ইদানিং কালের মধ্যে বোধহয় স্মরণীয় সেই ৮ নভেম্বর হঠাৎ করে ঘোষণা হওয়া এক নির্দেশিকা। ৯ নভেম্বর সকাল থেকেই সকল ভারতবাসীর মতো আমারও বুক কেঁপে উঠল। এবার তবে আমার কী হবে! হঠাৎ যেন যুদ্ধের ঘোষণা।
ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি ‘তফাৎ’ শব্দটা। মানে বড়লোক আর গরিবের তফাৎ। আচ্ছা, এ পার্থক্য কোনদিন ঘোচার? বড়লোক আরও বড়লোক হবে। গরিব লোক শুধুই নির্যাতিত। বড়লোকের তো অনেক চাহিদা। গরিবের শুধু সাধারণ ভাবে খেয়ে পরে বেঁচে থাকা।
৯ নভেম্বর সকাল থেকেই আমি এবং প্রায় অধিকাংশ সাধারণ মানুষই তো হাতাপাতি করে খুঁজতে শুরু করি ৫০০-১০০০ ছাড়া কোথায় কতো খুচরো আছে। প্রথম প্রথম দোকানদার, মাছওয়াল, সব্জিওয়ালা সবাই ধারে জিনিস দিচ্ছিল। তার পর ক্রমশই এই দাতাগিরি কমে এল। বাকি টাকা কবে পাওয়া যাবে ঠিক নেই তো! ব্যাঙ্ক, এটিএম, পোস্ট-অফিস প্রায় সর্বত্রই নেই-নেই হাহাকার। ব্যবসা লাটে উঠেছে। সংসারের কাজ ভেসে গেল। রাস্তাঘাট সুনসান। শুধু ব্যাঙ্ক এটিএম ইত্যাদিগুলোর সামনে অকারণ হয়রানির লাইন।
দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে জীবনের প্রদীপও অনেকের নিভে গেল।
হ্যাঁ পরিকল্পনটা মনে হয় বেশ ভালই ছিল। কিন্তু বিন্যাস? সেখানেই মনে হয় বেশ কিছু ভুল থেকে গেছে। না হলে দেশ জুড়ে এই আন্দোলন বোধহয় এতটা হতো না।
অসময়ে বন্ধুদের নাকি বেশ চেনা যয়া। এখন কিন্তু শুধু বন্ধু নয়, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, কর্মস্থলের সহকর্মী অনেকেই একটি বেশি বিপদে পড়লে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এটা তো বেশ ভাল লক্ষণ।
আমার মনে হয় নিজের টাকা থেকেও না পাওয়ার এই আকাল বুঝিয়ে দিচ্ছে টাকার মূল্য। শেখাচ্ছে সঞ্চয় করার নিয়ম আর প্রয়োজনীয়তা। বেহিসাবি খরচ নাই বা করলাম। এই যে একটা নতুন অভিজ্ঞতা। এ যেন খাড়া-বড়ি-থোড়ের পানসে জীবনের অন্য চড়ুইভাতি। একটা কথা আছে না, সব ভাল যার শেষ ভাল। এখন শুধু তারই প্রতীক্ষা।