অনশন চাপে কি ২০%

অনশন, বিক্ষোভ, বন্‌ধ সহ টানা আন্দোলনের জেরে মালিকপক্ষ তাদের দাবি মানতে বাধ্য হয়েছেন বলেই মনে করছেন বিনয়পন্থী মোর্চা, সিপিএম, তৃণমূল, জাপ, গোর্খালিগ, সিপিআরএম ও হিল কংগ্রেসের চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথ কমিটির নেতৃত্ব। 

Advertisement

শুভঙ্কর চক্রবর্তী

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:১৪
Share:

হাসপাতালের পথে বিনয়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়েছিল শ্রমিক ও মালিক পক্ষের আলোচনা। দফায় দফায় বৈঠক শেষে শুক্রবার শ্রমিকদের দাবি মেনে নিল মালিকপক্ষ। তাতেই দার্জিলিংয়ের ৮৭টি চা বাগানের বোনাস নিয়ে একমাস ব্যাপী চলতে থাকা টানাপড়েনে অবসান ঘটল বলেই জানিয়েছেন শ্রম দফতরের কর্তারা। আলোচনার শুরুতে ৮.৩৩ শতাংশ হারে বোনাস দেওয়ার কথা বলেছিলেন মালিকরা। প্রথম থেকেই শ্রমিকদের দাবি ছিল ২০ শতাংশ। অনশন, বিক্ষোভ, বন্‌ধ সহ টানা আন্দোলনের জেরে মালিকপক্ষ তাদের দাবি মানতে বাধ্য হয়েছেন বলেই মনে করছেন বিনয়পন্থী মোর্চা, সিপিএম, তৃণমূল, জাপ, গোর্খালিগ, সিপিআরএম ও হিল কংগ্রেসের চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথ কমিটির নেতৃত্ব।

Advertisement

বরাবরই ডুয়ার্স ও তরাইয়ের সঙ্গে না হয়ে আলাদা ভাবে পাহাড়ের চা বাগানগুলোর বোনাস চুক্তি করা হয়। দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে বোনাস নিয়ে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে ৬টি বৈঠক হয়। কোনও বৈঠকেই সমাধান সূত্র বের না হওয়ায় ৩০ সেপ্টেম্বর কলকাতায় ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকে রাজ্য শ্রম দফতর। সেই বৈঠকে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক উপস্থিত ছিলেন।

যৌথ কমিটির দাবি ওই বৈঠকে মালিকরা ৮.৩৩ থেকে বাড়িয়ে ১০.৫০ শতাংশ হারে বোনাস দেওয়ার কথা বলেছিলেন। শ্রমিক সংগঠনগুলোর আপত্তিতে বৈঠক ভেস্তে যায়। তার পরে ১২ শতাংশ হারে বোনাস দেওয়ার কথাও ওঠে। শ্রমিক সংগঠনগুলো তা মানতে চায়নি। তারপরই আন্দোলনে নামে যৌথ কমিটি।

Advertisement

কী পথে বোনাস

•সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত ছ’টি দ্বিপাক্ষিক ও একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক।

•৩ অক্টোবর মোটরস্ট্যান্ডে রিলে অনশন শুরু সাত চা শ্রমিক সংগঠের যৌথ কমিটির।
•৪ অক্টোবর পাহাড়ে বন্‌ধ।
•৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় অনশন প্রত্যাহার যৌথ কমিটির।
•৬ অক্টোবর আমরণ অনশন শুরু বিনয় তামাংয়ের।
•১০ অক্টোবর ফের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকল শ্রম দফতর
•১১ অক্টোবর ২০ শতাংশ বোনাসের দাবি মানল মালিক পক্ষ। অনশন প্রত্যাহার বিনয়ের।

১ অক্টোবর থেকে পাহাড়ের বাগানগুলিতে শুরু হয় গেট মিটিং, বিক্ষোভ, প্রতিবাদ সভা। ওই দিনই দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও যুগ্ম শ্রম কমিশনারকে (উত্তরবঙ্গ) চিঠি দিয়ে সমস্যা মেটাতে হস্তক্ষেপ করার দাবি জানায় কমিটি। ৩ অক্টোবর থেকে দার্জিলিংয়ের মোটরস্ট্যান্ডে মঞ্চ বেঁধে রিলে অনশন শুরু করেন কমিটির নেতারা। ৪ অক্টোবর যৌথ কমিটির ডাকে পাহাড়ে ১২ ঘণ্টার বন্‌ধ পালিত হয়।
প্রথম ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পরই বিনয় ঘোষণা করেছিলেন ৪ অক্টোবরের মধ্যে শ্রমিকদের দাবি মেনে না নিলে তিনি আমরণ অনশনে বসবেন। সেই মতো ৬ অক্টোবর থেকে মোটরস্ট্যান্ডে অনশন শুরু করেন বিনয়। পুজোর জন্য যৌথ কমিটি আন্দোলন শিথিল করার কথা ঘোষণা করলেও জানিয়ে দেয় দাবি না মানা পর্যন্ত তৈরি কারখানা থেকে চা বাইরে যেতে দেবে না তাঁরা। ফলে বাগান বা কারখানা চালু থাকলেও দার্জিলিং চায়ের ব্যবসা কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। সমস্যা মিটে যাওয়ায় আজ, শনিবার থেকে পাহাড়ের চা শিল্প স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে বলেই মনে করছেন বাগান মালিক পক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন