উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল

সুপারকে হেনস্থা, ক্ষুব্ধ হাসপাতাল কর্মীরাও

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের সুপার নির্মল বেরাকে ছাত্র ও জুনিয়র ডাক্তারদের কয়েকজন হেনস্থা করায় ক্ষুব্ধ হাসপাতালের কর্মীরাও। মাটির মানুষ বলে পরিচিত প্রবীণ শিক্ষক নির্মলবাবু দক্ষতার সঙ্গেই হাসপাতালের প্রসাসন চালাচ্ছেন বলে তাঁদের দাবি। তাঁরা জানাচ্ছেন, যে কোনও বিপদ আপদে নির্মলবাবুকে পাশে পাওয়া যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:০৬
Share:

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের সুপার নির্মল বেরাকে ছাত্র ও জুনিয়র ডাক্তারদের কয়েকজন হেনস্থা করায় ক্ষুব্ধ হাসপাতালের কর্মীরাও। মাটির মানুষ বলে পরিচিত প্রবীণ শিক্ষক নির্মলবাবু দক্ষতার সঙ্গেই হাসপাতালের প্রসাসন চালাচ্ছেন বলে তাঁদের দাবি। তাঁরা জানাচ্ছেন, যে কোনও বিপদ আপদে নির্মলবাবুকে পাশে পাওয়া যায়। এ দিনও তেমনই একটি অসুবিধার কথা শুনে ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্যে থেকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যেতে চাইছিলেন। সে সময়েই কেন তিনি আন্দোলনের মাঝখান থেকে উঠে চলে যাচ্ছেন, এই প্রশ্ন তুলে তাঁকে গালি দেওয়া হয়। ধাক্কাও দেন এক ছাত্র। এই অপমানে তিনি কেঁদে ফেলেন।

Advertisement

হাসপাতাল কর্মীদের মধ্যে প্রশান্ত সরকার, উৎপল সরকাররা জানান, ‘‘একজন শিক্ষককে হেনস্থা করা ভাবা যায় না। নানা দিক সুপারকে সামলাতে হচ্ছে। তা ছাড়া তাঁকে ঘেরাওয়ের মধ্যে ডেকে নেওয়া হল কেন সেটাই তো বুঝতে পারছি না।’’ তা ছাড়া ওই ছাত্র অভীক দে-র আচরণ নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন কর্মীরা। এ দিন কলেজের বিরোধী ছাত্র সংগঠন ডিএসও-র তরফেও অভীক দে-র বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে জানানো হয়, এদিন কলেজে পরীক্ষার শেষে হলে ঢুকে অভীক দে দুই ছাত্রের খাতা ফিরিয়ে দিয়ে আরও লেখার সুযোগ করে দিয়েছে। অধ্যক্ষ জানান, অভিযোগ পেয়েছি। খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভীক অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

অটোচালকেরা এক ছাত্রকে মারধর করেছে অভিযোগে এ দিন আন্দোলন হচ্ছিল অধ্যক্ষ সমীর ঘোষ রায়ের ঘরেই। কলেজের এক ছাত্রকে মদ্যপ অবস্থায় উত্তরবঙ্গে মেডিক্যালের ক্যাম্পাসের স্ট্যান্ডের অটো চালকদের কয়েকজন বুধবার রাতে মারধর করে বলে অভিযোগ ওঠে। ওই ছাত্রের দিদির শিশু সন্তান মেডিক্যালে ভর্তি। অভিযোগ, তাঁর হোটেলে ফেরার জন্য টোটো ভাড়া করে আনলে বাধা দেন সিটি অটো চালকেরা। তা নিয়ে গোলমাল বাঁধে। তা নিয়েই ঘটনার সূত্রপাত। দুপুরে অধ্যক্ষ সমীর ঘোষ রায়ের দফতরে গিয়ে তাঁকে ঘেরাও করেন ছাত্র এবং জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা অধিকাংশ টিএমসিপি-র ছাত্র, নেতা। ক্যাম্পাস থেকে অটোস্ট্যান্ড অবিলম্বে তুলে দেওয়ার দাবি তোলেন তাঁরা। তাদের আর্জিতে হাসপাতালের দফতর থেকে ডেকে আনা হয় সুপার নির্মল বেরাকে। তিনি এসে জেলাশাসককে ফোন করে বিষয়টি জানিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলান। কর্তৃপক্ষ জানান, জেলাশাসকের নির্দেশ মতো অটোস্ট্যান্ড তুলে দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই দফতর থেকে জরুরি কাজের খবর পেয়ে সুপার চলে যাবেন বলে ওঠেন। তখন তাঁকে হেনস্থা করে আন্দোলনকারী ছাত্ররা। অভিযুক্ত তথা তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত জুনিয়র ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশনের নেতা অভীক দে বলেন, ‘‘ধাক্কা দেওয়া হয়নি। তিনি কেন ছাত্রদের সমস্যা না মিটিয়েই চলে যাচ্ছেন সে জন্যই তাঁকে বলা হয়েছে।’’

Advertisement

সুপার বলেন, ‘‘ছাত্ররা গালিগালাজ করবে, এটা মেনে নিতে পারছি না। বিষয়টি আমাকে ব্যথিত করেছে। ওদের সমস্যার জন্য জেলাশাসককে ফোন করে অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলার পর ব্যবস্থা নেওযা হচ্ছে বলেও জানানো হয়। তা ছাড়া হাসপাতালে আমি না থাকলে বিভিন্ন জরুরি কাজ আটকে যাবে। তাই চলে আসতে হয়েছে।’’ তিনি জানান, অসুস্থতার জন্য ডেপুটি সুপার এদিন ছুটিতে। অপারেশনের জরুরি জিনিস কেনা, কোনও রোগী নিখরচায় চিকিৎসা করাতে এলে তিনি অনুমোদন না করে পর্যন্ত রোগী দাঁড়িয়ে থাকবে। মেল ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে অভিযোগে রোগীর লোকেরা নার্সদের ছবি তুলছিল বলে তাঁরা তখন দফতরে এসে অভিযোগ করতে অপেক্ষা করছিলেন। হাসপাতালের পরিষেবায় সমস্যা হচ্ছিল। সে জন্যই তাঁকে চলে আসতে হয়েছে। অধ্যক্ষের দাবি, হাসপাতালের জরুরি কাজের কথা বলে সুপার যেতে চান। সে সময ছাত্ররা বাধা দিচ্ছিল। অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘ঘরের মধ্যে কাউকে গালিগালাজ দিতে দেখিনি। বাইরে কী হয়েছে বলতে পারব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন