স্বামীর কী হয়েছে, জানার অধিকার নেই কেন

জ্বর, পিঠে ব্যথায় দুই-তিন দিন কাটে। ঝুঁকি না নিয়ে স্বামীকে ১০ অগস্ট শিলিগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি করাই। তিনি ভিডিও ছবি তুলতেন।

Advertisement

পিঙ্কি দত্ত

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৪২
Share:

মৃত পলাশ দত্তের স্ত্রী

জানি না, কী করব। জানি না, কী করে তিনি চলে গেলেন। আমাকে কেউ কিছুই জানায়নি।

Advertisement

অথচ, ডেঙ্গি রোগটা আমার সংসারটাকে ভেঙে তছনছ করে দিয়ে চলে গেল। ১২ এবং ১০ বছরে দুই ছেলেকে কী করে মানুষ করব তা ভেবেই রাতে ঘুমতে পারি না।

জ্বর, পিঠে ব্যথায় দুই-তিন দিন কাটে। ঝুঁকি না নিয়ে স্বামীকে ১০ অগস্ট শিলিগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি করাই। তিনি ভিডিও ছবি তুলতেন।

Advertisement

হাসপাতালে কিন্তু রোগীর কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করলেও চিকিৎসক, নার্সরা উত্তর দিচ্ছিলেন না। রিপোর্ট দেখাচ্ছিলেন না। পরদিন রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। চিকিৎসকের কাছে রিপোর্ট চাইলে তিনি জানান নার্সের কাছে আছে। নার্স বলেন চিকিৎসকের কাছেই আছে। কেন এ ভাবে লুকোছাপা করা হচ্ছিল, সেটাই তো স্পষ্ট নয়!

হাসপাতালের ভরসা করে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলাম। সব দেখে মনে হচ্ছে, রোগ লুকোনোর চেষ্টা হচ্ছে। তা ছাড়া, আয়াদের টাকা না দিলে তাঁরা কিছু করবেন না। আবার স্যালাইন লাগানো থেকে ওষুধ খাওয়ানো সবেতেই আয়াদের ছাড়া চলা যাবে না। দু’বেলা মিলিয়ে তাই আয়াদের ২০০ টাকা করে দিতে হচ্ছিল। না দিলে হাসপাতালে আপনার রোগী স্যালাইন পাবে না, ওষুধ পাবে না। আর চিকিৎসক এবং নার্সদের কাছে কিছু জানতে গেলেই তাঁরা দুর্ব্যবহার করছেন। ধমক দিচ্ছেন।

শুনছি ডেঙ্গি হলে না কি চিকিৎসকরা লিখতে পারবেন না। তা হলে ঠিক কী হয়েছে সেটা পরিবারের লোকেরা, আত্মীয়েরা জানবেন না? শুধু চিকিৎসকই জানবেন, এবং তিনি তাঁর মতো চিকিৎসা করবেন? আমাদের জানার অধিকার নেই? বারবার বলার পর নার্স দেখালেন প্লেটলেট কাউন্টের একটি রিপোর্ট। তাতে জানা গেল প্লেটলেট কমে ৯২ হাজার হয়েছে। কিন্তু ডেঙ্গি হয়েছে কি না সেই রিপোর্ট কিন্তু হাসপাতাল থেকে দেয়নি। চিকিৎসক মুখে কেবল বলছেন ডেঙ্গির চিকিৎসাই চলছে।

১২ অগস্ট রাত ১০ টা নাগাদ হাসপাতালে স্বামীর সঙ্গে কথা বলেছি। রাত ১১টা নাগাদ চিকিৎসক জানান ‘ব্রেন স্ট্রোক’ হয়েছে। সে কারণে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে তাঁরা রেফার করে দিচ্ছেন। হাসপাতালের পরিস্থিতি দেখে এর পর আর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে নিতে সাহস পাইনি। খালপাড়ার একটি নার্সিংহোমে তাঁকে ভর্তি করাই। সেখানে ওঁকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়। কয়েক দিন চিকিৎসা চলার পর ১৮ অগস্ট তিনি মারা যান। ডেঙ্গি হয়েছে কি না, রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট কিন্তু পেলাম না।

মৃত্যুর খবর পেয়ে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নতুনপাড়া এলাকায় আমাদের বাড়িতে ওই দিন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা এলেন। কোথাও জল জমে রয়েছে কি না দেখলেন। মশার লার্ভাও পেলেন। মশার তেল স্প্রে করা হল। এ সব তো আগেও করা যেত। রোগে মারা গেলে তবেই সকলের টনক নড়বে? তার আগে কোনও কাজ হবে না?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন