হিলকার্ট রোডে গাড়ির বেআইনি পার্কিং। ছবি: সন্দীপ পাল।
বেশ কিছু দিন ধরেই ‘আমার শহর’-এ শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের নানা এলাকার সমস্যার কথা তুলে ধরা হচ্ছে। তবুও অনেক সমস্যা যেন বেড়ে চলেছে। বিশেষত, শিলিগুড়ি শহরের পার্কিং সমস্যা প্রতিদিনই ক্রমশ জটিল হচ্ছে। অতীতে হিলকার্ট রোড এক লেনের ছিল। তাতে তেমন যানজট হতো না। একটাই সেতু ছিল। তাতেও যানজটে জেরবার হতাম না। এখন হিলকার্ট রোড দু’লেনের। আগের চেয়ে চওড়া হয়েছে। দু’টি সেতু হয়েছে হিলকার্ট রোডে। তাও যানজট আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। বিধান রোড, সেবক রোডের চেহারাও তাই। ওই তিনটি রাস্তার দু’ধারের অনেক ব্যবসায়ী রীতিমতো লোহার ব্যারিকেড, বোর্ড টাঙিয়ে রাস্তার দারের জায়গাটি নিজেদের গাড়ি রাখার জন্য বলে দাবি করছেন। পুরসভার তরফে যাঁদের পার্কিংয়ের লাইসেন্স দেওয়া হয়, তাঁদের সঙ্গে লিখিত কিংবা অলিখিত চুক্তির ভিত্তিতে ওই জায়গা এক শ্রেণির ব্যবসায়ী নিজের দখলে রাখেন বলে শুনেছি। এটা তাঁরা পারেন কি? না পারলে পুরসভা কেন হাত গুটিয়ে বসে থাকে? পুলিশই বা কী করছে? ট্রাফিক বিভাগের কর্তারা কী পারেন শহরের রাস্তার ধারের পুরসভার বোর্ড ছাড়া সব ‘পার্কিং বোর্ড’ হটিয়ে দিতে?
যদি না পারেন, তা হলে আমজনতাকেই জোট বেঁধে বোর্ড সরানোর দাবি তুলতে হবে। শিলিগুড়ির নাগরিক সমাজের কাছে আমার আবেদন, সম্মিলিত ভাবে জনমত তৈরি করতে উদ্যোগী হন। শহরের সংস্কৃতিপ্রেমী সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে রাস্তার ধারের জায়গা বোর্ড টাঙিয়ে একশ্রেণির ব্যবসায়ীর দখল করে রাখার প্রবণতা বন্ধের জন্য আওয়াজ উঠুক।
পরিশেষে সখেদে জানাই, তিনটি রাস্তায় নিত্য চলাফেরা সুবাদে আমরা অনেকেই দেখতে পাই, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ক, সরকারি সংস্থার তরফে অফিসের সামনে কিছুটা জায়গা অস্থায়ী রেলিং দিয়ে ঘিরে তাদের সংস্থার যানবাহন রাখার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এটা কী কোনও ব্যাঙ্ক পারে? শহরের উন্নয়নের স্বার্থ যাঁরা দেখেন, তাঁরা জরিমানার ব্যবস্থা চালু করুন। কেউ দোকানের সামনে বোর্ড টাঙিয়ে জায়গা নির্দিষ্ট করলে জরিমানা নেওয়া হোক। পার্টি অফিস, ব্যবসায়ী সমিতি কিংবা সরকারি সংস্থা, যেকানেই ওই ধরনের পার্কিং বোর্ড দেখা যাবে তাদের নোটিস দিয়ে জরিমানা নেওয়া হোক। একান্ত কোনও সরকারি, বেসরকারি সংস্থা যদি সরকারি রাস্তার ধারে নিজস্ব পার্কিংয়ের অনুমতি চায় তা হলে মোটা টাকা ফি হিসেবে আদায় করুক পুরসভা-পুলিশ-পূর্ত দফতর। এতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। সেই টাকায় শহরের মধ্যে ফাঁকা জায়গায় নতুন ‘পার্কিং প্লেস’ তৈরি হোক।
অখিল বিশ্বাস, আইনজীবী, শিলিগুড়ি
পার্কিং প্লাজা, পার্ক হোক
আমার শহরে পার্কিং-সমস্যা নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ। আমরা যাঁরা জলপাইগুড়ি থেকে শিলিগুড়িতে নিত্য যাতায়াত করে থাকি, তাঁরা তো কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না, একটা শহরের প্রাণকেন্দ্রে পার্কিং প্লাজার পরিকল্পনা ঘোষণা করেও কী ভাবে শপিং মল হচ্ছে? আমি হাসমি চকের প্রস্তাবিত শপিং মলের কথাই বলতে চাইছি। নানা সময়ে শুনেছি বড় মাপের নেতারা ওই শপিং মলের জায়গায় পার্কিং প্লাজা গড়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন। একটি বেসরকারি নির্মাতা সংস্থা শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে শপিং মলটি গড়ছে বলে শুনেছি। এখন এসজেডিএ, পুরসভা ওই প্রকল্পটি পুনর্বিবেচনা করলে আদালত, উচ্চ আদালতে মামলা হতে পারে। আবার নাও হতে পারে। কারণ, নির্মাতা সংস্থার কাছে নিশ্চয়ই শিলিগুড়ির নাগরিকদের স্বর্থই বড় কথা। যেখানে শহরের নাগরিক সমাজ ওই এলাকায় পার্কিং প্লাজা চাইছে সেখানে প্রকল্পটি পুনর্বিবেচনা করলে যে গোটা দেশে শিলিগুড়ি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবে সেটাও মাথায় রাখা উচিত। যদি কয়েক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ নির্মাতা সংস্থাকে দিতে হয় তাতেও বাধা হবে বলে মনে হয় না। কারণ, শিলিগুড়ির নাগরিক সমিতির তরফে প্রয়োজনে চাঁদা তুলে পুরসভা, এসজেডিএ কে সাহায্যের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে বলে জেনেছি। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমার প্রস্তাব, কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খেলার জায়গায়র সামনে অন্তত ৪-৫ শো গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করাতে ওই শপিং মলের কাজ বন্ধ করিয়ে পার্কিং প্লাজা গড়া হোক। পাশের ফাঁকা জায়গায় তৈরি হোক ছোট্ট খোলা পার্ক। যেখানে নিত্যযাত্রীরা প্রয়োজনে একটু জিরিয়ে নিতে পারবেন। মনে রাখতে হবে, বিশ্বের সব দেশেই ব্যবসায়িক স্বার্থের থেকে জনস্বার্থ অগ্রাধিকার পায়।
গৌতম গুহ রায়, জলপাইগুড়ি।