আলাদা: মৌসমের অংশে তৈরি হওয়া নতুন দরজা। নিজস্ব চিত্র
প্রায় আড়াই বছর আগে প্রথম কোতোয়ালির বাড়িতে ফাটল ধরে। গনিখানের ভাই আবু নাসের খান চৌধুরী (লেবু) তৃণমূলে যোগ দেন তখন। বাড়ি ভাগ হয়ে যায়। তৈরি হয় নতুন সিংহদরজা। সম্প্রতি আরও একটি সিংহদরজা তৈরি হয়েছে কোতোয়ালি ভবনে। করিয়েছেন মৌসম বেনজির নুর। তত দিনে তাঁর সম্পর্কে চূড়ান্ত জল্পনা, শীঘ্রই তৃণমূলে যাচ্ছেন।
সোমবার সেটাই হয়ে গেল পাকাপাকি ভাবে। নবান্নে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মৌসম দেখা করার পরে পাকাপাকি ভাবে তিনটে ভাগ হয়ে গেল গনির বাড়ি। সেখানেই শুভেন্দু অধিকারী ঘোষণা করে দিলেন, নিজের উত্তর মালদহ লোকসভা আসন থেকেই তৃণমূল প্রার্থী হবেন মৌসম। এবং এর কিছুক্ষণের মধ্যে নতুন করে কোতোয়ালির অন্দরে লড়াই ঢুকিয়ে দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র, ওই কেন্দ্র থেকে মৌসমের মামাতো ভাই, ডালুবাবুর ছেলে ইশা খান চৌধুরীকে প্রার্থী ঘোষণা করে।
লেবুবাবুর বিরুদ্ধেও প্রার্থী হয়েছিলেন ইশা। সেই বিধানসভা ভোটে হারিয়েওছিলেন কাকাকে। এ বারে কিন্তু মৌসম দল বদল করায় দৃশ্যতই হতাশ তিনি। শুধু তিনিই বা কেন, গোটা বাড়ি আলো আঁধারে ঢেকে। লেবুবাবু অসুস্থ। মৌসমের মহলেও বিশেষ সাড়া-শব্দ নেই।
মৌসম তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরই অনর্গল ফোন আসতে শুরু করে ইশার। তারই ফাঁকে তিনি বলেন, ‘‘দরজা তৈরি হচ্ছে দেখেই আন্দাজ করেছিলাম। মৌসমকে বোঝানো হয়েছিল যাতে, দল না বদলায়।’’ বোনের বিরুদ্ধে তাঁকেই যে প্রার্থী করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে, তা তখনও জানেন না ইশা। শুনে বললেন, ‘‘আমার এখনও জানা নেই। তবে দলের নির্দেশে কাকার বিরুদ্ধে লড়েছি। দল বলতে বোনের বিরুদ্ধেও লড়তে রাজি আছি।’’
২০১৬ সালে সুজাপুর থেকে বিধানসভা ভোটে কাকার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সাফল্য পেয়েছিলেন ইশা। এ বারে? বোনের দলবদলের ধাক্কা সামলাতে ব্যস্ত ইশা এই নিয়ে কোনও কথা বলতে চাইছেন না এখনই। শুধু বলেন, ‘‘দেখা যাক।’’
মৌসমের মহলের বাইরে নতুন সিংহদরজা থেকে এখনও রঙের গন্ধ যায়নি। সামনে দাঁড়ালেই বোঝা যাচ্ছে, এত দিন এখানে টানা পাঁচিল ছিল। সেটাই কিছুটা ভেঙে দরজা বসেছে। পাশের দেওয়াল যেখানে জায়গায় জায়গা নোনা ধরা, দরজার দু’পাশের স্তম্ভে সেখানে নতুন সিমেন্টের প্রলেপ। এর পরে হয়তো রংও করা হবে।
মৌসমের দলবদলকে গনি পরিবারে সাম্প্রতিক সময়ে সব থেকে বড় ভাঙন বলে মনে করছেন এলাকার লোকজন। তাঁরা বলছেন। কংগ্রেসের শীর্ষস্তরে ভাই রাহুল গাঁধীর ডাকে বোন প্রিয়ঙ্কা রাজনীতিতে নেমেছেন। আর গনির পরিবারে সেখানে ভাইবোনেই লড়াই! তাঁদের প্রশ্ন, মৌসম কি গনির ভোটবাক্সে ভাঙন ধরাতে পারবেন?