এসএফ রোড

ব্যাঙ্কের সামনে রাস্তা দখল করেই অবৈধ পার্কিং

দু’ধার তো বটেই, রাস্তার একাংশও দখল করে যথেচ্ছ পার্কিংয়ের জেরে শিলিগুড়ির স্টেশন ফিডার রোডের ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা রোজই জেরবার হচ্ছেন। এলাকায় দানা বাঁধছে ক্ষোভ। ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের অভিযোগ, এসএফ রোডের একাধিক ব্যাঙ্কের সামনে বেআইনি পার্কিং চলছে।

Advertisement

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৫ ০৩:০৯
Share:

এমনভাবে মোটরবাইক রাখায় পথ চলা দায়।

দু’ধার তো বটেই, রাস্তার একাংশও দখল করে যথেচ্ছ পার্কিংয়ের জেরে শিলিগুড়ির স্টেশন ফিডার রোডের ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা রোজই জেরবার হচ্ছেন। এলাকায় দানা বাঁধছে ক্ষোভ। ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের অভিযোগ, এসএফ রোডের একাধিক ব্যাঙ্কের সামনে বেআইনি পার্কিং চলছে। বিশেষত, এসএফ রোডের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের সামনে বেআইনি পার্কিংয়ের জেরে নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। যানজট তো বটেই, দুর্ঘটনাও ঘটছে বলে অভিযোগ। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ট্রাফিক বিভাগের এক কর্তা জানান, শীঘ্রই স্টেশন ফিডার রোডের বেআইনি পার্কিং হটাতে অভিযানে নামা হবে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, নিত্যযাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ি থানাতেও অভিযোগ করেছেন। এলাকার ব্যবাসীদের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, এসএফ রোডের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের গা ঘেঁষেই রয়েছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কও। ফলে, সমস্যা আরও জটিল হয়েছে বলে অভিযোগ। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গ্রাহকদের জন্য কোনও পার্কিংয়ের ব্যবস্থা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের তরফে করা হয়নি বলে অভিযোগ। তাই গ্রাহকেরা যে যেখানে খুশি বাইক, গাড়ি রেখে দেওয়ায় রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমনকী, স্টেশন ফিডার রোডেও বাইক, গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাখা হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়েছে, তারা ভাড়ায় সেখানে অফিস নিয়েছেন। কিন্তু, ব্যাঙ্কের ভবনের বাইরে কে কোথায় পার্কিং করছেন তা নিয়ে বাড়ির মালিক বলতে পারবেন বলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি। কিন্তু, যেখানে রোজ শয়ে-শয়ে গ্রাহকেরা যাতায়াত করবেন, সেখানে যানবাহন রাখার ব্যবস্থা করার দায়িত্বটা কী ব্যাঙ্কের উপরে বর্তায় না? জবাবে কর্তৃপক্ষ নীরব।

এসএফ রোড ব্যবসায়ী সমিতিও ব্যাঙ্কের সামনে বিধি মেনে পার্কিংয়ের ব্যাপারে সমস্যার কথা পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মাকে জানিয়েছেন। সমিতির সাধারণ সম্পাদক অসিত মৈত্র বলেন, ‘‘কদিন আগেই পুলিশ কমিশনারকে সব জানিয়েছি। দেখা যাক কী হয়।’’ সমিতির সদস্যদের একাংশের অভিযোগ, ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের যানবাহন রাখার ব্যবস্থা না করেই সমস্যা তৈরি করা হচ্ছে। ওই এলাকার কাউন্সিলর তথা বরো চেয়ারম্যান প্রদীপ গোয়েল জানান, বিষয়টি তাঁরও নজরে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। বেআইনি পার্কিং চলতে পারে না।’’ শিলিগুড়ি পুরসভার পার্কিং বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ দূর্গা সিংহ জানান, এসএফ রোডের ওই এলাকায় পুরসভার তরফে আপাতত কাউকে পার্কিং করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের সামনে বেআইনি পার্কিংয়ের অভিযোগ পেয়েছি। আমরা কড়া পদক্ষেপ করব।’’

Advertisement

এসএফ রোডের যে বাড়িতে বেসরকারি ব্যাঙ্ক ভাড়া রয়েছে তাঁর মালিক বেণু রায়ও বিরক্ত। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ির সামনে সকাল থেকে এমন পার্কিং করা হয় যে আমাদেরই সমস্যা হয়। কাউকে কিছু বললে দু-কথা শুনিয়ে দেয়। পুরসভা যা করার করুক।’’ কিন্তু, বেসরকারি ব্যাঙ্কের ম্যানেজার বি‌শ্বরূপ মৈত্র দাবি করেছেন, ব্যাঙ্কের সামনে কারা, কী ভাবে পার্কিং করছেন সে বিষয়টি তাঁদের দেখার কথা নয়। ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের দাবি, ‘‘ওই বিষয়ে বাড়ির মালিক যা বলার বলবেন।’’ যা শোনার পরে বেণুবাবু ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি কী সকাল থেকে ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে পাহারা দেব নাকি? এটা হতে পারে না। পুর আইন, ট্রাফিক বিধি মেনেই সব করতে হবে।’’ পুরসভার এক অফিসার জানান, কোনও বাণিজ্যিক সংস্থাকে ভাড়া দেওয়ার সময়ে সেখানে কেমন জনসমাহগম হতে পারে তা আঁচ করে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখাও বাধ্যতামূলক। এ ক্ষেত্রে ওই এলাকার ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে বাড়ির মালিকদের কী চুক্তি হয়েছে তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে পুরসভা সূত্রের দাবি।

প্রায় সকলেই মানছেন ওই এলাকায় বেআইনি পার্কিংয়ের জেরে অতিষ্ঠ জনজীবন। তা হলে ট্রাফিক পুলিশ, পুরসভা কিংবা মহকুমা প্রশাসনের তরফে কেউই বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কমাতে উদ্যোগী নন কেন তা নিয়েই রহস্য দানা বাঁধছে। পুরসভার কমিশনার সোনম ওয়াংদি বলেন, ‘‘ওই এলাকায় অভিযান হবে।’’ শিলিগুড়ি ট্রাফিক পুলিশের এক শীর্ষ কর্তাও একই আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু, বাস্তবে কাজের কাজ কবে হয় সেটাই দেখার বিষয় বলে মনে করে স্টেশন ফিডার রোড ব্যবসায়ী সমিতি।

সোমবার শিলিগুড়িতে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement