সেবকে তিস্তা নদীর বুকে উঠেছে পাঁচিল। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
পুলিশ-প্রশাসনের আশ্বাসই সার। সেবকে তিস্তার ধারে নদীবক্ষ, বাঁধ দখল করে ঘর বানিয়ে বিক্রির কারবার রমরমিয়ে চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিলিগুড়ি থেকে নিয়মিত সেবকে গিয়ে পানভোজন করেন যাঁরা, এমন অনেকেই তিস্তার ধারে এক কামরার ঘরের জন্য ৫-৭ লক্ষ টাকা দিতে রাজি হয়ে যাচ্ছেন। তাতেই নদী দখলের কারবার যেন ফুলেফেঁপে উঠছে।
অথচ সেবকে তিস্তা নদীর গতি আটকে কংক্রিটের দেওয়াল তুলে রিসর্ট তৈরি রোখার আশ্বাস দিয়েছিলেন দার্জিলিঙের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব। সেচ দফতরের পক্ষ থেকেও খোঁজখবর নিয়ে ওই বেআইনি নির্মাণ ভেঙে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল। পুলিশের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছিল, দার্জিলিং জেলায় ভোটগ্রহণ পর্ব মিটলেই প্রশাসনের নির্দেশ মেনে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। ভোটগ্রহণের পাট চুকলেও তিস্তার বুকে গজিয়ে ওঠা ওই সব বেআইনি রিসর্টের বিরুদ্ধে কোনও অভিযান শুরু হয়নি। কেন হয়নি, সেই প্রশ্নে সেবকে এর মধ্যেই ক্ষোভ দানা বাঁধছে। এমনকী, সেবকের বাতাসে এমন অভিযোগও ভাসছে যে, পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের যোগসাজশেই সেবকে আইন ভাঙার প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। শুধু তা-ই নয়, একাধিক ব্যবসায়ীকে সেখানে বলতে শোনা গিয়েছে, পুলিশ-প্রশাসন ও সেচ দফতরের একাংশের সঙ্গে ‘আলাপ-আলোচনার পরেই সব বন্দোবস্ত’ হয়ে তাকে। ফলে, রিসর্ট ভাঙতে অভিযান হওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই বলে ওই ব্যবসায়ীদের দাবি। যদিও দার্জিলিঙের জেলাশাসক জানিয়ে দিয়েছেন, কোথাও বেআইনি নির্মাণ বরদাস্ত করা হবে না।
পুলিশ সূত্রের খবর, জেলাশাসকের দফতর থেকে ওই বেআইনি নির্মাণ ভাঙার ব্যাপারে খোঁজখবরও নেওয়া হয়েছে। যিনি নির্মাণ করেছেন, তাঁকে পুলিশ খুঁজে পায়নি। তা হলে ওই এলাকায় রোজ ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে কী ভাবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দাদের অনেকেই। পুলিশের কয়েক জনের দাবি, কলকাতার এক ব্যবসায়ী প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে তিস্তার বুকে দেওয়াল তোলার সাহস পেয়েছেন। তবে শীঘ্রই ওই বেআইনি নির্মাণ ভাঙা হবে বলে পুলিশের দাবি।
তিস্তার জল যাতে জাতীয় সড়কে ধাক্কা মারতে না পারে, সে জন্য বাঁধ (স্পার) তৈরি করেছে সেচ দফতর। সেই ‘স্পার’ বরাবর কংক্রিটের দেওয়াল উঠেছে। সূত্রের খবর, সেচ দফতরের একাধিক অফিসার সেবকের ধাবায় গিয়ে ওই নির্মীয়মান রিসর্ট দেখেছেন। তার পরেও সেচ দফতর কেন তা ভাঙতে উদ্যোগী হচ্ছে না, তা নিয়ে তদন্তের দাবি উঠেছে দফতরের মধ্যেই। দফতরের মালবাজার মহকুমার এক অফিসারের ভূমিকা নিয়েও সেচভবনে অভিযোগ পৌঁছেছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে সেচভবনের এক কর্তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। সেবকের ওই এলাকায় ‘স্পার’-এর উপরেও ঘরদোর তৈরি হয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের কয়েক জন জানান, বাঁধে ও নদী বক্ষের কিনারায় তৈরি ঘরদোর কিনতে উৎসাহীদের ভিড়ও হচ্ছে।
এত উৎসাহ কীসের? ওই এলাকার প্রবীণ বাসিন্দাদের কয়েক জন জানান, সেবকে তিস্তার ধারের ধাবায় বেআইনি মদের আসর বসার অভিযোগ নতুন কিছু নয়। যে কোনও সময় সেবকের কয়েকটি ধাবায় গেলেই ওই দৃশ্য চোখে পড়বে। অথচ পুলিশ-প্রশাসনের এই নিয়ে কোনও হেলদোল নেই। অভিযোগ, বেআইনি মদের কারবার, লাইসেন্স বিহীন পানশালা চালিয়ে সাহস সঞ্চয়ের পরে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী এখন তিস্তার চর, নদীখাত দখল করে টাকা কামানোর রাস্তায় নেমে পড়েছেন। শিলিগুড়ি ও দার্জিলিঙের এক শ্রেণির নেতাকেও নানা কায়দায় ওই কারবারিরা কাছে টেনে নিয়েছেন বলেও সন্দেহ করছেন বাসিন্দাদের অনেকে। এলাকাটি জিটিএ-এর আওতায় পড়ে। জিটিএ-এর অন্যতম সদস্য তথা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরিও সব অভিযোগ শুনেছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমরা সবই খোঁজ নিচ্ছি। কোনও বেআইনি কাজ বরদাস্ত হবে না।’’
আশ্বাস দেওয়ার ব্যাপারে নেতা-কর্তাদের এক জনের সঙ্গে অন্য জনের বড়ই মিল। কাজকর্মেও তা-ই কি না, সেটা সময়ই বলবে।
(চলবে)