পুলিশের অনুষ্ঠানকে বিজেপির কর্মসূচি বলে প্রচারের ঘটনা কেন ঘটেছে, তা নিয়ে বিভাগীয় তদন্তের পরে শিলিগুড়ির প্রধাননগরের আইসি তপন ভট্টাচার্যকে সরিয়ে দেওয়া হল। পুলিশ সূত্রের খবর, তপনবাবুকে পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ’ করে তাঁর জায়গায় আপাতত শিলিগুড়ির সাইবার সেল-এর ইন্সপেক্টর শুভাশিস চাকিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ওই ঘটনায় আগেই প্রধাননগরের একজন এসআই পার্থসারথি চন্দকেও পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, আইসি-র বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ মেলায় তাঁকে সরানো হয়েছে। আইসি তপনবাবু অবশ্য শুধু বলেছেন, ‘‘যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবেন।’’ শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, দফতরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করা সম্ভব নয়।
তবে রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানান, বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্টে আইসি সহ কয়েকজনের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু তথ্য রয়েছে। তা ছাড়া, ডিজির নির্দেশ রয়েছে, প্রত্যন্ত এলাকায় জনসংযোগ শিবির করতে হবে পুলিশকে। সেখানে থানা থেকে মাত্র ৩০০ মিটার দূরে কেন জনসংযোগ শিবিরের জন্য জায়গা বাছা হল, সেটাও স্পষ্ট নয় পুলিশ কর্তাদের কাছে। শুধু তা-ই নয়, অনুষ্ঠানের আগে একাধিকবার সিপি জানিয়ে দিয়েছিলেন, সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ভাবে শিবির করার নির্দেশ রয়েছে। সেখানে কুলিপাড়ায় মাইক, চেয়ার থেকে সব কিছুই কী ভাবে বিজেপির নেতাদের একাংশ নিয়ন্ত্রণ করছিলেন, তা নিয়ে পুলিশের অন্দরেই ক্ষোভ রয়েছে।
৩০ জুন শিলিগুড়র প্রধাননগর থানার কুলিপাড়ায় ওই ঘটনাটি ঘটেছে। সে দিন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার ডিজি-র নির্দেশ মতো জনসংযোগ কর্মসূচিতে যোগ দিতে কুলিপাড়ায় যান। কিন্তু অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে বিজেপির তথ্য প্রযুক্তি সেলের আহ্বায়ক অর্জিত দত্ত জোয়ারদার ‘হোয়াটসঅ্যাপ’-এ ওই অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে জানান, বিজেপি-র উদ্যোগে সওয়াল-জবাব অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন পুলিশ কমিশনার সহ কয়েকজন। তা নিয়ে নানা মহলে হইচই শুরু হয়। নবান্নের এক পুলিশ কর্তা তা জানতে পেরে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারের কাছে বিষয়টি জানতে চান। তত ক্ষণে, পুলিশ কমিশনার অনুষ্ঠানে চলে গিয়েছেন। সেখানে সিপি-র পাশেই দেখা যায় বিজেপির স্থানীয় কাউন্সিলর মালতি রায়, ওয়ার্ড কমিটির নানা স্তরের নেতাকে। এমনকী, অন্য ওয়ার্ডের বিজেপি নেতাকেও সেখানে দেখা যায়। শুধু তা-ই নয়, পুলিশের বিরুদ্ধেই নানা অভিযোগ তুলে বাসিন্দা তথা বিজেপির অনেকেই সরব হন।
ইতিমধ্যে শিলিগুড়ির ওই ঘটনার খবর পৌঁছে যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও। এর পরে নবান্ন থেকে বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। সম্প্রতি দার্জিলিং সফরের সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্য পুলিশের ডিজি জিএমপি রেড্ডিও শিলিগুড়িতে ছিলেন। সরকারি সূত্রের খবর, সেই সময়ে পুলিশের অনুষ্ঠানকে দলীয় কর্মসূচি বলে প্রচারের প্রেক্ষাপটে প্রধাননগর থানা পর্যায়ের কয়েকজন অফিসারের ভূমিকা নিয়ে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরেই শীর্ষ কর্তারা তদন্তে নেমে পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মাকে রিপোর্ট দেন। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পরে তা নবান্নেও পাঠানো হয়। পুলিশ সূত্রেই খবর, ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরেই আইসিকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন পুলিশ কর্তৃপক্ষ।
ঘটনাচক্রে, বিজেপির নেতা অর্জিতবাবুর বিরুদ্ধেও পুলিশ মামলা দায়ের করেছে। তিনি আপাতত জামিনে মুক্ত। আইসিকে সরানোর বিষয়ে অর্জিতবাবুর মন্তব্য, ‘‘বিষয়টি বিচারাধীন। তাই আমি কোনও মন্তব্য করব না।’’