ভিতরে চলছে অভিযান, বাইরে প্রহরা। —নিজস্ব চিত্র
শিল্পোদ্যগী রূপচাঁদ প্রসাদের শিলিগুড়ির বাড়ি ও অফিসে আয়কর দফতরের হানার খবর নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সরগরম শিলিগুড়ি। শুক্রবার সকাল ৮টা নাগাদ আয়কর দফতরের অফিসারেরা খালপাড়ার নেহরু রোড এলাকার রূপচাঁদবাবুর বাড়িতে অভিযান শুরু হয়। গভীর রাত পর্যন্ত অভিযান চলছে। আয়কর দফতর এবং পুলিশ সূত্রের খবর, গুজরাতের বিখ্যাত দুধ, বাটার-সহ খাবারের জিনিস তৈরির সংস্থার গোটা উত্তর পূর্ব ভারতের ডিস্ট্রিবিউটরশিপই রূপচাঁদবাবুর মূল ব্যবসা। এ ছাড়াও তিনি সিমেন্ট কারখানা, বৈদেশিক বাণিজ্য, রিয়েল এস্টেট-সহ একাধিক সংস্থার ডিরেক্টর পদে আছেন। কলকাতাও একাধিক দফতরের শাখা রয়েছে। বিভিন্ন ব্যবসায়িক এবং শিল্পপতিদের সংগঠন ও ক্লাবের সঙ্গে তিনি জড়িত। তবে তাঁকে প্রকাশ্যে খুব একটা দেখা যায় না। তাঁর পরিবারের লোকজন, আত্মীয়রা সামনে থেকে কাজকর্ম দেখভাল করেন।
দু’দশক আগে তিনি বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ভাবে জড়িত ছিলেন। পুলিশ সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি পুরভোটের আগে ১৯৯৪ সালের ১৪ মে গভীর রাতে দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হয়েছিলেন শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী উদয় চক্রবর্তী। সে বার উদয়বাবুর বিরুদ্ধে সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন রূপচাঁদবাবু। ঘটনার জেরে পাঁচ বছর ওয়ার্ডে ভোটই হয়নি। পরে নতুন করে ভোট হলেও রূপচাঁদবাবুকে আর সেই সময় টিকিট দেয়নি সিপিএম। পরে খুনের ঘটনার অভিযুক্তদের কয়েক জন খুন হয়। একজন পুলিশের গুলিতে মারা যান। দলীয় সূত্রের খবর, ওই ঘটনার পর থেকে সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরেই থাকতেন রূপচাঁদ প্রসাদ। বামপন্থীরা ছাড়াও, ডানপন্থী নেতাদের সঙ্গেও তাঁর ভাল সম্পর্ক রয়েছে বলে অনেক নেতাই একান্তে জানিয়েছেন। নানা অনুষ্ঠান, উৎসবে রূপচাঁদবাবুর বিভিন্ন সংস্থাকে ‘স্পনসর’-এর ভূমিকাতেও দেখা যায়।
এই প্রসঙ্গে শহরের মেয়র তথা বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘উনি দুই দশক আগে একবার আমাদের প্রার্থী হয়েছিলেন মাত্র। পার্টি সদস্য নন। ওঁর বাড়িতে আয়কর হানার বিষয়ে জানা নেই।’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা বিধায়ক শঙ্কর মালাকার জানান, তাঁরা কালো টাকার বিরুদ্ধে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘সরকারি অফিসারেরা কাজ করছেন। তাঁরাই বলবেন, কী হয়েছে।’’ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই যে নিচু স্তর অবধি এসেছে তা এই ঘটনা প্রমাণ করে বলে জানিয়েছেন বিজেপি’র জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই জেলায় জেলায় এসে পড়েছে। দেখা যাক, কাদের কাদের নাম উঠে আসে।’’