যুদ্ধ লেগে গেল নাকি!

ঠিক ছিল আগামী মাসের পয়লা তারিখ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। এ দিনের বৃষ্টির পরিমাণ দেখে সেই সিদ্ধান্ত মুলতুবি রেখে রাতারাতি বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করেছে সেচ দফতর।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৮ ০৪:৪১
Share:

গুম গুম শব্দে কেঁপে উঠল দরজা-জানালা। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই কড়াত শব্দে ভোরের নিস্তবদ্ধতা চৌচির। কয়েক সেকেন্ড পরে ফের বিকট শব্দ। বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি শহরে ভোর হল মুহুর্মুহু বজ্রপাতের শব্দ এবং বিদ্যুত চমকে। অন্তত ৪৫ মিনিট ধরে লাগাতার বজ্রপাত হয়েছে শহর এবং লাগোয়া এলাকায়। বাজ পড়ে বিকল বিএসএনএলের অন্তত হাজার দেড়েক ল্যান্ডলাইন সংযোগ। সরকারি-বেসরকারি সংস্থার মোবাইল ফোনের সিগন্যাল দুপুর পর্যন্ত বিপর্যস্ত থাকল শহরে। বজ্রপাতের সঙ্গে চলেছে তুমুল বৃষ্টি। শহরের অন্তত দশটি ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়ে যায়। নিচু এলাকায় জল জমে ছিল বিকেল পর্যন্ত। ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত ঘণ্টা চারেকে শহর এবং লাগোয়া এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে ১৯২ মিলিমিটার।

Advertisement

মে মাসে এমন বৃষ্টি নজিরবিহীন। জলপাইগুড়ি জেলা জুড়েই এ দিন ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার জেরে এ দিন থেকেই বন্যা নিয়ন্ত্রণের কন্ট্রোল রুম খুলে দিয়েছে সেচ দফতর। ঠিক ছিল আগামী মাসের পয়লা তারিখ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। এ দিনের বৃষ্টির পরিমাণ দেখে সেই সিদ্ধান্ত মুলতুবি রেখে রাতারাতি বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করেছে সেচ দফতর। সেচ দফতরের অধীক্ষখ বাস্তুকার ধ্রুবজ্যোতি রায় বলেন, “এখন যা পরিস্থিতি, তাতে কন্ট্রোলরুম শুরু করা ছাড়া উপায় ছিল না। আজ বৃহস্পতিবার থেকেই রাজ্যের কন্ট্রোলরুমে জেলা থেকে রিপোর্ট পাঠানো শুরু হয়েছে। সব নদী পরিস্থিতির ওপরে নজর রাখা হচ্ছে।”

মে মাসে এই পরিমাণ বৃষ্টি যদি নজির হয়, তার সঙ্গে হয়েছে ভোরের বজ্রপাত। ঘনঘন বাজ পড়ায় শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জলপাইগুড়ির রায়কত পাড়ার বাসিন্দা জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এত ঘনঘন বাজের শব্দ কোনওদিন শুনিনি। অতর্কিতে ঘুম ভেঙে মনে হয়েছিল, যুদ্ধ লেগে গিয়েছে। গোলাগুলি চলছে।” বার বার বিদ্যুৎ ঝলকানিতে কাঁচের জানালা ভেদ করে আসতে থাকায় ভয়ে কান্নাকাটি শুরু হয়ে যায় অনেক বাড়িতেই। ব্যাঙ্ককর্মী সুনন্দ দত্ত বলেন, “আমাদের আবাসনে সকলে এক সঙ্গে জড়ো হয়ে থাকেন। কেউ একা ঘরে থাকতে ভয় পাচ্ছিল। বাজের শব্দও ছিল অন্য রকম। গুম গুম শব্দে তিন চার তলায় বাড়িঘর কেঁপে উঠছিল।”

Advertisement

কেন বাজ পড়ে

• কোনও এলাকায় তাপমাত্রা বেশই থাকলে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়।

• এই মেঘ উচ্চতায় অনেক বেশি হয়।

• মেঘের ভিতর জলীয়বাস্প তথা জলাকনার তীব্রবেগে ঘুরতে থাকায় তড়িতকণা তৈরি হয়।

• দুটি বিপরীত তড়িতকণা মিলে গেলেই বজ্রপাত এবং বিদ্যুত ঝলকানি তৈরি হয়।

জলপাইগুড়িতে এমন পরপর বাজ পড়ার ব্যাখ্যা দিয়েছে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর। গত কয়েক দিন ধরে সকালে বৃষ্টি হলেও দুপুরের পর শহরের তাপমাত্রা ছিল অত্যন্ত বেশি। তার জেরে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়েছিল শহরের আকাশে। সঙ্গে নিম্নচাপ অক্ষরেখার টানে জলীয় বাস্প ছুটে আসায় বাজ পড়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। তার জেরেই এ দিন দুর্যোগের ভোর দেখেছে শহর।

বজ্রপাত থেকে বাঁচার উপায়

• বাজপড়া শুরু কলে পাকাবাড়ির ভিতর আশ্রয় নিতে হবে।

• বিদুতের তারের নীচে থাকা চলবে না

• গাড়িতে না থাকাই ভাল

• খোলা আকাশের নীচে একেবারেই থাকা যাবে না।

• বাড়ির ভিতরে খালি পায়ে থাকা চলবে না।

• বাড়ির আশেপাশে উঁচু গাছ লাগালে ভাল, মাটিতে পড়ার আগেই গাছ বাজ টেনে নেয়

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, “পূর্ব বিহার থেকে বিস্তৃত একটি ঘুর্ণাবর্ত, তার সঙ্গে বাতাসের উপরিভাগে নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হয়েছিল। বর্জগর্ভ মেঘ জমে ছিল উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায়। কিছু এসলাকায় তাই ঘনঘন বাজ পড়েছে।” আগামী কয়েক দিন শহর এবং লাগোয়া এলাকায় বৃষ্টি চলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন