জ্বালিয়ে চলাফেরা করতে বাধ্য হয়েছে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ঝড়-বৃষ্টি থামলেও দিনের আলো আর দেখা যায়নি। উপরন্তু, নানা এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েন বাসিন্দারা। ঝড়ের দাপটে ক্ষয়ক্ষতিও রয়েছে অনেক। দুর্যোগের সময়ে বাজ পড়ে নকশালবাড়ির কিরণচন্দ্র চা বাগানে একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছে প্রশাসন।

সামান্য বৃষ্টি হলেও গত কয়েকদিন ধরেই শিলিগুড়িতে প্রবল দাবদাহ চলছে। আবহাওয়া দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেই মতো চলতি মাসে রোজই বিকেল সওয়া ৬টা নাগাদ সূর্যাস্ত হওয়ার কথা শিলিগুড়িতে। কিন্তু, এদিন বেলা সওয়া চারটে নাগাদ ঝিরঝিরে বৃষ্টি নামে। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রবল ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে। মিনিট দশেকের মধ্যেই আকাশ কালো হয়ে যায়। সাড়ে চারটে নাগাদ বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি শুরু হয়। ততক্ষণে গোটা শহরের আকাশে মেঘ ছেয়ে গিয়েছে। ঘন অন্ধকারে ঢেকে গিয়েছে শহরের চারদিক। আচমকা সন্ধ্যের পরিবেশ তৈরি হয়। ফলে, স্টেডিয়ামের খেলা চালাতে আলো জ্বালাতে হয় কর্তৃপক্ষকে।

Advertisement

কেন এমন হল?

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-বিশেষজ্ঞ সুবীর সরকার জানান, কয়েকদনি ধরে শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকায় দাবদাহের ফলে স্থানীয় ভাবে নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। বাতাসে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্পও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় নিম্নচাপের কারণেই মূলত এমন বজ্রবিদ্যুৎ সহ ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। চারদিক অন্ধকার হয়ে গিয়েছে।’’ তিনি জানান, স্থানীয় নিম্নচাপের প্রভাব সাধারণত বেশিক্ষণ থাকে না। কিন্তু, যতক্ষণ তার প্রভাব থাকে, ততক্ষণ চারদির অন্ধকার করে প্রবল ঝোড়ো হাওয়া, বৃষ্টি হয়। ঘনঘন বাজও পড়ে। তাঁর মতে, ‘‘এটা খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়।’’

এ দিন ঝড়বৃষ্টির ফলে ক্ষতি হয়েছে জলপাইগুড়ি, ডুয়ার্সেও। বিকেলের কয়েক মিনিটের ঝড় এবং মুষলধারে বৃষ্টির জেরে ডুয়ার্স জুড়ে বিদ্যুত পরিষেবা অচল হয়ে পড়েছে। মালবাজার মহকুমা জুড়ে ঝড়ের তাণ্ডবে প্রচুর গাছ উপড়ে পড়েছে, নাগরাকাটা ব্লক এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি ধরনের হয়েছে বলেও প্রশাসনিক সূত্রের খবর। নাগরাকাটা ব্লকে বেশ কিছু বাড়ির টিনের চালও উড়ে গিয়েছে বলে জানা গেছে।

নাগরাকাটা টেলিফোন এক্সচেঞ্জ এলাকার সামনে রাজ্য সড়কে চামুর্চি গামী একটি যাত্রীবোঝাই বাসের ছাদে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে যায়। তবে বাসটির এবং বাসের যাত্রীদের কোন ক্ষতি হয়নি। নাগরাকাটা বাজার এলাকার নন্দু মোড় ,এবং বুদ্ধমন্দিরের সামনে দুটি বড় গাছ উপড়ে পড়ে। এরমধ্যে নন্দু মোড়ে একটি দাঁড়িয়ে থাকা বাইকের ওপর গাছ পড়লে বাইকটি দুমড়ে যায়। মালবাজারের শহর এলাকায় বেশ কিছু সুপারি গাছ বিদ্যুতের তারের ওপর পড়ে যায়। রাঙামাটি চা বাগান এলাকাতেও বিদ্যুতের ১১ হাজার ভোল্টের তারের ওপর গাছ পড়ে যায়।

নাকাল হন জলপাইগুড়ি শহরের বাসিন্দারাও। এক ঘন্টার বৃষ্টিতে জল জমে শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায়। বাজ পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিদ্যুতের লাইন। শহর নিষ্প্রদীপ হয়ে যায়। সন্ধ্যা ছটা নাগাদ শহরে ফের আলো আসে। জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “অল্প সময়ে বেশি বৃষ্টিপাতের ফলে জল জমেছিল। পরের এক ঘণ্টা জল নেমে যাচ্ছে। এটাই সাধারনত এই শহরে হয়।”

বিশ্বরূপ বসাক ও সন্দীপ পালের তোলা ছবি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন